সজল মণ্ডলঃ কয়েকদিন আগে আমার এক প্রাক্তনের সঙ্গে দেখা, হঠাৎ করে সে আমায় প্রশ্ন করলো -স্যার, আমরা তো আমাদের পড়াশোনা ,পরীক্ষার রেজাল্ট মোটামুটি ভালোভাবেই করেছি, কিন্তু এখনো কেন জীবন যুদ্ধে তেমনভাবে সাফল্য পাচ্ছি না। এর কারন কী? সে কিছুদিন আগেই দেশের এক নামী কলেজ থেকে BIO TECHNOLOGY তে B.TECH পাশ করার পর চাকরির সন্ধানে ঘুরছে। এখনো তেমন সুবিধে করে উঠতে পারেনি। আমি তাকে তার প্রশ্নের উত্তরে বললাম বর্তমান উন্নত সমাজে বিশেষত আমাদের মত দেশে সত্যই এক গভীর সমস্যা হলো উচ্চশিক্ষিত যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থান না হওয়া । বড় বড় উদ্যোগপতিরা কর্মী চাইছেন না এমনটাও কিন্তু নয় ।তাঁরা চাইছেন এমন কর্মী নিতে যাঁরা প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন/পরিসেবা প্রদান প্রক্রিয়া ও কাম্য ORGANIZATION BEHAVIOUR এ পটু হবেন । কিন্তু প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের উদ্যম/প্রচেষ্টা তা তৈরী করতে কতটা সফল সে নিয়ে আমার সন্দেহ আছে । প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় আমরা না পারছি চাকুরীপ্রার্থীকে চাকুরীদাতার চাহিদা মতো তৈরী করতে অথবা না পারছি তাঁদেরকে সমাজের প্রয়োজনীয় MORAL NORMS এ উন্নীত করতে । হয়তো এর অন্যতম প্রধান কারণ শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তনের আগেই উদ্যোগপতিদের চাহিদা এবং সমাজের পরিবর্তন ঘটে যাচ্ছে । অন্যদিকে এই ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীর একক ব্যক্তিগত চাহিদা ,সামর্থ্য ,প্রক্ষোভ প্রভৃতির দিকে নজর দেওয়ার সুযোগ খুবই কম। আমার মনে হয় এই সমস্যার সমাধানে আজ আমাদের যা প্রয়োজন তা হলো MAN MAKING EDUCATION . যার রূপরেখা স্বামী বিবেকানন্দের কর্মযোগ দর্শন থেকে পেতে পারি।
যুগপুরুষ স্বামী বিবেকানন্দ মাদ্রাজ শহরের ট্রিপ্লিকেন সাহিত্য সমিতিতে বক্তৃতার প্রারম্ভে বলছেন "এই পৃথিবী যতই অগ্রসর হচ্ছে ততই দিনদিন জীবন সমস্যা আরো গভীর ও ব্যাপক হচ্ছে।" আজ এই ঘটনার 125 বছর পরেও আমরা বাস্তবে দেখতে পাচ্ছি বর্তমান সময়ে জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রভূত কল্যাণে ব্যবহারিক শিক্ষা এবং সম্পদ আহরণের নিরিখে সভ্যতার সীমাহীন অগ্রগতি ঘটেছে । অথচ আধুনিক মানব সমাজ সমস্যা সাগরে নিমজ্জিত। আমরা জনসমুদ্রে বাস করেও বড় নিঃসঙ্গ। পৃথিবীর সিংহভাগ সম্পদ মুষ্টিমেয় মানুষের কুক্ষিগত অন্যদিকে সিংহভাগ মানুষ দারিদ্র, অপুষ্টি, অশিক্ষা সম্বল করে জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে । বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যে পরিমাণে প্রযুক্ত হচ্ছে মানবকল্যাণে তার অনেক গুণ বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে মানব শোষণের এবং পীড়নের কৌশল হিসাবে। আসলে আধুনিক সমাজ বস্তুগত উন্নতির সমুদ্র হলেও মানবিকতার মরুভূমি। এই মরুভুমে প্রকৃতশিক্ষার বারি সিঞ্চন করে মরুদ্দ্যান রচনার জন্য তাঁরা বীজ বপন শুরু করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ তাদের অগ্রগণ্য। ১৮৯৫ সালের ডিসেম্বর মাসে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের ২২৮ ওয়েস্ট থার্টিন স্ট্রিটের আধ্যাত্মময় কুটিরে বাছাই করা শতাধিক উচ্চশিক্ষিত - বুদ্ধিদৃপ্ত শ্রোতার সামনে এই আধুনিকতম সত্যদ্রষ্টা ঋষি এক অদ্ভুত শাশ্বত মার্গ দর্শণ করালেন। প্রচীন মুনিদের মতো জনকোলাহল থেকে বহুদূরের কোন নির্জন জঙ্গল বা গিরিগুহায় নয় , পৃথিবীর ব্যস্ততম বাণিজ্য শহর নিউ ইয়র্কের জনারণ্যে সূচনা করলেন আধুনিক MAN MAKING EDUCATION বা মানব গঠনের শিক্ষার । 13 ই ডিসেম্বর ১৮৯৫ 'কর্ম - চরিত্রের উপর তার প্রভাব' এই বক্তৃতার মধ্য দিয়ে সূচনা করলেন 'কর্মযোগের' যা মনে হয় আধুনিক সমাজের শিক্ষা ব্যবস্থার জীবন বেদ স্বরূপ।
১) এই শিক্ষার মূল লক্ষ্য কী ?
"মানুষের চরম লক্ষ্য সুখ নয় জ্ঞান । সুখ ও আনন্দ তো শেষ হয়ে যায় । সুখই চরম লক্ষ্য এরূপ মনে করা ভ্রম। জগতে আমরা যত দুঃখ দেখতে পাই তার কারণ মানুষ অজ্ঞের মতো মনে করে সুখই আমাদের চরম লক্ষ্য। কালে মানুষ বুঝতে পেরেছে তাই সুখের দিকে নয় জ্ঞানের দিকে সে ক্রমশ এগিয়ে চলেছে।"(কর্মযোগ স্বামী বিবেকানন্দ , উদ্বোধন কার্যালয় , ১৩০৭ বঙ্গাব্দ)
২) এই শিক্ষা কি ভাবে লাভ হয় ?
"দুঃখ সুখ তার (মানুষের) মহান শিক্ষক । সে শুভ এবং অশুভ থেকে সমভাবে শিক্ষা পায় ।সুখ ও দু:খ যেমন আমাদের মনের উপর দিয়ে চলে যায়, অমনি তারা এর উপর নানা বিধ চিত্র রেখে যায়। আর এই চিত্র সমষ্টির যোগফলকে আমরা মানুষের চরিত্র বলি ............. কোন কোন স্থলে সুখের থেকে দু:খ বেশি শিক্ষা দেয় । জগতের মহাপুরুষদের চরিত্র আলোচনা করলে দেখা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে সুখের থেকে দু:খ তাদেরকে অনেক বেশি শিক্ষা দিয়েছে । ধনৈশ্বর্য অপেক্ষা দারিদ্র বেশি শিক্ষা দিয়েছে । প্রশংসা থেকে নিন্দারূপ আঘাতই তাঁদের অন্তরের (জ্ঞান)অগ্নি প্রজ্বলিত করতে বেশি সাহায্য করেছে।"(কর্মযোগ স্বামী বিবেকানন্দ , উদ্বোধন কার্যালয় , ১৩০৭ বঙ্গাব্দ)
৩) এই শিক্ষা বা জ্ঞানের উৎস কি ?
