নিজস্ব সংবাদদাতাঃ নতুন প্রজাতির বিটলের সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা। আর তাঁর খোঁজ মিলল খোদ কলকাতার বুকেই। সম্প্রতি ভারতীয় প্রাণী বিজ্ঞান সর্বেক্ষণ- কলকাতা, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ও জার্মানির আলেকজান্ডার কোয়েনিগ লিবনিজ ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের যৌথ চেষ্টায় এই সাফল্য এসেছে।
বিটল আসলে গাছ-পাতা খেয়ে বেঁচে থাকা (ফাইটোফ্যাগাস বিটল) একরকমের পোকা। এরই এক নতুন প্রজাতির সন্ধান মিলেছিল কলকাতায়। এবার এর বৈজ্ঞানিক নামও রইল কলকাতার চিহ্ন। কলকাতার বেহালা অঞ্চলে প্রথম এটির খোঁজ পাওয়া যায়। তাই তার বিজ্ঞানসম্মত নাম ‘মেলাদেরা কলকাতাএনসিস' (Maladera Kolkataensis) ভুঁইঞা, গুপ্ত, সরকার এবং আহরেন্স-২০২৩’। শেষ চারটি শব্দ গবেষকদের নামের পদবি। দেবিকা ভুঁইঞা, দেবাংশু গুপ্ত, শুভঙ্করকুমার সরকার এবং ডার্ক আহরেন্স যুক্ত ছিলেন এই গবেষণায়।
তবে এটি হাল আমলে নয়, গত শতকে এই বিটলটির সন্ধান মিলেছিল বেহালায়। ১৯৮৪ সালে পাওয়া সেই বিটলটিরই প্রজাতি নির্ধারিত হল এবার। ভারতে সব মিলিয়ে ১০টি জীবভৌগোলিক অঞ্চল। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চল। কৃষিপ্রধান নিম্ন গাঙ্গেয় সমভূমিতে পাওয়া গিয়েছিল এই নতুন প্রজাতিটি। এটি অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিকর প্রজাতি কি না, তা গবেষণায় খতিয়ে দেখা হবে।
জানা গিয়েছে, ২০১৯ সাল থেকে বিটলের সেরিসিনি প্রজাতির উপরে গবেষণা করছেন ভারতীয় প্রাণী বিজ্ঞান সর্বেক্ষণের (জ়েডএসআই) বিজ্ঞানীরা। এই বিটলটিকে তাঁরা নতুন প্রজাতির প্রাণী বলে চিহ্নিত করেন। জার্মানির আলেকজ়ান্ডার কোয়েনিগ লিবনিজ় ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী ডার্ক আহরেন্স ২০২১ সালে সেটি নিশ্চিত করেন। দেবিকা ভুঁইঞা জ়়েডএসআই-এর কোলিয়প্টেরা বিভাগ এবং কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে গবেষণা করছেন। দেবিকা বলেন, “বেহালায় এক সময়ে গাছপালা ছিল। এই নতুন বিটল আবিষ্কারের গুরুত্ব কতটা, তা ভবিষ্যতে জানা যাবে।” বিজ্ঞানী দেবাংশু গুপ্ত বলেন, “বিভিন্ন গবেষণাপত্রে আমরা বিটলের ১১টি নতুন প্রজাতির বর্ণনা দিয়েছি।”
সম্প্রতি তিনি কোলিয়প্টেরা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক দেবাংশু গুপ্ত, কল্যাণীর প্রাণিবিদ্যার বিভাগীয় প্রধান শুভঙ্করকুমার সরকার ও ডার্ক আহরেন্সের সঙ্গে ‘আ নিউ স্পিশিস অ্যান্ড নিউ রেকর্ড অব সেরিসিনি ফ্রম লোয়ার গ্যাঞ্জেটিক প্লেন অব ইন্ডিয়া’ নামে গবেষণাপত্র আন্তর্জাতিক গবেষণা জার্নাল জ়ুটাক্সা-য় প্রকাশ করেছেন। কল্যাণীর শুভঙ্কর বলেন, “এই বিটল ট্রাইবের শ্রেণিবিন্যাস ও বিবর্তন সম্পর্কে জ্ঞান সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।” সেখানে পশ্চিমবঙ্গ ও বিহার থেকে প্রাপ্ত ২১টি বিটল প্রজাতির প্রথম তথ্যও প্রকাশ করা হয়েছে।