নিজস্ব সংবাদদাতা, কাঁকসা: প্রায় ৩০০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্য নিয়ে আজও অটুট রয়েছে কাঁকসার আড়া বাবুপাড়া রায় বাড়ির দুর্গাপুজো। হরচন্দ্র রায়ের দ্বারা সূচিত এই পুজো বংশ পরম্পরায় চলে আসছে এবং আজও পরিবারের সদস্যরা সারা পৃথিবী থেকে এসে এই বাড়িতে একত্রিত হয়ে পুজোর মহোৎসবে অংশগ্রহণ করেন। বাংলার দুর্গাপুজোর অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এই পুজো এখনো বেশ কিছু বিশেষত্ব ধরে রেখেছে।
রায় বাড়ির পুজোর অন্যতম আকর্ষণ হল তিনটি খুঁটি পুজো এবং বলি পরম্পরা। বিশেষত, জগন্নাথ দেবের রথযাত্রার দিনে মা দুর্গার কাঠামোর জন্য প্রথম মাটি তোলা হয়। এর পর ধীরে ধীরে প্রতিমা গড়ার কাজ শুরু হয়, যা দীর্ঘকাল ধরে বংশ পরম্পরায় চলে আসছে। প্রতিমা গড়ার শিল্পীরাও এই ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। একই সাথে বীরভূম জেলা থেকে আসা ঢাকিরা বাজিয়ে দেন পুজোর ঢাক।
পরিবারের বর্তমান সদস্য ভাস্কর রায় বলেন, '' আমাদের এই মন্দির সাড়ে চারশো বছরের বেশি পুরনো। মন্দির স্থাপন করেছিলেন হরচন্দ্র রায়। ওনার বংশধর হিসাবে তাঁর দেখানো পথেই পুজো করে আসছি আমরা। পুজোর সময় পরিবারের যে যেখানেই কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন, সবাই ফিরে আসেন বাড়িতে। গড় জঙ্গলের পুজোয় বলির পরে কাঁসর ঘন্টার আওয়াজ শুনে আমাদের এখানে বলিদান হয়। অষ্টমীতে শ্বেত পাঁঠা বলি দিতে হয়। ''
প্রাচীন বলি প্রথার ধারাবাহিকতায়, অষ্টমীতে শ্বেত পাঠা বলি দেওয়া হয়। একটি বিশেষ প্রথা অনুযায়ী, প্রথমে গড় জঙ্গলের শ্যামরূপা দেবীর মন্দিরে পুজো হয়, এবং কাসর ঘণ্টার শব্দ শোনার পর রায় বাড়িতে বলির পর্ব সম্পন্ন হয়। এরপর মা দুর্গাকে ভোগ নিবেদন করা হয়। চারদিন ধরে রায় বাড়ির পুজোতে শুধু পরিবারের সদস্যরাই নয়, গোটা গ্রামবাসীও আনন্দে মেতে ওঠেন। ঐতিহ্যের সাথে আধুনিকতার মেলবন্ধনে আজও কাঁকসার আড়া বাবুপাড়ার রায় বাড়ির দুর্গাপুজো বাঙালির প্রাণের উৎসবের অন্যতম প্রতীক হয়ে রয়েছে।