"এই জ্ঞান আবার মানুষের অন্তর্নিহিত। কোন জ্ঞানই বাহির থেকে আসে না । সবই ভিতরে। আমরা যে বলি মানুষ 'জানে' , মনোবিজ্ঞানের ভাষায় বলতে গেলে বলতে হবে মানুষ আবিষ্কার করে বা আবরণ উন্মোচন করে । মানুষ যা শিক্ষা করে প্রকৃতপক্ষে তা আবিষ্কার করে । আবিষ্কার বা ডিসকভার শব্দটির অর্থ অনন্ত জ্ঞানের স্বরূপ আত্মা থেকে আবরণ সরিয়ে নেওয়া।"(কর্মযোগ স্বামী বিবেকানন্দ , উদ্বোধন কার্যালয় , ১৩০৭ বঙ্গাব্দ)
৪) এই শিক্ষা লাভের বাস্তব উদাহরন কোথায় ?
"..... নিউটন মাধ্যাকর্ষণ আবিষ্কার করেছেন । তাহলে তা কি কোন এক ঘরের কোণে বসে তার জন্য অপেক্ষা করছিল? না তা নিউটনের নিজের মনে অবস্থিত ছিল ; যখন প্রকৃত সময় এলো তিনি তা দেখতে পেলেন । মানুষ যত প্রকার জ্ঞান লাভ করেছে সবই তার মন থেকে । জগতের অনন্ত পুস্তকাগার তোমারই মনে। বহির্জগৎ কেবল তোমার নিজের মনকে অধ্যয়ন করার উত্তেজক কারণ উপলক্ষ মাত্র । তোমার নিজের মনই সর্বদা তোমার অধ্যায়নের বিষয় । আপেলের পতন নিউটনের পক্ষে উদ্দীপক কারণস্বরূপ, তখন তিনি নিজের মন অধ্যয়ন করতে লাগলেন। তিনি তাঁর মনের ভিতর আগে থেকে অবস্থিত ভাব পরম্পরা আরেক ভাবে সাজিয়ে তাদের ভিতর একটি নূতন শৃঙ্খলা আবিষ্কার করলেন তাকই আমরা বলছি মাধ্যাকর্ষণের নিয়ম । এই জ্ঞান না ছিল আপেলে না ছিল পৃথিবীর কেন্দ্রে । অতএব লৌকিক পারমার্থিক সব জ্ঞানই মানুষের মনে । অনেক সময়ই সেগুলি আবিষ্কৃত না হয়ে আবৃত থেকে যায় । যখন আবরণ ধীরে ধীরে সরে যায় তখন আমরা বলি শিক্ষা গ্রহন করছি ।"(কর্মযোগ স্বামী বিবেকানন্দ , উদ্বোধন কার্যালয় , ১৩০৭ বঙ্গাব্দ)
৫) এই জ্ঞান লাভের ফল কি ভাবে পরিলক্ষিত হয় ?
"....আবরণ ধীরে ধীরে যতই অপসারিত হতে থাকে যেন ততই জ্ঞানলাভ অগ্রসর হতে থাকে । আবরণ যাঁর ক্রমশ উঠে যাচ্ছে তিনি অপেক্ষাকৃত জ্ঞানী। যার আবরণ খুব বেশি সে অজ্ঞান । আর যাঁর ভেতর এই আবরণ একেবারে চলে গেছে তিনি সর্বজ্ঞ। পূর্বে অনেক সর্বজ্ঞ পুরুষ ছিলেন । আমার বিশ্বাস একালে অনেক হবেন। আর আগামী কল্পসমূহে অসংখ্য এই রূপ সর্বজ্ঞ পুরুষ জন্মাবেন । চকমকি পাথরে যেমন আগুন নিহিত থাকে মানব মনের মধ্যেই সেরকম জ্ঞান রয়েছে । উদ্দীপক কারণটি যেন ঘর্ষণ, জ্ঞানাগ্নিকে প্রকাশ করে দেয়।"(কর্মযোগ স্বামী বিবেকানন্দ , উদ্বোধন কার্যালয় , ১৩০৭ বঙ্গাব্দ)
৬) এই শিক্ষা লাভ কি ভাবে সম্ভব ?
