দিগ্বিজয় মাহালী, পশ্চিম মেদিনীপুর : বুধবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়গপুর শহরের বোগদা এলাকায় বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে চা চক্র করলেন বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ। জনসংযোগ করার পাশাপাশি সাম্প্রতিক ইস্যুতেও ফাটান বোমা। ডেঙ্গু পরিস্থিতি থেকে হাসপাতালগুলিতে দালারাজের অভিযোগ, রাজ্য রাজ্যপাল সংঘাত থেকে হকের ডিএ-চাকরির জন্য আন্দোলন, প্রতারণার ফাঁদ থেকে বিজেপির অন্দরে কোন্দল সহ একাধিক বিষয়ে সরব হলেন দিলীপ ঘোষ।
ডেঙ্গি আক্রান্ত তৃণমূল বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায়। গ্রামে গঞ্জে ডেঙ্গুর চোখরাঙানি।বাচ্চাদেরও ডেঙ্গি হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে শাসকদলকে বিঁধলেন দিলীপ ঘোষ। বলেন, ''আমি জানিনা তৃণমূলের ঘুম ভাঙবে কিনা। এখন তৃণমূলের বিধায়ক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। তিনি হয়তো দলের মধ্যে কিছু বলতে পারছেন না। বললে তার বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নেবে। সাধারণ মানুষের সুস্থভাবে বাঁচার অধিকার নেই। হসপিটালগুলোই এখন ডেঙ্গু ছড়ানোর জায়গা হয়ে গেছে। আমরা বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছি। জায়গায়, জায়গায় অভিযান চলছে। সরকার কেন এটাকে সিরিয়াসলি নিচ্ছে না! পরিষ্কার, পরিচ্ছন্নতার জন্য। ডেঙ্গু নিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে। সতর্ক থাকার ব্যবস্থা করা উচিত। স্প্রে করা, পরিষ্কার করা, কোথাও ব্লিচিং ছড়াতে হবে। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে কোথায় বেশি হচ্ছে, সে ব্যাপারে তাড়াতাড়ি মানুষের সাথে কথা বলে সচেতন করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। না হলে মানুষ বুঝতে পারছে না ভিতরে ভিতরে ছড়িয়ে যাচ্ছে।''
বাংলার সাথে সাথে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেঙ্গু প্রকোপের ঘটনায় বিজেপি নেতা বলেন, ''ডেঙ্গু নিয়ে ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে সারা রাজ্য। সবাই ভয়ের মধ্যে আছে। যাদবপুরের একাধিক ছাত্র আক্রান্ত হয়েছে ডেঙ্গুতে। মশারি খাটাতে বলা হয়েছে। ওরা বলছে অনলাইনে ক্লাস করবে। কি ধরনের ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আর সরকার কত অসহায় হয়ে গেছে। কোন ব্যবস্থা করছে না। ডেঙ্গুকে কেউ আটকাতে পারবেনা, চারিদিকে ছড়াবে। আমি জানিনা সরকার কতটা সতর্ক, শুধু স্টেটমেন্ট দিচ্ছে ওরা। কি করছে আমরা কিছু দেখতে পাচ্ছি না।''
৩৫টি ভুয়ো অ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেন, যুক্ত ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, নিয়োগ দুর্নীতিতে সিবিআই রিপোর্ট। এ নিয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন, ''দিনের পর দিন তথ্য আসছে। দুর্নীতি ব্যাপক হয়েছে বুঝতে পারছি আমরা। এই দোষীদেরকে সাজা দেওয়া এবং যারা এখনো যুক্ত তাদেরকে কোর্টে হাজির করা, জেলে পাঠানোর দরকার আছে। কোর্টে সারা জীবন কেস চলতে থাকলে তাতে কোন লাভ নেই।''
আজ পূর্ব নির্ধারিত পথেই হবে রাজ্য গ্রুপ ডি চাকরিপ্রার্থীদের মিছিল। ক্যামাকস্ট্রিট দিয়ে মিছিল যাওয়ার জন্য কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ নিয়েও গর্জে উঠলেন খড়গপুরের সাংসদ। বলেন, চাকরি দেবে না, ডিএ দেবে না, মানুষকে আন্দোলনও করতে দেবে না। ওমুক নেতা থাকেন, তার অফিসের সামনে মিছিল হবে না। আর ওনারা বলবেন বিজেপির নেতাদের বাড়িতে ধরনা দেবেন, বিজেপির অফিস ভাঙলেন। এটা কি ধরনের গণতন্ত্র। যারা অধিকার নিয়ে আন্দোলন করছেন তাদের নিশ্চয়ই আন্দোলন করার অধিকার আছে। আজকে কোর্টে যেতে হচ্ছে, এটা খুব লজ্জার ব্যাপার।''
বিজেপির গোষ্ঠীকন্দল মধ্যপ্রদেশে, এবার মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানকে এখনো প্রার্থী করা হয়নি, অথচ ৭ জন সাংসদকে প্রার্থী করা হয়েছে। এবিষয়ে বলেন, ''ইলেকশন ঘোষণা হোক, ক্যান্ডিডেট ঘোষণা হয়ে যাবে। উনিতো নেতা, সবাই দেখতে পাচ্ছেন উনি কত সক্রিয় ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। জনসম্পর্ক করছেন, সভা করছেন। ওনার নামে তো আমরা একবার জিতেছি। বাকি পার্টি ঠিক করবে সময়ে।''
রাজ্য ও রাজ্যপাল সংঘাত চরমে। এ বিষয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন, ''রাজ্যপালকে খুব হালকা ভাবে নিয়েছিল। রাজ্যপাল যে সবকিছু জানেন, বুঝোন। আর কিভাবে টাইট করতে হবে সেটাও জানেন। এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।''
গত কয়েকদিনে একাধিক হাসপাতাল থেকে বেশ কয়েকজনকে দালাল অভিযোগে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সাগরদত্ত হাসপাতালের অধ্যক্ষকে ফোন করে দালালরাজ নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন মদন মিত্র। এবার মদলের ভূমিকায় সন্তোষ প্রকাশ করলেন দিলীপ। তিনি বলেন, ''আগেই মদন মিত্র বলেছিলেন দালাল রাজ চলছে। উনি বলেছিলেন সাহস করে। কিন্তু সাধারণ মানুষকে দালালের হাতে পড়তে হয়। সিট পাওয়া যায় না, ডাক্তার দেখানো যায় না, অনেক ঝামেলা রয়েছে ওখানে। যেখানে সাধারন মানুষ ফ্রিতে পরিষেবা পায়, স্বাস্থ্য সাথী কার্ড নিতে চায় না সরকার টাকা দেয় না বলে। কিন্তু আউটডোরের সুবিধাও পাচ্ছে না। সেই জন্য তাদের দলের এমএলএ বারবার বলছেন। তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে। সাধারণ মানুষের কথা তো কেউ শোনেই না। সমস্ত জায়গায় এই ধরনের দালার রাজ, সিন্ডিকেট, কাটমানি হয়ে গেছে। সাধারণ মানুষকে সব জায়গায় গিয়ে ঠক্কর খেতে হয়।''