নিজস্ব সংবাদদাতা: সে সময় নবাবদের রাজত্ব চলছিল মুর্শিদাবাদে। নবাব আলীবর্দী খাঁ থেকে সিরাজউদ্দৌলা মুর্শিদাবাদের একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করেছিলেন তারাই। কিন্তু তার মাঝেই কাশিমবাজার রাজবাড়ি ছিল নিজ গুনে পরিপূর্ণ। ৩০০ বছর আগে নবাবদের আমলে শুরু হয়েছিল রাজ পরিবারের পুজো। রাজবাড়ির পূজোর ঐতিহ্য আজও এতোটুকুও কমেনি। রাজ পরিবারের সদস্যরা পুরনো রীতি মেনেই করেন এই পুজো।
রাজবাড়ীর এই পুজো দেখার জন্য পূজোর পাঁচটা দিন বহু মানুষের ভিড় উপচে পড়ে। রায় পরিবারের আদি বাড়ি ছিল বর্ধমান জেলার পাত্রসায়ের গ্রামে। ব্যবসার কারণে বাংলাদেশের পিরোজপুরে চলে যান তারা। অবিভক্ত ভারতে দেশের অন্যতম সর্ববৃহৎ সিল্কের কাপড় রপ্তানিকারক ছিলেন তারাই। একসময় বাংলায় আক্রমণ করেন বরগিরা। সেই সময় নবাবের শরণাপন্ন হন এই বাড়ির সদস্যরা। সে সময় অবিভক্ত ভারতের খুব কাছাকাছি ছিল বাংলাদেশের পিরোজপুর। কাশিম বাজারে ছিল এক বন্দর। সেই বন্দরের ধারেই নিজেদের পারিবারিক ব্যবসা শুরু করে রায় পরিবার। সেই থেকে পরিবারের সদস্য অযোধ্যা রামরায় নিজের বাড়িতেই মাতৃ আরাধনা শুরু করেছিলেন।
পরিবারের পরবর্তী সদস্য দীনবন্ধু রায়ের আমলে তাদের শ্রীবৃদ্ধি আরো বৃদ্ধি পায়। কাশিমবাজারের রাজবাড়ির পুজো রানী সুপ্রিয়া রায় এবং রাজা প্রশান্ত রায়ের প্রচেষ্ঠায় আজও টিকে রয়েছে। পুরোহিতের কথায় প্রতিপদ থেকে চন্ডীমণ্ডপের সাতজন পুরোহিত চন্ডী পাঠ করেন। বিল্লো বৃক্ষে মায়ের পূজো হয় পঞ্চমী পর্যন্ত। এরপর আমন্ত্রণ এবং অধিবাস শেষে হয় দেবীর বোধন। অষ্টমী নবমীতে থাকে কুমারী পূজার আয়োজন।
রাজ পরিবারে দুর্গা পুজোতে আগে পাঠা বলিদানের প্রচলন থাকলেও এখন উঠে গিয়েছে সেই পদ্ধতি। আগে নীলকন্ঠ পাখি উড়ানোর চলছিল তবে এখন সেই প্রথাও বিলুপ্ত হয়েছে। ঐতিহ্য আর ইতিহাসকে সাক্ষী রেখে আজও অমলিন রয়ে গিয়েছে কাশিমবাজার রাজবাড়ির দুর্গাপুজো।