নিজস্ব সংবাদদাতা: অর্থনৈতিক সংকট ও পারিবারিক বিবাদে জর্জরিত এক দম্পতির মর্মান্তিক পরিণতি। মঙ্গলবার কসবার হালতু পূর্বপল্লির একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার হল স্বামী-স্ত্রী ও তাঁদের আড়াই বছরের শিশুপুত্রের নিথর দেহ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ছেলেকে হত্যার পর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন দম্পতি।
নিহতরা হলেন সোমনাথ রায়, তাঁর স্ত্রী সুমিত্রা রায় ও তাঁদের সন্তান রুদ্রনীল। পুলিশ সূত্রে খবর, অটোরিকশা চালক সোমনাথ রায় দীর্ঘদিন ধরে ছেলের চিকিৎসার জন্য অর্থ সংগ্রহ করছিলেন। শিশুটি জন্ম থেকেই জটিল রোগে আক্রান্ত ছিল এবং তার অস্ত্রোপচারের জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন ছিল। ইতিমধ্যেই দুটি অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছিল, কিন্তু আরও একটি বাকি ছিল। চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে নিজের একটি অটো বিক্রি করেন তিনি এবং বিভিন্নজনের কাছ থেকে ঋণ নেন।
পরিবারের অভিযোগ, এই আর্থিক চাপের পাশাপাশি সম্পত্তি নিয়ে আত্মীয়দের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ চলছিল। সোমনাথের শ্বশুরের দাবি, তাঁর ভাগ্নে ও ভাগ্নিরা নিয়মিত মানসিক নির্যাতন চালাতেন দম্পতির উপর। ঘটনায় অভিযুক্ত মামা, মামী ও মাসিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে কসবা থানার পুলিশ।
স্থানীয়দের দাবি, সোমবার রাতেও সোমনাথ স্বাভাবিক ছিলেন। তাঁর এক পরিচিত ব্যক্তি, যিনি সোমনাথের অন্য একটি অটো ভাড়ায় চালাতেন, তিনি জানান, মঙ্গলবার বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন সোমনাথ। তবে চাবির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করায় বলেন, সেটি অটোতেই থাকবে। পরদিন সকালে দেখা যায়, অটোর ভিতরে চাবির পাশাপাশি রাখা রয়েছে ২ হাজার টাকা।
পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমে ঘটনাস্থল থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছে। সেইসঙ্গে বাড়ির দেওয়ালে লেখা কিছু বাক্যও নজরে এসেছে, যেখানে আত্মঘাতী হওয়ার কারণ হিসাবে আত্মীয়দের দোষারোপ করা হয়েছে। তবে অভিযুক্ত আত্মীয়রা তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাদের দাবি, সোমনাথ তাঁর মায়ের পেনশনের পুরো টাকা নিজেই ব্যবহার করতেন এবং তাঁদের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ ভিত্তিহীন।
বর্তমানে পুলিশ দম্পতির আত্মহত্যার পিছনে আর্থিক অনটন, পারিবারিক বিবাদ এবং মানসিক চাপের সম্পর্ক খতিয়ে দেখছে। পুরো ঘটনার তদন্ত চলছে।