নিজস্ব সংবাদদাতা : পঞ্চায়েত নির্বাচনে ব্যালট নিয়ে ভুরি ভুরি অভিযোগ। কখনও জলাশয়ে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে ব্যালট তো কখনও আবার ব্যালট পেপার চিবিয়ে খেয়ে ফেলেছেন প্রার্থী। এছাড়াও ব্যালট নিয়ে এদিকে ওদিকে চলে যাওয়া তো আছেই। হুগলির জাঙ্গিপাড়ায় রাস্তায় ব্যালট পড়ে থাকার যে ঘটনা ঘটেছে তা নিয়ে মামলা দায়ের হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে। মামলা করেছিলেন বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। বৃহস্পতিবার আদালতে হাজিরা দিলেন রিটার্নিং অফিসার, বিডিও। সেই মামলায় কমিশনকে চূড়ান্ত ভর্ৎসনা করল আদালত। এই মামলায় কমিশনকে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। তার বেঞ্চেই হয় শুনানি। এদিন বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন, ব্যালট পেপার ব্যালট বাক্সের বাইরে এল কীভাবে? ব্যালট কীভাবে রাস্তায় গেল? কেন ভুরি ভুরি অভিযোগ সামনে আসছে? কমিশনের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি সিনহা।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন পর্ব থেকেই অশান্তির সাক্ষী থেকেছে পশ্চিমবঙ্গ। গণনার দিন রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায় শত শত ব্যালট পেপার যে পেপারে কিনা লেখা রয়েছে গ্রামবাংলার মানুষের রায়। বুধবার বামেদের পক্ষের ব্যালট ছিল রিটার্নিং অফিসারের স্বাক্ষর। বুধবার সেই সব ব্যালট পেপার পেশ করা হয় বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে। এরপর বৃহস্পতিবার রিটার্নিং অফিসার এবং বিডিও-কে আদালতে হাজিরার নির্দেশ দেন তিনি। সেই মতোই দুজন হাজিরা দেন আদালতে। রিটার্নিং অফিসারকে বিচারপতির প্রশ্ন, ব্যালট পেপার কীভাবে বাইরে এল? তিনি এগুলো দেখেছিলেন কিনা তাও জানতে চান বিচারপতি। কাকে ইস্যু করেছিলেন সেই উত্তরও জানতে চান বিচারপতি। প্রিসাইডিং অফিসারের সই আছে কিনা সেবিষয়েও প্রশ্ন করেন বিচারপতি সিনহা। বিচারপতির প্রশ্নের জবাবে রিটার্নিং অফিসার বলেন, ব্যালটগুলি দেওয়া হয়েছিল প্রিসাইডিং অফিসারকে। তার মাধ্য়মে গণনাকেন্দ্রের বাইরে যেতে পারে বলে সম্ভাবনার কথা প্রকাশ করেন। এরপরই বিচারপতি রিটার্নিং অফিসারের কাছে জানতে চান, তার কোনো দায়িত্ব আছে কিনা। বুথে কি ভয়ের পরিবেশ ছিল? যদিও উত্তরে রিটার্নিং অফিসার জানান, বুথে কোনো ভয়ের পরিবেশ ছিল না। প্রিসাইডিং অফিসারের নাম সহ সব তথ্য জানতে চান বিচারপতি। সিসিটিভি ফুটেজও দেখতে চান তিনি।
গণনা চলাকালীন কোনো বিরোধী দলের এজেন্ট ছিল কিনা, গণনা শুরুর সময়, প্রার্থীদের প্রবেশের সময় সম্পর্কেও রিটার্নিং অফিসারের কাছে জানতে চান বিচারপতি। কমিশন কি ব্যবস্থা নিয়েছে? কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, ১০০০ ব্যালট পেপারের মধ্যে ৪০০ ব্যালট ব্যবহার করা হয়নি। তবে এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি বলেই জানিয়েছে কমিশন। এদিকে মৌখিক বক্তব্যকে আইন স্বীকার করে না। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, মৃত্যুর ঘটনা যে ঘটেছে সেটা অস্বীকার করতে পারবে না কমিশন। ক্ষমতা দখলের জন্যই এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলেই পর্যবেক্ষণ বিচারপতি তথা আদালতের।
রাস্তায় পড়ে থাকা ব্যালটে কমিশনের আধিকারিকদের সই ছিল। তাও কেন বিষয়টি কমিশন অস্বীকার করছে ? সওয়ালের মাঝখানে কমিশনের আইনজীবীর উদ্দেশ্যে এমনই প্রশ্ন ছোঁড়েন বিচারপতি।বিচারপতি আরও বলেন, আদালত অনেক ধৈর্য ধরেছে। ব্যালট পেপার বাইরে! কোথায় নির্বাচনের স্বচ্ছতা?এদিন ভিডিও ফুটেজ এবং সিসিটিভি ফুটেজ জমা দিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার। বুথের ভিতরের ফুটেজ রেজিষ্ট্রার জেনারেলের কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ২৬ জুলাই এই মামলার পরবর্তী শুনানি। হাইকোর্টের বিশেষজ্ঞ কমিটি এবং রেজিস্টারার জেনারেলের বিশেষজ্ঞ টিম পুরো ভিডিও খতিয়ে দেখে রিপোর্ট জমা দেবে বলে জানা যাচ্ছে।