নিজস্ব সংবাদদাতা: ভুয়ো চিঠিতে সই করিয়ে গালিগালাজ করতে বাধ্য করা হয়। তারপর, মেন হস্টেলের ৭০ নম্বর ঘরে বিবস্ত্র করা হয় নদিয়ার প্রথম বর্ষের সেই পড়ুয়াকে। ভয়, অপমান, আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে সাড়ে সতেরো বছরের তরুণ স্বপ্নদীপ কুণ্ডু ছুটতে থাকে হস্টেলের করিডরজুড়ে। পালানোর পথটুকুও পায়নি সে। যাদবপুরকাণ্ডে এমনই চাঞ্চল্যকর দাবি করল পুলিশ।
কী ঘটেছিল সেই রাতে? প্রথমে ভুয়ো চিঠিতে সই করানো হয় আর তারপর উচ্চস্বরে গালিগালাজ করতে বাধ্য করা হয় ছেলেটিকে। তারপর বিবস্ত্র করে দেওয়া হয় পড়ুয়াকে। নির্যাতনের হাত থেকে পালানোর সব পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। পুলিশ বলছে যে ৯ অগাস্ট রাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের A2 ব্লকের ৩ ও ৪ তলাজুড়ে এই নারকীয় অত্যাচারই চলে। রসায়ন বিভাগের প্রাক্তনী ধৃত শেখ নাসিম আখতার ও সোশিওলজির দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া ধৃত মনোতোষ ঘোষ ছিল ১০৮ নম্বর ঘরে। যাদবপুরের কম্পিউটার সায়েন্সের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ধৃত সত্যব্রত রায় থাকত ১১০ নম্বর ঘরে। মহম্মদ আরিফ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র থাকত ৭৪ নম্বর ঘরে। ৬৫ নম্বর ঘর ফাঁকাই থাকত। হস্টেলে এই ঘরই নাকি আবার দাদাদের ঘর বলে পরিচিত ছিল। ঘটনার রাতে ৬৮ নম্বর রুম থেকে চারতলার ১০৪ নম্বর রুমে নিয়ে যাওয়া হয় মৃত পড়ুয়াকে। সেখানে আগে থেকেই হাজির ছিল নাসিম আখতার ও সত্যব্রত রায়। জোর করে চিঠিতে সই করানো হয়।
এরপর শুরু হয় হাড়হিম করা নির্যাতন। চারতলা থেকে তিনতলার ৬১ নম্বর ঘরে ঢোকানো হয় স্বপ্নদীপকে। পুলিশ বলছে যে পড়ুয়াকে গালিগালাজ করতে বাধ্য করা হয়। বিভিন্ন ঘরে ঢুকিয়ে পরিচয়ের নামে চলে অত্যাচার। ৭০ নম্বর ঘরে অপমান, অত্যাচার, হেনস্থার যাবতীয় সীমা অতিক্রম করে। পুলিশ দাবি করে যে এখানেই বিবস্ত্র করা হয় পড়ুয়াকে। ভয়, অপমান, আতঙ্কে দিশেহারা সাড়ে সতেরো বছরের তরুণ ছোটাছুটি করে হস্টেলের করিডরজুড়ে। ৬৫ নম্বর ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু পারেনি। বাথরুমের দিকে বা চারতলায় যাতে যেতে না পারে, তাই পড়ুয়াকে ঘিরে ধরা হয়। ডান দিক দিয়ে কোনওমতে ছুটতে শুরু করে পড়ুয়া। তারপরই, রাত ১১ টা ৪৫ মিনিটে ঘটে সেই ভয়ঙ্কর ঘটনা। তিনতলা থেকে এক্কেবারে নিচে পড়ে যায় সে। তাই প্রশ্ন উঠছে তাহলে কী ধাওয়া করা হয়েছিল পড়ুয়াকে? ছুটতে ছুটতে একেবারে বারান্দার রেলিং-এর কিনারায় পৌঁছে যায় সে? এই প্রশ্নের উত্তর এখনও অধরা।