নিজস্ব সংবাদদাতা: ঘাটাল উৎসব ও শিশু মেলার কমিটির মিটিংকে ঘিরে ধুন্ধুমার কান্ড বাঁধল ঘাটাল শ্রী অরবিন্দ স্টেডিয়ামে। নিজেদের মধ্যেই হাতাহাতি থেকে ধস্তাধস্তিতে জড়াল শাসকদলের নেতাদের অনুগামীরা।
রবিবার সন্ধ্যা নাগাদ ঘাটাল শহরের অরবিন্দ স্টেডিয়ামে ঘাটাল উৎসব ও শিশু মেলা উপলক্ষে কমিটি গঠনের জন্য এক বৈঠকের আয়োজন হয়। বৈঠকের শুরুতে উপস্থিত ছিলেন ঘাটালের মহকুমা শাসক সুমন বিশ্বাস, ঘাটাল মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অগ্নীশ্বর চৌধুরী। জানা যায়, বৈঠকের শুরুর দিকে উপস্থিত থাকলেও পরে মহকুমা শাসক ও মহকুমা পুলিশ আধিকারিক চলে যান বৈঠক থেকে। আর তারপরই ঘটে শিশু মেলার প্রস্তাবিত কমিটির নাম ঘোষণাকে ঘিরে ধুন্ধুমার কান্ড ও ধস্তাধস্তি। যদিও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ঘাটাল পৌরসভার চেয়ারম্যান তুহিন কান্তি বেরা, তিনি বৈঠকের সভাপতি ছিলেন। এছাড়াও ছিলেন ঘাটাল ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি দিলীপ মাজি, ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সহ সভাপতি তথা ঘাটালের প্রাক্তন বিধায়ক শঙ্কর দোলই, ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি বিকাশ কর সহ একাধিক পদাধিকারী ও তাদের অনুগামীরা।
ঘটনার সূত্রপাত ঘাটাল উৎসব ও শিশু মেলার প্রস্তাবিত কমিটির নাম ঘোষণা থেকেই। জানা যায়, ঘাটাল উৎসব ও শিশু মেলার সভাপতি পদটি মহকুমা শাসক সামলান। মেলা কমিটির অন্য পদগুলিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শাসকদলের নেতাদের নামই ঠাঁই পায়। সূত্র মারফত জানা যায়, বিগত শিশু মেলায় ঘাটালের সাংসদ তথা অভিনেতা দীপক অধিকারীর নাম কমিটির পদাধিকারী হিসাবে রাখা হত এবং তার দায়িত্বভার সামলাতো ঘাটালের সাংসদ প্রতিনিধি রামপদ মান্না। যদিও আজকের বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন সাংসদ প্রতিনিধি রামপদ মান্না। এবারের ঘাটাল উৎসব ও শিশু মেলার প্রস্তাবিত কমিটি ঘোষণার সময় কমিটি থেকে নাম বাদ পড়ে সাংসদ দীপক অধিকারীর। আর তা থেকেই বৈঠক উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। জানা যায়, কমিটি থেকে আরও কয়েকজনের নাম বাদ যায় তারা স্বয়ং আজকের বৈঠকে উপস্থিত থেকে নাম বাদ যাওয়ার কারণ জানতে যায়।
সূত্র মারফত খবর, আজকের বৈঠকে সভাপতি ছিলেন ঘাটাল পৌরসভার চেয়ারম্যান তুহিন কান্তি বেরা। প্রস্তাবিত কমিটি থেকে সাংসদ দীপক অধিকারীর নাম কেন বাদ গেল তা বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন জানতে চাইলে সভাপতির জবাবের পরিবর্তে বৈঠকে উপস্থিত জেলা পরিষদ সদস্য তথা ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সহ সভাপতি শঙ্কর দোলই ব্যাখা দিতে গেলে বাদানুবাদ তৈরি হয় এবং যা পরে উভয়ের অনুগামীদের মধ্যে ধস্তাধস্তি থেকে হাতাহাতির পর্যায়ে চলে যায়। শাসকদলের তাবড়-তাবড় জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতেই চলে তাদের অনুগামীদের মধ্যে এই ধুন্ধুমার কান্ড। যদিও পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় ঘাটাল থানার পুলিশ। পরিস্থিতি সামাল দেয় তারাই।
