নিজস্ব সংবাদদাতাঃ বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের (Birendra Krishna Bhadra) কন্ঠের মায়াবী সুরে সুর করা 'মহিষাসুর মর্দিনী' এবং চণ্ডীপাঠ বাঙালির মনকে ব্যাকুল করে তোলে। ১৯৩০-এর দশকে প্রথমবারের মতো রেডিওতে এই চণ্ডীপাঠ এবং 'মহিষাসুর মর্দিনী' শোনা গিয়েছিল তার কণ্ঠে। মহালয়ার দিনেই 'পিতৃপক্ষ', বা ১৬-দিনের চন্দ্রের সময়কাল, যখন হিন্দুরা তাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে, এর অবসান হয়। শুরু হয় 'দেবীপক্ষ'। মর্তে দেবী দুর্গার (Durga Puja) আগমন ঘটে।
ভারত, বাংলাদেশ এবং এর বাইরেও কোটি কোটি বাঙালির কাছে মহালয়ার (Mahalaya) ভোর একটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। মহালয়ার দিন ভোরবেলা রেডিওতে শুরু হয় দুই ঘণ্টার মহিষাসুর মর্দিনী। দেবী দুর্গার সাথে অসুর রাজা মহিষাশুরের মহাকাব্যিক যুদ্ধের বর্ণনা রয়েছে এতে। অনুষ্ঠানটির চিত্রনাট্য লিখেছিলেন বাণী কুমার এবং এর সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন পঙ্কজ কুমার মল্লিক। বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের রেকর্ডকৃত পরিবেশনাটি শেষ পর্যন্ত এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে, প্রয়াত মহানায়ক অভিনেতা উত্তম কুমারও ১৯৭৬ সালে এই অনুষ্ঠানটি আবৃত্তি করেন সেই সময় তিনিও বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের জনপ্রিয়তাকে ছাপিয়ে যেতে সক্ষম হননি। তখন এটি শ্রোতাদের কাছ থেকে অনুকূল সাড়াই পায়নি। তখন ফের বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের সংস্করণটিকেই পুনরায় রেডিওতে সম্প্রচার করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের মেয়ে সুজাতা ভদ্র ২০০৬ সালে মহালয়ার দিনেই সারেগামা ইন্ডিয়া লিমিটেড থেকে তার বাবার কাজের উত্তরাধিকার এবং রয়্যালিটির স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। শুধু তাই-ই নয়, পারিশ্রমিক হিসেবে ৫০,৯১৭ টাকার একটি চেকও পেয়েছিলেন তিনি।
/anm-bengali/media/media_files/zoCkZGUWv9qTKU58gu7K.jpg)
৯০ মিনিটের মহিষাসুর মর্দিনী প্রথম ১৯৩১ সালে পঙ্কজ কুমার মল্লিকের তত্ত্বাবধানে রচিত হয়েছিল। মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় এবং আরতি মুখোপাধ্যায়ের মতো উল্লেখযোগ্য শিল্পীদের সমন্বিত আবৃত্তির একটি লাইভ পরিবেশনা প্রতি বছর রেডিও দ্বারা সম্প্রচারিত হয়। এই শো'টি প্রথম রেকর্ড করা হয়েছিল ১৯৬৬ সালে। এরপর অল ইন্ডিয়া রেডিও প্রতি বছর মহালয়ার ভোরে রেকর্ড করা সংস্করণটি সম্প্রচার করতে থাকে। সম্প্রচারক বিভিন্ন শিল্পীদের সাথে একাধিকবার এই প্রোগ্রামটি "পুনরায় রেকর্ড করার" চেষ্টাও করেছিল, কিন্তু নস্টালজিক বাঙালিদের মধ্যে তারা কখনই জনপ্রিয় প্রশংসা পায়নি।
বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের মতো বহুল জনপ্রিয়তা আজ অবধি কোনও শিল্পী অর্জন করতে পারেননি। তাই বলাই বাহুল্য যে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র এক এবং অদ্বিতীয়।