নিজস্ব সংবাদদাতা, ঝাড়গ্রামঃ মন ভাল নেই ঝাড়গ্রামের খোয়াব গাঁ-এর। বঞ্চনার চিত্র স্পষ্ট রয়েছে গ্রামে। পর্যটনের ভরা মরশুমে জঙ্গলমহলের লোধা শবর অধ্যুষিত গ্রামটিতে এবার সেভাবে দেখা মিলছে না পর্যটকদের। তাই নানান রঙে, নানান ছবিতে সাজিয়ে তোলা গ্রামের মাটির বাড়ির দেওয়ালগুলো একরকম লোকচক্ষুর আড়ালেই রয়েছে। আসলে লোধা, শবর জনজাতিদের গ্রামে যাওয়ার বহুল পরিচিত রাস্তাটি এখন পুলিশ লাইনের জন্য একরকম বন্ধ রয়েছে। যার ফলে ঝাড়গ্রাম স্টেশন থেকে নেমে ঘুরপথে খোয়াব গাঁ -তে পৌঁছাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় পর্যটক সহ অত্যুৎসাহীদের। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে ঝাড়গ্রাম শহরের সচেতন নাগরিকরা।
ঝাড়গ্রাম ব্লকের রাধানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে এই গ্রামটি শুরুতে ‘লালবাজার’ নামেই পরিচিত ছিল। গ্রামে তখন থেকে সব মিলিয়ে ২০ টি লোধা শবর পরিবারের বসবাস ছিল। জঙ্গলমহলের অখ্যাত সেই গ্রাম ঘুরে দাঁড়ায় মাত্র বছর ছয়েক আগে। কলকাতার চলচিত্র অ্যাকাডেমির সৌজন্যে রূপবদলে পরিচিত পায় 'খোয়াব গাঁ' নামে। তবে বেসরকারি উদ্যোগে, এটি কিঞ্চিত পরিচিতি পেলেও তেমনভাবে মেলেনি কোনও সরকারি সহায়তা।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ রয়েছে যে, পানীয় জলের সমস্যা আছে তাদের গ্রামে। পানীয় জলের পাম্পটি বছর তিনেক ধরে বিকল হয়ে পরে রয়েছে। এমনকি গ্রামবাসীরা বঞ্চিত রয়েছে একাধিক সুযোগ-সুবিধা থেকে। এছাড়াও এই গ্রামে রয়েছে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের অভাব। তাছাড়াও, একটি মাত্র কুয়োর জলই তাদের সকল জনজাতিদের একমাত্র ভরসা। গত পঞ্চায়েতের ভোটে গ্রামবাসীরা তাদের ভোট বয়কট করা সত্ত্বেও একটুও টনক নড়েনি জেলা প্রশাসনের।
তবে এগুলো ছাড়াও কিছু বিষয়ে বদল এসেছে এই গ্রামে। বদল আনতে খোয়াব গাঁ তে গ্রামবাসীদের পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করানো হয় নিয়মিত। চারু ও কারু শিল্পের মাধ্যমে আদিবাসীদের স্বাবলম্বী করে তুলতে নানান প্রশিক্ষণ শিবিরেরও আয়োজন করে চলচিত্র অ্যাকাডেমি। তবে গ্রামটিতে যাওয়া-আসার উপযুক্ত রাস্তার অভাব ভাবিয়ে তুলছে ভুক্তভোগী বাসিন্দা সহ অতুৎসাহী পর্যটকরদের।
লোধা-শবর-ছেলে মেয়েদের রং-তুলির টানে দেওয়ালগুলির অপরূপ শিল্পকর্ম বছর- বছর বদলে যায়। তাঁদের ''শৈল্পিক'' ভাণ্ডারে জমতে থাকে কাটুম-কুটুম, কাঁথাস্টিচ সহ হাতে তৈরি নানান কারুকাজ। তবে পর্যটকদের অভাবে মার খাচ্ছে সে-সবের বিক্রিবাটা। জেলা সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী যখন নতুন নতুন পর্যটনকেন্দ্র গড়ার নির্দেশ দেন, তখন কোনও এক অজানা কারণে বছর বছর কিন্তু উপেক্ষিত থাকছে ঝাড়গ্রামের খোয়াব গাঁ।