এবিষয়ে ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সহ সভাপতি তথা ঘাটালের প্রাক্তন বিধায়ক শঙ্কর দোলই বলেন, "মেলা কমিটির মিটিংয়ে আলোচনা চলাকালীন কিছু ছেলে হটাৎ এসে উত্তেজনা তৈরি করে,উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে মিটিং ভেস্তে দেওয়া এবং মেলাকে কুলসিত করার জন্য কিছু ছেলে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।আমরা বুঝতে পেরে তাদের শান্ত করে মিটিং সম্পন্ন করেছি।তবে গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে এই ঘটনা তা এড়িয়ে যান শঙ্কর দোলই।"
অপরদিকে ঘাটাল ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি দিলীপ মাজি জানান, "নিজেদের মধ্যে একটা ভুল বোঝাবুঝির জন্য আজকের মিটিং বাতিল করা হয়েছে। ঘাটাল উৎসব ও শিশু মেলা হবে, এ মেলা ঘাটালবাসীর মেলা, এ মেলা হবে মেলা করতে আমরা বদ্ধপরিকর। আজকে অনিবার্য কারণে মিটিং বাতিল হয়ে গেছে, আগামী দিনে আলোচনার ভিত্তিতে একটি কমিটি গঠন করে সুন্দর করে মেলা হবে। গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে দিলীপ মাজি বলেন, কোনো গোষ্ঠী কোন্দল নেই, মানুষ অভিযোগ জানিয়েছে এই হলে ভালো হত বা এ থাকলে ভালো হত”। দেবকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে দিলীপ বাবু জানান, “এমন কিছু হয়নি, সবাইকে নিয়ে মেলা হবে কাউকে বাদ দিয়ে নই”।
যদিও মেলা কমিটির মিটিংয়ে গন্ডগোল ও হাতাহাতির ঘটনায় নাম না করে কটাক্ষ করেছেন সাংসদ প্রতিনিধি রামপদ মান্না। তিনি বলেন, "দেবকে বাদ দিয়ে খসড়া কমিটি তৈরি করতে গিয়েছিল ঘাটালের মানুষ প্রতিবাদ করেছে, চোরকে তারা প্রশ্রয় দেবেনা। দুবছর ভালো ভাবে মেলা হয়েছে, চোর আবার ঢোকার চেষ্টা করছে তার প্রতিবাদ জানিয়েছে। দেবের মতো একটা ভালো মানুষকে বাদ দিয়ে মেলাটা করতে চাইছে এইটুকুই বক্তব্য এর বাইরে আর কিছু না”।
এই ঘটনায় শাসকদলকে তীব্র কটাক্ষ করেছে বিজেপি। ঘাটাল বিধানসভার বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাট জানান, "চোর আর ডাকাতের লড়াই এই লড়াই ঘাটালের মানুষ চাইনা। এই মেলাটা শুধুমাত্র ঘাটালবাসী শুরু করেছিল। তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর তারা দেখলো এই মেলায় প্রচুর টাকা আত্মসাৎ করা যায়, তাই তারা নিজেদের মতো করে নিয়ম বানিয়েছিল যে যে বিধায়ক থাকবে সে হবে মেলা কমিটির সেক্রেটারি। কিন্তু আজ সেই নিয়মের কিছু মানা হয়নি। বর্তমানে বিজেপির বিধায়ক রয়েছে তাই তাকে কমিটির মধ্যে রাখলে চুরি করা যাবেনা। আর তৃণমূলের যিনি দু-দুবার বিধায়ক ছিলেন শঙ্কর বাবু, তিনি ক্ষমতা দখল করে এই মেলা থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এই ঘাটালের মানুষ ওনাকে প্রত্যাখান করেছে, তারপরও উনি ক্ষমতাকে আগলে রাখার চেষ্টা করছেন, এই শিশু মেলাকে নিজের এক্তিয়ারে রাখার চেষ্টা করছেন কারণ তিনি আবারও লুটেপুটে খাবে। যদি স্বচ্ছ ব্যক্তির হাতে এই মেলা না যায় বা স্বচ্ছ ব্যক্তি এই মেলা কমিটিতে না থাকে তাহলে ঘাটালের এই গৌরবময় মেলার সমস্ত টাকাই আত্মসাৎ হবে। ঘাটালে কে তৃণমূলের বড় নেতা সেটা তারা প্রমাণ করার চেষ্টা করছে, আমরা বলবো তৃণমূলে তৃণমূলে মারপিট গন্ডগোল হোক তা দেখার দরকার নেই, এই শিশু মেলাকে যারা রাজনীতির মেলায় পরিণত করার চেষ্টা করছে তাদের যোগ্য জবাব দিতে হবে ঘাটালবাসীকেই”।