নিজস্ব প্রতিনিধি: স্বাধীনতার পর প্রথম গ্রামের বেহাল রাস্তার হাল ফিরতে চলেছে, খুশি এলাকাবাসী। কংগ্রেসের আমলে মাটি, বাম জমানায় মোরাম পড়েছিল। চন্দ্রকোনার ঘোষকিরা গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ মাটি মোরামের রাস্তাটি দীর্ঘদিন বেহাল অবস্থায় ছিল, বৃষ্টি হলে বা বর্ষায় যাতায়াত কার্যত বন্ধ হয়ে যেতো। ভোট বয়কট থেকে বিভিন্ন আন্দোলনের পথে হেঁটেছে গ্রামবাসীরা। দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে ঢালাই হবে গ্রামের বেহাল রাস্তা, কাজ শুরু হওয়ায় খুশি এলাকাবাসী। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা ২ নম্বর ব্লকের ভগবন্তপুর ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত ঘোষকিরা গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল অবস্থায় পড়েছিল। এই রাস্তার উপর দিয়ে ঘোষকিরা সহ খুড়শী, কোল্লা, ধরমপোতা, চৈতন্যপুর, ভগবন্তপুর সহ ৮-১০ টি গ্রামের বাসিন্দাদের নিত্য যাতায়াত রয়েছে, সাথে এই রাস্তার উপর দিয়ে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত দপ্তর, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল থেকে বাজারহাট সংযোগ রয়েছে।
মূলত ঘোষকিরা থেকে খুড়শীর সংযোগ এই গ্রামীণ রাস্তাটি প্রায় ৩ কিমি, মাটি মোরামের রাস্তা হওয়ায় সামান্য বৃষ্টি হলে এক হাঁটু কাদা হয়ে যায় রাস্তা জুড়ে, বিশেষত বর্ষার সময় এই রাস্তায় যাতায়াত কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। কৃষি প্রধান এলাকা, চাষাবাদের জন্য বড় গাড়ি গ্রামে ঢুকতে না পারায় গরুর গাড়ি ব্যবহার করতে হয়। এমনকি জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজনেও গ্রামে গাড়ি প্রবেশ করাতে পারা যায় না, তখনও গরুর গাড়ির সাহায্য নিয়ে গ্রাম থেকে অন্যত্র গিয়ে সেখান থেকে গাড়ি করতে হয়।এককথায় ঘোষকিরা গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ এই গ্রামীণ বেহাল রাস্তায় যাতায়াতে চরম ভোগান্তি ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। গ্রামবাসীদের দাবি, স্বাধীনতার পর থেকেই গ্রামের এই রাস্তা এভাবেই বেহাল অবস্থায় রয়েছে।
দীর্ঘ কংগ্রেস জমানায় মাটি ফেলে রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল আর বাম জমানায় ৩৪ বছরে একবার মোরাম ফেলে মেরামতের কাজ হয়েছিল ওটুকুই। তারপর থেকে রাস্তার হাল যেমন ছিল আজও তেমনই রয়েছে বরং আরও বেহাল বড়বড় খানাখন্দে ভরে গিয়েছে।স্বাধীনতার পর থেকে এই রাস্তা নতুন করে তৈরির কেউ উদ্যোগ নেয়নি। এই রাস্তার হাল ফেরাতে ঘোষকিরা সহ আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা একজোট হয়ে একাধিক আন্দোলনও করেছে। গত ২০২৪ লোকসভা ভোট তারও আগে পঞ্চায়েত ভোটের মুখে ঘোষকিরা গ্রামের বাসিন্দারা ভোট বয়কটের ডাক দিয়ে গ্রাম জুড়ে পোস্টার সাঁটিয়েছিল। সেসময় ব্লকের বিডিও থেকে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও তৎকালীন শাসকদলের ব্লক সভাপতি সহ জনপ্রতিনিধিরা এলাকায় গিয়ে গ্রামবাসীদের আশ্বস্ত করে এসেছিলেন রাস্তার হাল ফেরাবে বলে।
সেসময় স্থানীয় প্রশাসন ও শাসকদলের জনপ্রতিনিধিদের আশ্বাসে ভোটদানে অংশগ্রহণ করেছিলেন ঘোষকিরা গ্রামের বাসিন্দারা। তাদের দাবি, রাস্তার হাল ফেরাতে দিদিকে বলোতেও তারা ফোন করে আবেদন জানিয়েছিলেন।অবশেষে দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান হতে চলেছে, স্থানীয় প্রশাসন, পঞ্চায়েত সমিতি ও শাসকদলের জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া গ্রামবাসীকে প্রতিশ্রুতি পূরণ হতে চলেছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, জেলা পরিষদ থেকে রাস্তা তৈরির অনুমোদন মিলেছে এবং জেলা পরিষদের বরাদ্দ লক্ষাধিক টাকা ব্যায়ে ঘোষকিরা থেকে খুড়শী পর্যন্ত বেহাল রাস্তাটি কংক্রিট ঢালাই হবে, তার জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে ইতিমধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ের কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। স্বাধীনতার পর প্রথম গ্রামের বেহাল রাস্তাটি নতুন করে তৈরির সরকারি অনুমোদন ও কাজ শুরু হওয়ায় খুশি গ্রামের বাসিন্দারা। বহু বছরের যাতায়াতের নরকযন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে চলেছে ঘোষকিরা গ্রামের বাসিন্দারা।