নিজস্ব সংবাদদাতা, পশ্চিম মেদিনীপুরঃ নতুন রুট তৈরি করে দিয়ে গিয়েছিল হাতির দল। সেই পথে দলছুট হল দাঁতাল। বর্ষ শেষের সকালে সেই দলছুট হাতির হানায় মৃত্যু হল এক ব্যক্তির। আহত হয়েছেন আরো এক মহিলা। ঘটনাটি মঙ্গলবার সকাল ছ'টা নাগাদ পশ্চিম মেদিনীপুরের আনন্দপুর থানার শোলিডিহা গ্রামে। আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। হাতিটিকে অন্যত্র সরাতে ব্যবস্থা নিল বনদপ্তর।
বনদপ্তর জানিয়েছে, মৃত ব্যক্তির নাম নিমাই ভুঁইয়া এবং আহত মহিলার নাম মায়া পড়িয়া। দুজনেরই বাড়ি কেশপুর ব্লকের শোলিডিহা গ্রামে। জানা গিয়েছে, সোমবার রাতে গোদাপিয়াশাল এলাকায় প্রবেশ করে ওই দল ছুট হাতিটি। সেখান থেকে তাড়া খেয়ে আনন্দপুর থানার শোলডিহা গ্রামে পৌঁছে যায় সকালে। সকাল বেলা গ্রামের মানুষজন বাড়ি থেকে বাইরে বিভিন্ন কাজে বের হয়েছিলেন। কেউ কৃষি জমিতে যাচ্ছিলেন, কেউ আবার বাড়ির সামনে অন্যান্য কাজ করছিলেন। সেই সময় হঠাৎ দলছুট দাঁতালের প্রবেশে ঘটলো বিপত্তি। বনদপ্তর থেকে জানা গিয়েছে, হাতিটি এর আগেও ওই পথ ধরে গিয়েছিল। ঘুরে ফিরে আবার এদিন ওই পথেই যাচ্ছিল বাঁকুড়ার উদ্দেশ্যে।
সম্প্রতি ওই একই পথ ধরে দল হাতি বাঁকুড়া চলে গিয়েছে। ফলে সেই দলে মিশতে চেয়ে বারবার একই পথ অনুসরণ করছে বলে মনে করছেন বনকর্তারা। সোমবার রাতে প্রথমে গোদাপিয়াশালের চন্দনকাঠ এলাকায় প্রবেশ করে। সেখান থেকে রামাকাটা, ঠাককাটা, আমলাবনি, দাঁড়া, দুর্বাকলা হয়ে আড়াবাড়ি রেঞ্জের শোলিডিহা, জোড়াকেঁউদি এলাকায় পৌঁছে যায়। রাত থেকে ভোর পর্যন্ত জমির ফসলে পেট ভরিয়ে সকালবেলায় জঙ্গলের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় গ্রামের ভেতরের পথ ধরে। সেই সময় গ্রামের রাস্তার পাশে বাড়ির উঠোনে অনেকেই ছিলেন। হঠাৎ হাতির আগমন তারা টের পায়নি। হাতি দেখে অনেকে পালাতে সক্ষম হলেও নিমাই বাবুকে শুঁড়ে ধরে আছাড় মারে। পাশের বাড়িতে মায়া দেবীকেও শুঁড়ে ধরে ছুড়ে দেয়। তবে ভাগ্যক্রমে তার প্রাণহানি না হলেও একটি পা ভেঙে গিয়েছে। খবর যায় বনদপ্তরে। আনন্দপুর থানার পুলিশ ও আড়াবাড়ি রেঞ্জের বন কর্মীরা গিয়ে দ্রুত দুজনকেই উদ্ধার করে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠায়। নিমাইবাবুকে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
অন্যদিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মায়া পড়িয়া। এই ঘটনায় আড়াবাড়ি রেঞ্জের আধিকারিক বাবলু মান্ডি বলেন, " একটি দলছুট হাতির হানায় দুর্ঘটনা ঘটেছে। হাতিটির উপর নজরদারি রাখা হচ্ছে এবং অন্যত্র সরানোর সমস্ত রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। " তবে বর্ষবরণের আগে ডিসেম্বর মাসে এর আগেও মেদিনীপুর বন বিভাগে হাতির হানায় মৃত্যুর একাধিক ঘটনা রয়েছে। সেই দিক থেকে বন কর্মীদের সতর্ক থাকারও বার্তা দেওয়া হয়েছিল মেদিনীপুর বন বিভাগ থেকে। গোদাপিয়াশাল রেঞ্জের যে গ্রামগুলিতে হাতি যাওয়ার সম্ভাবনা, সেই গ্রামগুলিতে গিয়ে বনকর্মীরা সতর্ক করে এসেছিলেন। ওই রেঞ্জে না ঘটলেও পাশের আড়াবাড়ি রেঞ্জে সাত সকালে মৃত্যুর ঘটনা। বনদপ্তরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে এলাকায়।