নিজস্ব সংবাদদাতা: অবশেষে এলো সেই দিন। আজ অর্থাত্ শনিবার দুপুরে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের মামলার রায় ঘোষণা হতে চলেছে। এমন একটি অপরাধ, যার প্রতিবাদ দেশ ছাড়িয়ে পৌঁছে গিয়েছিল বিদেশেও। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’-এর নাড়া যে গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিতে পারে, এই ঘটনায় সেটা দেখিয়েছিল। ঘটনার দিন থেকে আজ পর্যন্ত সময়সীমা ৫ মাস ৯ দিন। আর এই ৫ মাস ৯ দিনের মধ্যে এই মামলায় বয়ে গিয়েছে বহু জল। জুড়েছে রাজনৈতিক বিবাদও। আর আজ এই সব পেরিয়ে হতে চলেছে ‘Rarest of the Rare’ মামলার রায়দান।
রায় কি দেয় সে দিকে নজর থাকবে সকলের। তার আগে ফিরে দেখে নিন সেই ভয়ঙ্কর ঘটনার রাত আর তার পরবর্তী অধ্যায়।
৯ আগস্ট, ২০২৪
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের সেমিনার হলে উদ্ধার হল তরুণী চিকিৎসকের অর্ধনগ্ন দেহ। ঘটনাকে প্রথমে আত্মহত্যার নাম দিতে চাইলেও, অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই বোঝা যায় সেটি ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা। তোলপাড় হয়ে ওঠে কলকাতা।
১০ আগস্ট, ২০২৪
সেদিনই ভোররাতে, অর্থাৎ ১০ আগস্টের ভোরে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ঘটনায় কলকাতা পুলিশ গ্রেফতার করে সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে।
একই সাথে জুনিয়র চিকিৎসকেরা দোষীদের শাস্তির দাবী জানিয়ে শুরু করেন প্রতিবাদ। আরজি করের ভিতরে গড়ে ওঠে ‘অভয়া মঞ্চ’। আর হাসপাতালের এক অন্ধকার, কালো রূপ প্রকাশ্যে চলে আসে গোটা রাজ্যের সামনে।
১৩ আগস্ট, ২০২৪
তরুণীর মা-বাবার অনুরোধে কলকাতা হাইকোর্ট এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়। কলকাতা পুলিশ তদন্তের সব নথি তুলে দেয় সিবিআই-এর হাতে।
১৪ আগস্ট, ২০২৪
আরজি কর মামলার প্রতিবাদে কলকাতা সহ গোটা রাজ্য দেখল অভিনব প্রতিবাদ। এক মেয়ের সম্মানের লড়াইয়ে যে লাখো লাখো মেয়েরা পথে নামতে পারে, তা গোটা বিশ্বকে দেখিয়ে দিল বাংলা। ‘মেয়েদের রাত দখল’ অভিযান যেন আলাদায় রূপ নিল।
তবে যখন এই রকম ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ দেখছে গোটা বিশ্ব, ঠিক সেই সময়ই আরজি করে গিয়ে হামলা চালাল কয়েক হাজার মানুষ। বলা যেতে পারে কার্যত তাণ্ডব চললো হাসপাতাল চত্বরে। দুষ্কৃতীদের আসল টার্গেট ছিল ক্রাইম সিন, ‘দ্য সেমিনার হল’।
১৫ আগস্ট, ২০২৪
সিবিআই-এর অফিসারেরা মামলা হাতে পাওয়ার পর প্রথমবার পা রাখল বিধ্বস্ত আরজি করে।
১৮ আগস্ট, ২০২৪
দেশজুড়ে আলোড়ন ফেলে দেওয়া এই ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করা হল। দেশের তত্কালীন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বিশেষ বেঞ্চে উঠল এই মামলা।
৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
কলকাতা পুলিশের তত্কালীন কমিশনার বিনীত গোয়েলের ইস্তফা চেয়ে লালবাজার অভিযান করলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। কলকাতা পুলিশের তৎকালীন পুলিশ কমিশনারের হাতে জুনিয়র চিকিৎসকেরা তুলে দিয়ে এলেন ‘প্রতীকী মেরুদণ্ড’।
১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
সল্টলেকে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে জুনিয়ার ডাক্তাররা অনির্দিষ্টকাল অবস্থান শুরু করলেন। স্বাস্থ্য ভবনের সম্পূর্ণ বদল চেয়ে রাস্তায় বসলেন তারা। আর তাদের এই প্রতিবাদে তারা পাশে পেলেন অগণিত সাধারণ মানুষকে।
