নিজস্ব সংবাদদাতাঃ বেশ কয়েকদিন ধরেই নানা জায়গায় ভূমিকম্পের খবর পাওয়া গেছে। তার মধ্যে অন্যতম হল নেপালের ভূমিকম্প। নেপাল ভারতের এক প্রতিবেশী দেশ। তাই বলাই বাহুল্য যে ভারতের থেকে নেপালের ভৌগলিক দূরত্ব খুব একটা বেশি না। তাই নেপালের ভূমিকম্পের ভয়াবহতা ভয় ধরাচ্ছে কলকাতাতেও। শুধু তাই'ই নয়, দিল্লিও এই ভূূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলের মধ্যে পড়ে।
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন যে, অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং জনঘনত্ব মূল কারণ এই কম্পনের। কেননা, হিমালয়ের পাদদেশে থাকা সব এলাকাই ভূমিকম্পপ্রবণ। সেদিক থেকে কলকাতা ভূমিকম্পপ্রবণ ও মৃদু ভূমিকম্পপ্রবণ জ়োনের মধ্যে পড়ে দিল্লি এবং নেপালও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শহরের নির্মাণ যদি বিজ্ঞানসম্মত হয়, তা হলে ক্ষতি কম হবে। অপরিকল্পিত নগরায়নের মূল্য চোকাতে হয়েছে উত্তরাখণ্ডের জোশিমঠকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রানাঘাট থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত একটি এলাকা ভূমিকম্পের সম্ভাবনার নিরিখে যথেষ্ট উদ্বেগজনক জায়গায় রয়েছে। আবার মাটির ধারণক্ষমতার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর জোর না দিয়ে যেভাবে নগরায়ন হচ্ছে, তার জন্য কলকাতার ঝুঁকিও কিছু কম নয়। রাজারহাট, বেহালা, নিউটাউনে যে নগরায়ন হয়েছে, সেটাও ঝুঁকিপূর্ণ বলে মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের।
শুক্রবার মাঝ রাতে কেঁপে উঠল দিল্লি। মৃদু কম্পন অনুভূত হয়েছে তিলোত্তমাতেও। এবারও ভূমিকম্পের উৎসস্থল সেই নেপাল। কম্পনের মাত্রা ছিল ৬.৪। ভূমিকম্পের উৎসস্থল লখনৌ থেকে ২৫৩ কিলোমিটার দূরে, কলকাতা থেকে দূরত্ব প্রায় সাড়ে ন'শো কিলোমিটার। ভূমিকম্পের অভিকেন্দ্র মাটি থেকে ১০ কিলোমিটার নীচে। শুক্রবার কম্পনের যা মাত্রা ছিল, তাতে নেপালে ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেশি হয়েছে। প্রায় ২০০ জনের কাছাকাছি মানুষের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। আহতের সংখ্যা আরও বেশি। অনেকেরই দাবি, একের বেশিবার কম্পন হয়েছে। যদিও ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি তরফে তেমন কিছু জানানো হয়নি। আফটার শকের আতঙ্কে ঘরে ঢুকতে ভয় পাচ্ছে মানুষ। দিল্লি, এনসিআর, বিহারে ৬.৪ মাত্রা কম্পন অনুভূত হলেও তুলনামূলক ভাবে কলকাতায় কম্পনের মাত্রা ছিল কম। গঙ্গায় বাবুঘাটের পাশে থাকা বেশ কিছু স্থানীয় ব্যক্তির দাবি, সেসময় গঙ্গায় মৃদু ঢেউও দেখা গিয়েছে।
বিজ্ঞানীরা আরও জানাচ্ছেন যে, ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হিসেবে বৃহত্তর দিল্লি সিসমিক জ়োন-৪ এর মধ্যে পড়ে। উত্তরবঙ্গ জ়োন-৫ এলাকাভুক্ত। কেন দিল্লি জ়োন-৪ এর মধ্যে পড়ে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা মূলত দিল্লির ভৌগোলিক অবস্থান এবং ভূতাত্ত্বিক বিশেষত্বের কারণে। ভারতীয় এবং ইউরেশিয়ান টেকটোনিক প্লেটের ক্রমাগত সংঘর্ষের ফলে হিমালয় তৈরি হয়েছিল। এই কার্যকলাপের ফলে নিয়মিত কম্পন হয়, যা এই অঞ্চলটিকে ভূমিকম্প এবং ধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কেন্দ্রস্থল করে তোলে। ভবিষ্যতে এ অঞ্চলে ভূমিকম্পের আরও আশঙ্কা থাকছে বলেও সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞেরা।