নিজস্ব সংবাদদাতা: এক বা দুইবার নয়। কয়লা পাচারের তদন্তে নেমে ইডি এবার দাবি করছে যে এই রাজ্য থেকে এক বছরে ২২ বার পর্যন্ত বিদেশে গিয়েছেন একাধিক প্রভাবশালী যার মধ্যে বার ১৫ শুধুই দুবাই ভ্রমণ। গন্তব্যের তালিকায় রয়েছে থাইল্যান্ড, লন্ডনও। মূলত ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে প্রতি বছর কেন তাঁদের এত বার বিদেশে যেতে হয়েছে, এখন সেটাই নজরে তদন্তকারী সংস্থাটির।
জানা গেছে যে প্রভাবশালীদের এই বিদেশযাত্রার টিকিট কাটা হয়েছিল মূলত মধ্য কলকাতার একটি ভ্রমণ সংস্থার দ্বারা। ওই সংস্থার অফিসে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়। সংস্থার দুই মালিককে সম্প্রতি দিল্লিতে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলেও দাবি। কারা এই প্রভাবশালী? সরাসরি নাম প্রকাশ্যে না আনলেও ইডি দাবি করছে যে এই তালিকায় এক সাংসদ, তাঁর হিসাবরক্ষক ও তাঁদের দু’জনের পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন। সরাসরি নাম করে ইডি জানায় যে কয়লা পাচারের টাকা বিদেশে রেখে আসতে এক সময়ে ঘন ঘন বিদেশে যাত্রা করেছেন তৃণমূলের প্রাক্তন যুব নেতা বিনয় মিশ্রও। ২০২০ সালের পরে তদন্ত এড়াতে প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র ভ্যানুয়াটুতে গিয়ে আশ্রয় ও নাগরিকত্ব নেন।
প্রভাবশালীদের এই ঘন ঘন বিদেশযাত্রার পিছনে কারণ হিসেবে মূলত চিকিৎসার প্রয়োজন দেখানো হয়। কিন্তু সত্যিই কি তাই নাকি আর্থিক স্বার্থও রয়েছে? খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে যে কয়লার টাকা পাচারের জন্যই কি এত ঘন ঘন বিদেশে যাওয়া? হাওয়ালা মারফতই টাকা বিদেশে গিয়ে থাকলে টাকা লেনদেনের জন্য প্রভাবশালীদের এত বার বাইরে যাওয়ার কী দরকার? ইডি দাবি করছে যে ২০১৭ থেকে ২০২০- এই তিন বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয় যার একটি বড় অংশ গেছে বিদেশের মাটিতে প্রভাবশালীদের নামে খোলা সংস্থায়। পরে সেই টাকাই আবার ভারতে তাঁদের ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের নামে ও বেনামে তৈরি করা সংস্থায় পাঠানো হয়। কেনা হয় স্থাবর ও অস্থাবর বহু সম্পত্তি। ওই টাকার একাংশ নির্মাণ ব্যবসাতেও বিনিয়োগ করা হয়েছে বলে তদন্তকারীদের দাবি। এক অফিসার আবার বলছেন যে বিদেশে এক বা একাধিক সংস্থা চালানোর শর্ত হিসেবেই ওই প্রভাবশালীদের ঘন ঘন সেখানে যেতে হত কি না সেই নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। ২০২০ সালের মধ্যে বেশিরভাগ টাকা বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনতেই এত ঘন ঘন বিদেশযাত্রা বন্ধ হল কি না, তাও দেখা হচ্ছে।
কয়লা পাচার মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত অনুপ মাঝির বয়ান অনুযায়ী পাচারকারীদের সঙ্গে প্রভাবশালীদের যোগাযোগের মধ্যস্থতা করতেন বিনয় মিশ্র নিজে। তিনিই নাকি কয়েক হাজার কোটি টাকা প্রভাবশালী ও তাঁদের আত্মীয়দের নামে বিদেশে রাখার ব্যবস্থা নাকি করেন। এই মুহূর্তে প্রভাবশালীদের এই বিদেশযাত্রার কারণ খোলসা হলে তদন্তের কাজ আরও দ্রুত এগোবে বলে আশা করছেন তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা।