নিজস্ব সংবাদদাতা, পশ্চিম মেদিনীপুরঃ আজ ' World Drowning Prevention Day '। বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ২ লাখ ৩৫ হাজার মানুষ জলে ডুবে মারা যায়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী সুন্দরবন অঞ্চলে প্রতিদিন গড়ে তিনজন শিশুর জলে ডুবে মৃত্যু হয়। সমীক্ষা অনুযায়ী জানা যাচ্ছে যে, সুন্দরবন অঞ্চলে জলে ডুবে শিশুদের মৃত্যুর হার বন্ধ হলে, ২০৩০ সালের অনেক আগেই ' পশ্চিমবঙ্গ সাস্টেনেবল ডেভেলাপমেন্ট গোল ' এর লক্ষমাত্রা অর্জন করতে পারবে।
সুন্দরবন সংলগ্ন নদী তীরবর্তী অঞ্চলে প্রতিনিয়ত জলে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার বন্ধ করতে ' সিনি' CINI র ( Child in need Institute ) প্রায় ৫০ বছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগী অস্ট্রেলিয়ার ' দ্য জর্জ ইনস্টিটিউট ' এর সহায়তায় সুন্দরবন লাগোয়া উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণায় জলে ডোবা দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করতে শুরু করেছে।
এই অনুসন্ধান করতে করতে সমীক্ষায় উঠে এসেছে এক ভয়ঙ্কর তথ্য। তাতে জানা গিয়েছে যে, সারা পৃথিবীতে যত-রকমের দুর্ঘটনায় বাচ্চাদের প্রাণহানি ঘটে, তারমধ্যে জলে ডুবে শিশুমৃত্যুর ঘটনা অন্যতম। সুন্দরবন অঞ্চলে নদী-নালা-খাল-বিল, বা পুকুর-ডোবার মত অগুন্তি জলাশয় জালের মতো ঘিরে রেখেছে বিস্তীর্ণ লোকালয়কে। দেখা গিয়েছে যে, জলে ডুবে মৃত্যুর কারণে সুন্দরবনের এই অঞ্চলে গড়ে প্রতিদিন প্রায় তিনজন করে শিশুর পরিচয় পৃথিবী থেকে মুছে যাচ্ছে চিরতরে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুযায়ী জানা যায়, করোনা অতিমারির আবহে বহুদিন ধরে শিশুদের শৈশব জেলখানার মতো বাড়ির চৌহদ্দির নির্দিষ্ট সীমারেখাতেই আবদ্ধ ছিল। কিন্তু এর মধ্যেই ঘাপটি মেরে লুকিয়ে আছে আরো বড় এক ভয়ঙ্কর মহামারি। মুহূর্তের অসতর্কতায় জলে ডুবে আকস্মিক দুর্ঘটনার কবলে, নিঃশব্দ মৃত্যু প্রতিমুহূর্তে কেড়ে নিচ্ছে অসংখ্য কচি প্রাণ। ভবিষ্যতের অমূল্য প্রাণ তলিয়ে যাচ্ছে অতল জলের গভীরে। এর জন্য দায়ী অসচেতনতা এবং সঠিক কার্য্যকারিতা প্রয়োগে বাস্তবায়ন ও সদিচ্ছার অভাব।
জলে ডুবে শিশু-মৃত্যু প্রতিহত করার জন্য নানারকম পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। এই চিন্তা-ভাবনার প্রতিফলনে গড়ে তোলা হয়েছে ' চাইল্ড পার্লামেন্ট '। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে যে, বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ শিশু মৃত্যু বন্ধ ও স্বাস্থ্যের অন্যান্য মাপকাঠির নিরিখে ভারতবর্ষের প্রথম পাঁচ রাজ্যের মধ্যে রয়েছে। সাম্প্রতিক জননী ও শিশু সুরক্ষা বা শিশু সাথী প্রকল্পের মত সরকারী উদ্যোগ শিশু মৃত্যুরোধে বিশেষ অবদান রেখেছে।
বর্তমানে ৫ বছরের নিচে শিশুদের মৃত্যু হার পশ্চিমবঙ্গে ২৫.৪ শতাংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বে প্রতি বছর ২ লাখ ৩৫ হাজার মানুষ জলে ডুবে মারা যায়। এদের মধ্যে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর সংখ্যা কপালে ভাঁজ ফেলার মতো বিশেষ উল্লেখযোগ্য ও চিন্তার বিষয়। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ' জলে ডুবে শিশু মৃত্যু ' -- একটি ভয়াবহ আন্তর্জাতিক সমস্যা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। জাতিসংঘের ১৯৩ টি সদস্য রাষ্ট্র এই সমস্যাটিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। চলতি বছরের ২৫শে জুলাই দিনটিকে প্রথম ' আন্তর্জাতিক জলে ডুবে মৃত্যু বিরোধী দিবস ' হিসেবে ঘোষণা করেছে সাধারণ পরিষদ।