নিজস্ব প্রতিবেদন : এক মাসে দু’বার সংগঠনকে নামাতে গিয়ে তৃণমূল যা ধাক্কা খেয়েছে, তা ১৩ বছরের শাসনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে একটি নজির। আরজি কর-কাণ্ডে নাগরিক আন্দোলন ১২ আগস্ট থেকে বৃদ্ধি পায়, এবং তৃণমূলের সংগঠন সেই আন্দোলন মোকাবিলায় কার্যকরী হতে পারেনি। শাসকদলের নেতারাও এ কথা মেনে নিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত কলকাতা পুলিশ কমিশনারসহ কয়েকজন কর্মকর্তাকে বদলি করলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যাপারে সংশয় রয়ে গেছে।
তৃণমূলের আন্দোলন মোকাবিলা:
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আন্দোলন মোকাবিলায় সংগঠনকে মাঠে নামানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সফল হননি। শাসকদলের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে, কেন সংগঠনকে কার্যকরভাবে নামানো যায়নি, যার ফলে প্রশাসনিক বদল করতে হয়েছে। এই পরিস্থিতি নিয়ে সংশয় প্রকাশিত হচ্ছে, এবং প্রশ্ন উঠছে, সংগঠন কেন সঠিকভাবে কাজ করতে পারেনি।
নাগরিক আন্দোলনের চাপে মমতার উদ্যোগ:
১৬ আগস্ট আরজি কর-কাণ্ডে বিচার চেয়ে মিছিল শুরু করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মৌলালি থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত এই আন্দোলন শক্তিশালী হলেও শাসকদলের অন্যান্য কর্মসূচি তার সামনে ‘ম্রিয়মান’ হয়ে পড়ে। ২৮ আগস্ট, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসে মমতা ছাত্র ও মহিলা সংগঠনকে রাস্তায় নামতে বললেও, সেই কর্মসূচিও তেমন কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি। নাগরিক আন্দোলনের শক্তি এই সময় তৃণমূলের কার্যক্রমকে উল্লেখযোগ্যভাবে পিছনে ফেলেছে।
সাংগঠনিক স্থবিরতার মুখোমুখি তৃণমূল নেতাদের উদ্বেগ:
তৃণমূলের এক প্রবীণ নেতা মন্তব্য করেছেন যে, দলের ২৬ বছরের ইতিহাসে সংগঠন এখনো ভোটের সংগঠন হিসাবেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। সঙ্কটকালীন পরিস্থিতিতে মোকাবিলা করার মতো কার্যকর সংগঠন গড়ে ওঠেনি। অন্য একজন প্রথম সারির নেতা জানাচ্ছেন, আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদ আন্দোলনে সাধারণ ছাত্রদের অংশগ্রহণ থাকলেও দলের ছাত্র সংগঠন কার্যকরভাবে তা ধরতে পারেনি। তিনি ‘সাংগঠনিক স্থবিরতা’কে দায়ী করেছেন, কারণ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠনগুলোর ক্রিয়াকলাপ স্থবির হয়ে গেছে এবং ভোটের অভাবে পরীক্ষিত নেতৃত্বও গড়ে উঠছে না।
অভিষেকের অনুপস্থিতি:
গত কয়েক বছরে তৃণমূলের সাংগঠনিক বিষয় দেখাশোনা করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, তবে আরজি কর-কাণ্ডের পর তিনি বেশিরভাগ সময় 'সরে' থেকেছেন। ছাত্র-যুবদের একাংশ তাঁকে মাঠে নামার আবেদন জানালেও তিনি কার্যক্রমে সক্রিয় ছিলেন না, যার ফলে সংগঠনকে ময়দানে নামাতে ব্যর্থতা দেখা দিয়েছে।
এদিকে, এই সংকটের প্রেক্ষাপটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১৩ বছরের শাসনে প্রথমবারের মতো আন্দোলনের সামনে নমনীয় হয়েছেন, যা বিরোধীদের ‘নতজানু’ বলে অভিহিত করছেন। কলকাতা পুলিশ কমিশনার ও স্বাস্থ্য দফতরের দুই শীর্ষ কর্মকর্তাকে বদল করতে হয়েছে, যা মমতার প্রশাসনের জন্য একটি নজিরবিহীন ঘটনা।