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থান মঞ্চে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অবশ্য এর আগেও নবান্নে ডাক পেয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু সেই দিনও হয়নি বৈঠক। ফলে ১৪ সেপ্টেম্বরের দিন সন্ধ্যাতেও এক বুক আশা নিয়ে কালীঘাটের বাড়িতে যান জুনিয়র চিকিৎসকেরা। কিন্তু সেই দিনও বৈঠক ভেস্তে যায়। কান্না, অভিমান, একরাশ হতাশা নিয়ে স্বাস্থ্য ভবনের সামনের অবস্থান মঞ্চে ফেরেন ৩০ সদস্যের প্রতিনিধি দল। তবে তাক লাগিয়ে ওই দিনই রাতে ধর্ষণ মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের তত্কালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার তত্কালীন ওসি অভিজিত্ মণ্ডল।
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠক অবশেষে সম্পন্ন হল। সেই বৈঠকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, সিপি বিনীত কুমার গোয়েলকে সরিয়ে দেওয়া হবে।
২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থান প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা।
৫ অক্টোবর, ২০২৪
যে ৬ দফা দাবি জুনিয়র চিকিৎসকেরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে রেখেছিলেন, তা পূরণ করা হবে সেই আশ্বাসেই স্বাস্থ্য ভবনের সামনে থেকে অবস্থান বিক্ষোভ তুলে নিয়েছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। কিন্তু সময় পেরলেও তা পূরণ না হওয়ায়, সেই সকল দাবি সহ ১০ দফা দাবি নিয়ে ধর্মতলায় আমরণ অনশন শুরু করলেন জুনিয়র ডাক্তাররা।
৭ অক্টোবর, ২০২৪
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ধর্ষণ খুন মামলায় প্রথম চার্জশিট পেশ করল সিবিআই। চার্জশিটে দেখা গেল, একজনই অভিযুক্ত, তার নাম সঞ্জয় রায়। চার্জশিটে অভিযুক্তের তালিকায় দেখা গেল না সন্দীপ ঘোষ কিংবা অভিজিৎ মণ্ডলের নাম।
২১ অক্টোবর, ২০২৪
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ফের নবান্নে বৈঠক করলেন অনশনরত জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিরা। এরপরে ফের একবার মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে অনশন প্রত্যাহার করা হল।
৪ নভেম্বর, ২০২৪
শুধুমাত্র সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধেই খুন-ধর্ষণ মামলার চার্জ গঠন হল শিয়ালদহ আদালতে। প্রিজন ভ্যান থেকে সঞ্জয় প্রথমবার বিস্ফোরক দাবি করল, ‘আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে’। আর তার পরের দিন থেকে তাঁর কণ্ঠ রোধ করার জন্যে সঞ্জয়কে আদালত চত্বরে আনা হল নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ঘেরাটোপে। তাঁর গলার স্বর চাপা দেওয়ার জন্যে পুলিশকে দেখা গেল ভ্যান বাজাতে, জোরে জোরে হর্ন দিতে।
১১ নভেম্বর, ২০২৪
শুরু হল এই নৃশংস মামলার বিচার প্রক্রিয়া।
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
আরজি কর কাণ্ডে তথ্যপ্রমাণ লোপাট ও বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের মামলায় চার্জশিটই দিতে পারল না সিবিআই। বিনা বিরোধীতায় জামিন পেয়ে গেলেন সন্দীপ ঘোষ ও অভিজিৎ মণ্ডল।
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪
সিবিআই তদন্তে অনাস্থা প্রকাশ করলেন নির্যাতিতার বাবা-মা। তার জন্যে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ পর্যন্ত হলেন তাঁরা।
৯ জানুয়ারি, ২০২৪
১৮ জানুয়ারি রায় ঘোষণার কথা জানাল আদালত।
১৮ জানুয়ারি, ২০২৪
আর আজ সেই উল্লেখযোগ্য দিন, যখন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুন মামলার রায় দিচ্ছে শিয়ালদাহ কোর্ট।