নিজস্ব প্রতিনিধি, মেদিনীপুর: কি কারনে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে প্রসূতি মৃত্যু হয়েছে, তার প্রকৃত কারণ প্রকাশ্যে জানাক মুখ্যমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য দপ্তর। এমনই মন্তব্য করলেন আর জি কর আন্দোলনের অন্যতম মুখ অনিকেত মাহাত। তিনি বলেন, "সরকার নিজেদের দায় ঢাকতে চিকিৎসকদের ঘাড়ে দোষ চাপাতে চাইছে।"
শনিবার বিকেলে মেদিনীপুর শহরের কলেজ স্কোয়ারে "সিটিজেনস ফর জাস্টিস, মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টার সহ ৪৩ টি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে অভয়ার ন্যায় বিচারের দাবিতে নাগরিক সভা হয়। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জুনিয়র ডাক্তার আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের নেতা ডাঃ অনিকেত মাহাত। উপস্থিত ছিলেন, মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টারের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ডাঃ ভবানী শংকর দাস, ডাঃ দীপক গিরি, সিস্টার কাকলি পাল, অধ্যাপক সুরেশ চন্দ্র দাস প্রমুখ। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যেও শুরু হয় সভা। অভয়ার প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন অনিকেত সহ বিশিষ্টজনেরা। অভয়ার ন্যায় বিচারের আন্দোলনকে কালিমালিপ্ত করার জন্য আর জি কর সহ বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের আন্দোলনকারী ডাক্তারদের ওপর শাসক আক্রমণ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন বক্তারা। অনিকেত বলেন, "এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজগুলিতে কি ধরনের ঘটনা ঘটে তা সামনে এসেছে। থ্রেট কালচার থেকে দুর্নীতি সমস্ত বিষয় আজ সামনে উঠে এসেছে। তাই সরকার ভয় পেয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে।" আর জি কর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "একজন সিভিক ভলান্টিয়ার হাসপাতালের অভ্যন্তরে এসে, চেস্ট ডিপার্টমেন্টের তৃতীয় তল থেকে সেমিনার রুমে যাওয়ার পর রেপ এবং মার্ডারের মতো ঘটনা ঘটাল, আর দিনের আলোর মত কেউ কিছু জানতেই পারল না। এই ঘটনা বাস্তব চিত্র নয়। একজন সিভিক ভলান্টিয়ারের কি উদ্দেশ্য থাকতে পারে যে, একজন কর্তব্যরত চিকিৎসকের উপর রেপ এবং মার্ডারের মতো অমানবিক ঘটনা ঘটাতে পারে? এই উদ্দেশ্য আমরা জানতে চেয়েছি। আমরা জানতে চেয়েছি, এই ঘটনার সাথে সঞ্জয় ছাড়া আর কারা যুক্ত? দেশের সর্বোচ্চ তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই ও বিচার ব্যবস্থাও সর্বদা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছে না। তাই, আগামী দিনে অভয়ার ন্যায় বিচারের দাবিতে আমরা জুনিয়র ডাক্তারদের পক্ষ থেকে লড়াই চালিয়ে যাবো।"
মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে প্রসূতি মৃত্যু নিয়েও মন্তব্য করলেন অনিকেত। তিনি বলেন, "মেদিনীপুর হাসপাতালে কেন প্রসূতির মৃত্যু হল? সেই কারণ সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ্যে আনুক মুখ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য দপ্তর। প্রসূতির ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে সেফটিক শক এবং মাল্টি অর্গান ফেল হয়েছে। কিভাবে এই ঘটনা ঘটা সম্ভব?" তিনি উল্লেখ করেন, "এর আগেও উত্তরবঙ্গ এবং কলকাতার একাধিক হাসপাতালে প্রসূতি মৃত্যু নিয়ে স্বাস্থ্য দপ্তরকে রিপোর্ট জমা দিয়েছে। প্রসূতি মৃত্যুর প্রকৃত কারণ না জানিয়ে চিকিৎসকদের উপর দায় ঠেলে দিচ্ছে। ১৩ জন চিকিৎসক ও পড়ুয়াদের সাসপেন্ড করেছে। আমরা সরকার এবং স্বাস্থ্য দপ্তরকে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ করছি, আপনারা বলুন প্রসূতি মৃত্যুর প্রকৃত কারণ কি? কে বা কারা এই ঘটনার জন্য দায়ী? আসলে চিকিৎসকদের উপর সাধারণ মানুষকে লেলিয়ে দিয়ে স্যালাইন থেকে শুরু করে যে অনুন্নত পরিকাঠামো হাসপাতালগুলিতে আছে তা ঢাকা দিতে চাইছে। তাই নিজেদের দায় ঢাকতে চিকিৎসকদের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে। কত মানুষের মৃত্যু মিছিলের পর মনে হবে যে এখন প্রকৃত মৃত্যুর কারণ জানানো উচিত? স্বাস্থ্য দপ্তর স্যালাইন কাণ্ডে জাল ওষুধ কোম্পানি ও সরকারি কর্তাদের বাঁচাতে নিরপরাধ জুনিয়র ডাক্তারদের শাস্তি দিলেন। অভয়ার মৃত্যুকে তারা যেমন আত্মহত্যা বলে চালাতে পারেনি, ঠিক তেমনি জাল স্যালাইন ও প্রসূতি মৃত্যুর সত্যকে চাপা দিতে পারবে না।" ন্যায় বিচারের এই লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন অনিকেত।