হাতি ও মানুষের সংঘাত এড়ানোর পথ খুঁজতে জঙ্গলমহলে জেলাশাসক

কি সমাধান বেরোলো?

author-image
Anusmita Bhattacharya
New Update
WhatsApp Image 2025-02-11 at 7.31.23 PM (1)

নিজস্ব প্রতিনিধি, জঙ্গলমহল: নিত্যদিন বেড়ে চলেছে হাতির হানায় মৃত্যুর ঘটনা। বাড়ছে পাল্লা দিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। কিন্তু ক্ষতির ক্ষতিপূরণের পরিমাণ অনেকটাই কম। যা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে জঙ্গলমহলের বাসিন্দাদের মধ্যে। বনদপ্তরেও কর্মী সংখ্যা কম থাকায় রাতের অন্ধকারে অনেক সময় গ্রামে হাতি ঢুকলে বনদপ্তরকে ডাক দিলেও তাদের দেখা না মেলার অভিযোগ। সবমিলিয়ে জঙ্গলমহলের বাসিন্দাদের হাতি নিয়ে কি কি সমস্যা রয়েছে বা তার সমাধান কোন পথে তা খুঁজতেই মেদিনীপুর সদরের জঙ্গল ঘেরা চাঁদড়ায় হাতি উপদ্রব এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা শাসক খুরশিদ আলী কাদরী। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বন বিভাগের ডিএফও শিবানন্দ রাম, মণীশ যাদব, এডিএফও কানু চক্রবর্তী, অতিরিক্ত জেলাশাসক সুমন সৌরভ মোহান্তি, চাঁদড়া রেঞ্জের রেঞ্জার সৈকত বিশ্বাস, গুড়গুড়িপাল থানার ওসি সহ অন্যান্য বন আধিকারিকরা। হাতি উপদ্রব এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে তাদের মুখে শুনলেন হাতি সমস্যার কথা। সমাধানেরও আশ্বাস দিলেন তিনি। 

মঙ্গলবার বিকেলে চাঁদড়া রেঞ্জে জেলা প্রশাসন ও বনদপ্তরের উদ্যোগে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়। যেখানে আলোচ্য বিষয় ছিল, "বন্য হাতি ও মানুষের সহাবস্থান"। তাতে উঠে এসেছে জঙ্গলের বিভিন্ন রাস্তায় যাতায়াতের সুবিধার্থে আলোর ব্যবস্থা করা। যাদের শৌচাগার নেই তাদের শৌচাগারের ব্যবস্থা। তবে অনেকেই জানিয়েছেন, তাদের শৌচাগার আছে কিন্তু তা বাড়ির মধ্যে নয়। বাড়ি থেকে বেরিয়ে সেই শৌচাগারে যেতে হয়। আর সেই সময় গ্রামের ভেতরে বাড়ির দরজার কাছে খাবারের খোঁজে দাঁড়িয়ে থাকে দাঁতাল। তখনই ঘটছে দুর্ঘটনা। এমনই বেড়া এলাকার বাসিন্দা সুনীল মুর্মু জেলা শাসককে জানান, "তাদের এলাকার অধিকাংশ বাড়িতে বাথরুম থাকলেও তা বাড়ির মধ্যে নয়। যে কারণেই বাড়ি থেকে বাইরে বেরিয়ে যেতে হলে তখনই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।" তিনি আরো জানিয়েছেন, "এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের ৮ কিলোমিটার জঙ্গল পথ পেরিয়ে টিউশন, স্কুল যেতে হয়। সকালে যাওয়া এবং সন্ধ্যার মুখে ফেরার সময় অধিকাংশ দিনেই হাতির মুখে পড়তে হয়েছে। যার ফলে পড়াশোনাও কিভাবে সম্ভব তা নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে। হাতি যা ক্ষতি করছে এবং বনদপ্তর থেকে যা ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়, তাতে ফসলের বীজের দামও ওঠে না। যার ফলে সংসার চালাতে খুব সমস্যা হচ্ছে।" বনদপ্তরের অস্থায়ী কর্মী খোকন মাহাত বলেন, "হাতি এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় সরানোর সময় গ্রামবাসীরা বাধা সৃষ্টি করে। অনেক সময় বনকর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন।" তবে জেলাশাসক স্থানীয় পুলিশকে সহযোগিতা করার কথাও জানিয়েছেন। নয়গ্রাম যৌথ বন পরিচালন কমিটির সভাপতি গোলক মাইতি বলেন, "বনদপ্তরে কর্মী সংখ্যা একদম কম। বিট অফিসগুলিতে নেই কোন যানবাহন। ফলে রাতের অন্ধকারে গ্রামে হাতি ঢুকে খাবারের খোঁজে ঘরবাড়ি ভাঙচুর চালালে, বনদপ্তরকে জানালেও তারা আসতে পারেন না। পরের দিন সকালে যোগাযোগ করেন।  বনদপ্তরে উন্নত পরিকাঠামো নেই।" পরিকাঠামো উন্নতির কথাও জানিয়েছেন জেলা শাসক। তিনি বলেন, "যে সমস্ত পরিকাঠামো রয়েছে তার পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে। তার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। হাতি উপদ্রব এলাকার যে সমস্ত বাড়িতে শৌচাগার নেই, তাদের তালিকা তৈরি করে জমা দেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে ডিএফও-দের। সেই নামের তালিকা ধরে তাদের শৌচাগারের ব্যবস্থা করা হবে।" ইদানিং মোবাইলে রিলস বানানোর প্রবণতা বেড়েছে মানুষের মধ্যে। আর হাতির কাছে গিয়ে ভিডিও করাই মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। চলতি বছরে হাতির হানায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে মোবাইলে হাতির ভিডিওগ্রাফি করতে গিয়ে। এ বিষয়েও জঙ্গলের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মানুষজনকে সচেতন করার বার্তা দিয়েছেন জেলা শাসক। শুধু তাই নয় নিজেও জঙ্গলের বিভিন্ন এলাকায় প্রয়োজনে গিয়ে এই ধরনের বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছেন। জেলাশাসক বলেন, "কিভাবে হাতি এবং মানুষের সংঘাত এড়ানো যায়, তার একটা পথ খোঁজা হচ্ছে। মানুষজনকে সচেতন করা হচ্ছে হাতির ভিডিওগ্রাফি বা উত্ত্যক্ত যাতে না করা হয়। বেশ কিছু জায়গায় আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। ক্ষতিপূরণ নিয়ে কিছু জায়গায় সমস্যা ছিল, সেগুলো গ্রামবাসীদের মুখ থেকে শোনা হয়েছে। তবে হাতিকে জঙ্গলে আটকে রাখার জন্য বিভিন্ন গাছ লাগানো এবং ঘাসের চাষ করা হয়েছে। এরপরও আমাদের জঙ্গলের ভেতরে যেসব বাসিন্দারা রয়েছেন তাদের কাছে গিয়ে তাদের কথা শুনতে হবে। তাদের কি সমস্যা রয়েছে তাও জানতে হবে। তবে বাড়ির মধ্যে শৌচাগার হলে ২০ শতাংশ মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব হবে।