মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারিতেই কাটছে জট, নাম প্রত্যাহার করল সমবায় ব্যাঙ্কের তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী

কাটল জট, মিটল চিন্তা।

author-image
Adrita
New Update
া

নিজস্ব সংবাদদাতা, পূর্ব মেদিনীপুর: দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর অবশেষে কাটল জট। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অত্যন্ত জনপ্রিয় কন্টাই কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের ডিরেক্টর নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ তরজার অবসান হল বৃহস্পতিবার। বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের পর বৃহস্পতিবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন একে একে প্রতিদ্বন্দ্বীতা থেকে সরে দাঁড়ালেন তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর সদস্যরা। এর আগে এই সমবায়ের পরিচালন সমিতির নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থীরাই একে অপরের বিরুদ্ধে মনোনয়ন জমা করে চূড়ান্ত বিতর্কের জন্ম দেয়। 

গত কয়েকদিন ধরে কন্টাই কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের ডিরেক্টর নির্বাচন ঘিরে তরজায় জড়িয়েছিল তৃণমূলের দুই যুযুধান শিবির। একদিকে প্রাক্তন মন্ত্রী তথা রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরি, আর অন্যদিকে বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক। দুই শিবিরের বিবাদ এতটাই চরমে ওঠে যে এই ঘটনায় হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। অবশেষে দলনেত্রীর নির্দেশ মাথা পেতে রনে ভঙ্গ দিলেন বিক্ষুব্ধরা। বৃহস্পতিবার এই বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর সদস্যরা দলের হুইপ মেনে তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন বলে খবর।

এদিন মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন  কাঁথি ১ নং আসন থেকে তৃণমূল প্যানেলে জয়ী সুকোমল মাইতি, হেড়িয়া থেকে জয়ী জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মানব কুমার পড়ুয়া প্রমুখরা। এরা সকলেই দলের নির্দেশ উপেক্ষা করে ডিরেক্টর হিসেবে মনোনয়ন জমা করেছিলেন বলে অভিযোগ। তবে ডিরেক্টর নির্বাচন থেকে নাম প্রত্যাহারের পর সুকোমলের দাবী, “ আমি কোনও গোষ্ঠীর সঙ্গে ছিলাম না। তবে দলনেত্রী নাম প্রত্যাহার করতে বলায় আমি আজ নিজের উদ্যোগেই ডিরেক্টর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালাম। ”

জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তর বারিকের ঘনিষ্ঠ তৃণমূলের দাপুটে নেতা মানব পড়ুয়াও এদিন মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। তিনি জানান, “ আমি সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমেই জানতে পারি দলনেত্রীকে এই সমবায়ের বোর্ড গঠনের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। এই ঘটনায় আমি অত্যন্ত মর্মাহত। তাই দলের নির্দেশকে মান্যতা দিয়ে আমি ডিরেক্টর নির্বাচন থেকে আমার নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছি। ” তবে এরই পাশাপাশি এই বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে দলের অভ্যন্তরে যে কোন্দল তৈরি হয়েছিল তা জেলা নেতৃত্বদের ব্যর্থতা” বলেই দাবী করেছেন মানব।

প্রসঙ্গতঃ গত ১৫ই ডিসেম্বর কাঁথি সমবায়ের ডেলিগেট নির্বাচন হয়। বিজেপির দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে নজির বিহীন ভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে এই সমবায়ের নির্বাচন সংঘটিত হয়। তবে এখানকার ১০১টি আসনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জয়লাভ করে তৃণমূল। বাকী ৭টি আসনে জয়লাভ করে বিজেপি ও নির্দল প্রার্থীরা। এবার সমবায় পরিচালনার জন্য ১৫ জন ডিরেক্টরের নির্বাচন রয়েছে আগামী ৩১ জানুয়ারী। এই ডিরেক্টররাই সমবায়ের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান বেছে নেবেন। কিন্তু কার হাতে ক্ষমতার রাশ থাকবে তা নিয়েই টানাপোড়েন শুরু হয় তৃণমূলের অন্দরে। দলের হুইপ অমান্য করে ক্ষমতার লড়াইয়ে নামেন অখিল গিরি বনাম উত্তম বারিক গোষ্ঠী।

১৫টি ডিরেক্টর পদের মধ্যে তিনটি সংরক্ষিত ও ১২টি অসংরক্ষিত। একমাত্র পটাশপুর অসংরক্ষিত আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের পথে মৃণালকান্তি দাস। বাকি ১১টি আসনে মুখোমুখি লড়াই। বেলদা থেকে রামনগর, এগরা থেকে হেঁড়িয়া, নন্দকুমার এবং কাঁথিতে উত্তম বারিক বনাম অখিল গিরি গোষ্ঠীর জোর টক্কর চলে। মঙ্গলবার ১৫টি আসনে মোট ২৬টি মনোনয়ন জমা পড়ে। এই নিয়ে গত দুদিন উত্তম ও অখিল গোষ্ঠীর বিবাদ প্রকাশ্যে চলে আসে। ঘটনায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী অবশেষে সমবায়ের বোর্ড গঠনের বিবাদ দ্রুত মিটিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন। তারপরেই সমস্যার সমাধান হয়।