নিজস্ব সংবাদদাতা: কলকাতার বিখ্যাত পুজোগুলির মধ্যে পল্লী উন্নয়ন সমিতি অন্যতম একটি বড় পুজো। এবারে তাদের থিম, 'কথা'। এই বিষয়ে বিষয়ে এএনএম নিউজকে জানালেন পুজো উদ্যোক্তারা। 'কথা' শব্দটাকেই তারা থিম হিসাবে কেনও বেছে নিলেন? এই বিষয়ে বলা হয়েছে,
"এত শব্দ থাকতে কথা কেন?
আসলে এখানে মুখ নয়, কথা বলছে দশটা আঙুল, দুটো হাত আর দুটো পা। গাছগুলি কে দেখলে মনে হবে বুঝি মাঠ ভরা ধানের গাছ ফনফন করে বেড়ে উঠেছে। এ গাছ ফলের জন্য চাষ হয় না। ওই ধান জাতীয় গাছের চাষ হয় তার লম্বা লম্বা পাতার জন্য। আমরা আসলে মাদুর তৈরির কথা বলছি।
কাপড়ে নকশা তোলা তো নদীয়ায জেলার ফুলিয়া, শান্তিপুর, হুগলির ধনেখালি কিংবা বর্ধমানের সমুদ্রগড়ের ঘরে ঘরে ঘরে আমরা দেখতে পাবো। বাড়ির সামনের লুটোচ্ছে সুতো। বাড়ির ভিতরে তাঁত চলছে খটাখট খটাখট। মাকু ঘুরে বেড়াচ্ছে এদিকে ওদিকে। আর নকশা উঠে যাচ্ছে কাপড়ে।
তবে আমাদের গন্তব্য ফুলিয়া কিংবা সমুদ্রগড় নয়।আমাদের থিম শিল্পী সোমনাথ তামলী আমাদের নিয়ে গিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং। আমরা গেলাম এক বৃদ্ধার বাড়িতে। চোখে চশমা সেই বৃদ্ধা তাঁতে মাদুর তৈরি করছেন। নকশা তোলা মাদুর । পুষ্পা রাণি জানার দুই হাতের দশ আংগুল, দুই হাত, দুই পা যেন কথা বলছে। আমাদের চোখের সামনে নকশার ছবি পরিষ্কার হয়ে এল। অবচেতন মন যেন কথা বলে উঠল, 'সর্ব মঙ্গল মঙ্গলে, শিবে সর্বাত সাধিকে'। ঠিক ধরেছেন ওটা দশভূজার অবয়ব। ধীরে ধীরে পরিপূর্ণ হলেন মা।যেন কৈলাশ থেকে অবতীর্ণ হলেন বৃদ্ধা মাদুর শিল্পীর কুটীরে।
মাদুর শিল্পীর পুষ্পা রাত্রির ঘর থেকে সেই দেবী মূর্তি এল পশ্চিম পুটিয়ারিতে। পল্লি উন্নয়ন সমিতির মন্ডপে।সঙ্গে সেই অশিতীপর মাদুর শিল্পী। মাদুর শিল্পের জন্য প্রথম জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। সেই ১৯৮০ সালে। মাদুরের পাতার জায়গায় এখন বাড়বাড়ন্ত প্লাস্টিকের। দামে সস্তা, চটজলদি মাদুর তৈরি হওয়ার প্রকৌশল ক্রমেই পুষ্পারাণিদের একঘরে করে দিচ্ছে। কিন্তু নিজের শৈলী বিসর্জন দিতে চাননি ওই বৃদ্ধা। বাড়ির পাশের জমিতে ধান নয়, হাওয়ায় লুটোপুটি খাচ্ছে মাদুর ঘাসের পাতা। তার উপরে পড়েছে বৃষ্টির ফোঁটা। যেন অশ্রু টলটল করছে ওই শিল্পীর চোখে। এটা আনন্দাশ্রু। নিজের এলাকার ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার আনন্দে। মন্ডপে মাদুরে অর্বিভূতা মাতৃ প্রতিমার চোখের দিকে দেখুন। খুঁজে পেতে পারেন সেই আনন্দাশ্রু।"
পল্লী উন্নয়ন সমিতি এবছর ৭০ বছরে পা দিয়েছে। এবছরে তাদের বাজেট প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা। উদ্বোধন করা হবে ৬ অক্টোবর। সমগ্র পরিকল্পনায় সোমনাথ পামলি, মৃতশিল্পী- পুষ্পরানি জানা, আলোক শিল্পী- দীপঙ্কর দে, আবহ শিল্পী- সমীরণ জানা।