".... যদি আমরা ধীরভাবে নিজেদের অন্তঃকরণ অধ্যয়ন করি তবে দেখব আমাদের হাসি -কান্না, সুখ- দু:খ, আশীর্বাদ -অভিসম্পাত ,নিন্দা -সুখ্যাতি সবই আমাদের মনের উপর বহির্জগতের বিভিন্ন আঘাত এর দ্বারা আমাদের ভিতরে উৎপন্ন..... আত্মার অভ্যন্তরস্থ অগ্নি কে বার করার জন্য এবং নিজের শক্তি ও জ্ঞান প্রকাশের জন্য যেকোনো মানসিক দৈহিক আঘাত প্রাপ্ত হওয়াই কর্ম..... কর্ম আমাদের উপর অনবরত তার ছাপ রেখে যাচ্ছে.... মানুষ যেন একটি কেন্দ্র জগতের সমুদয় শক্তি সে নিজের দিকে আকর্ষণ করছে ,ওই কেন্দ্রে তাদেরকে দ্রবীভূত করে একাকার করছে তারপর একটি বৃহৎ তরঙ্গাকারে বাইরে প্রেরণ করেছে । এরূপ একটি কেন্দ্রে প্রকৃত মানুষ যিনি সর্বশক্তিমান সর্বজ্ঞ ; আর তিনি তার নিজের দিকে সমগ্র জগৎ আকর্ষণ করছেন । ভালো-মন্দ সুখ -দু:খ সবই তার দিকে চলেছে এবং তার চতুর্দিকে সংলগ্ন হচ্ছে....তার যেমন ভিতরে গ্রহণ করবার শক্তি আছে তেমনি বাইরে প্রক্ষেপ করারও শক্তি আছে...... অতএব আমাদের জানা উচিত কিভাবে কর্ম করতে হবে। তোমরা বলবে কর্ম কি করে করতে হয় তাবার শেখার প্রয়োজন কি। সকলেই তো কোনো না কোনোভাবে এই জগতের কাজ করছি । ....'কিন্তু শক্তির অনর্থক হয়' বলে একটি কথা আছে। গীতায় এ কর্মযোগ সম্পর্কে কথিত আছে 'কর্মযোগ এর অর্থ কর্মের কৌশল ' অর্থাৎ বিজ্ঞানসম্মত প্রণালীতে কর্ম অনুষ্ঠান । কর্ম কি করে করতে হয় জানলে তবে কর্ম থেকে সর্বাধিক ফল পাওয়া যায়। মনে রাখা উচিত সকল কর্মের উদ্দেশ্য মনের ভিতর পূর্ব থেকে যে শক্তি আছে তা প্রকাশ করা। আত্মাকে জাগিয়ে তোলা । প্রত্যেক মানুষের ভিতর এই শক্তি আছে এবং জ্ঞান আছে এই সকল বিভিন্ন কর্ম যেন ওই শক্তি ও জ্ঞানকে বাইরে প্রকাশ করার জন্য আঘাতস্বরূপ।"(কর্মযোগ স্বামী বিবেকানন্দ , উদ্বোধন কার্যালয় , ১৩০৭ বঙ্গাব্দ)।
৭) এই শিক্ষা লাভের জন্য কেমন কর্ম প্রয়োজন ?
".... আমাদেরকে গোড়া থেকে আরম্ভ করতে হবে। আমাদের সামনে যেমন কর্ম আসবে তাই করতে হবে এবং প্রত্যহ আমাদেরকে ক্রমশ আরো বেশি করে নি: স্বার্থপর হতে হবে। আমাদের কর্ম করতে হবে এবং কর্মের পশ্চাতে কি অভিসন্ধি আছে তা দেখতে হবে। তাহলে প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখতে পাবো প্রথম প্রথম আমাদের অভিসন্ধি স্বার্থ পূর্ণ । কিন্তু অধ্যবসায় প্রভাবে ক্রমশ এই স্বার্থপরতা কমে যাবে অবশেষে এমন সময় আসবে যখন আমরা সত্যই নিষ্কাম কর্ম করতে সমর্থ হবে। তখন আমাদের আশা হবে জীবনের পথে ক্রমশ এগিয়ে যেতে যেতে কোন না কোন সময়ে এমন একদিন আসবে যখন আমরা সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থ হতে পারব । আর যে মুহূর্তে আমরা সেই অবস্থা লাভ করব সেই মুহূর্তে আমাদের সকল শক্তি কেন্দ্রীভূত হবে এবং আমাদের অন্তর্নিহিত জ্ঞান প্রকাশিত হবে।"(কর্মযোগ স্বামী বিবেকানন্দ , উদ্বোধন কার্যালয় , ১৩০৭ বঙ্গাব্দ)।
এই আলোচনা থেকে একথা পরিষ্কার যে জ্ঞান অর্জনের একমাত্র উপায় 'কর্ম' । বহু বছর পূর্বের এই উপলব্ধিকে মান্যতা দিয়ে আধূনিক শিক্ষাতত্ত্বে Behaviorism, Cognitivism এবং Constructivism সবক্ষেত্রেই সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে শিক্ষার্থীর অভিজ্ঞতা বা experience কে । স্বামী বিবেকানন্দ যে 'কর্মের 'কথা বলেছেন তা আসলে এই অভিজ্ঞতার আরো ব্যাপক এবং সুসংগত রূপ। তাই আমরা যখন নিছক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মোহে ভাবছি শিক্ষালাভ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আঙিনায় সীমাবদ্ধ তখন স্বামীজি দেখালেন বিচ্ছিন্ন ভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয় শিক্ষার্থীর সার্বিকজীবন জ্ঞানলাভের নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহ । তাই এই শিক্ষালাভে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিছক উপস্থিতি নয় জীবন শৈলী একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । আমরা প্রায়স শিক্ষক/অভিভাবক হিসাবে শিশুকে শিক্ষিত করার তাগিদে জ্ঞানার্জনে উদ্ভুদ্ধ করলেও নি:স্বার্থপর হওয়ার কথা বড় একটা বলি না । আপাতভাবে নি:স্বার্থপর সঙ্গে জ্ঞানার্জনের সম্পর্ক খুঁজে পাই না তখন স্বামী বিবেকানন্দ বারবার বলছেন নিঃস্বার্থ পর জীবনবোধ ছাড়া প্রকৃত জ্ঞানের অন্বেষণ সম্ভব নয়। তাই আমরা যারা পরম পুরুষ শ্রী রামকৃষ্ণের ভাবধারায় জীবন গঠনের কথা ভাবছি, অভিভাবক অভিভাবিকা হিসাবে আমাদের প্রারম্ভিক কর্ম হলো নি:স্বার্থপরতার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হওয়ায়এবং আমাদের সন্তান-সন্ততিকে সেই আদর্শে প্রতিপালন করা ।বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় আমরা তথ্য সংগ্রহ বা মেধা বিকাশে যত গুরুত্ব আরোপ করি তার কণামাত্র ব্যয় করি না শিক্ষার্থীদের কে নিঃস্বার্থ পর করে তোলার। জন্য ফলে প্রকৃত জ্ঞান কোন হবেই শিক্ষার্থী কতৃক অর্জিত হচ্ছে না। যা আমাদের এই জনসমুদ্রকে করে তুলছে 'মানবিকতার মরুভূমি' । তাই স্বামীজীর প্রদর্শিত এই পথে Man Making Education বাস্তবায়িত করতে গেলে যার প্রয়োগ সর্বাধিক দরকার তা হল শিক্ষা লাভের জন্য নিঃস্বার্থ পর কর্মের প্রয়োজনীতাকে স্বীকার করা এবং নিঃস্বার্থ পর কর্ম অনুশীলনে শিক্ষার্থীকে Motivated করা।
(লেখকের মতামত ব্যক্তিগত, লেখক একজন প্রখ্যাত শিক্ষক)