নিজস্ব সংবাদদাতা: কলকাতার অন্যতম বড় পুজোগুলির মধ্যে একটি হল 'হরিদেবপুর নিউ স্পোর্টিং ক্লাব'।
প্রত্যেক বছর ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের থিম নিয়ে হাজির হয় 'হরিদেবপুর নিউ স্পোর্টিং ক্লাব'।
এবছরও তারা হাজির হয়েছে নতুন থিম নিয়ে। তাদের এবছরের থিম 'আদায়'।
এবছর তাদের পুজো ১৮ বছরে পা দিয়েছে। তাদের এবছরের বাজেট ২৫ লক্ষ টাকা।
সমগ্র পরিকল্পনা ও মৃত শিল্পী- কৃশানু পাল। আলোক শিল্পী- আশীষ সাহা। এবছর তাদের এই থিম আপনার মনে আবারও ছাপ ফেলবে বলে আশাবাদী পুজো উদ্যোক্তারা।
এবছর তাদের এই থিমের বিষয়ে এএনএম নিউজকে জানিয়েছেন পুজো উদ্যোক্তারা। তাদের দেওয়া থিম বিস্তারিত রইল-
"বিশ্বের ইতিহাসে যখন যখন কোনো বিশেষ অস্থিরতা তৈরী হয়েছে, প্রতিবাদ বা বক্তব্য ঘোষণার প্রযোজন হয়েছে, অসহায় মানুষ এক নতুন হাতিয়ার অবলম্বন করেছে, মানুষের বক্তব্যের শিখা ক্রমশঃ পরিণত হয়েছে এক নতুন ধারার ধারালো শিল্পে, দেওয়ালে দেওয়ালে বার্তাবহ হয়ে থেকেছে পোস্টার, রাজনীতিতে, প্রতিবাদে, মিছিলে, ঘোষণায়, যাত্রায়, জলসায়, ছোট বড়ো প্রচারে- সর্বত্র তার বিচরণ, জোরালো বক্তব্যের সাথে মানুষের মনন ও কৃষ্টির মিশ্রনে সৃষ্টি হযেছে পোস্টার শিল্প, শিল্পের এক অনন্য ধারাতে পরিণত হয়েছে পোস্টার, যা অদ্ভুতভাবেই শিল্পের কৌলিন্য থেকে বঞ্চিত, সমাজ বা রাজনীতির আঙিনায় যেকোনো পরিস্থিতিতে যেকোনো দাবি জানাতে প্রাথমিক ভাবে তৈরী এই হাতিয়ার তো আসলে নিজেই নিজের মহিমায় ভাস্বর এক নিপুন শিল্প, প্যারি কমিউন হোক বা আমেরিকার ব্ল্যাক লাইফ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে দিল্লির কৃষক আন্দোলন বা বাংলার মুক্তিযুদ্ধ থেকে তেভাগা এবং আরো বহু ক্ষেত্রে পোস্টারের কণ্ঠ গর্জে উঠেছে প্রতিবার, পোস্টারে ছবি আর ভাষার ব্যবহার তাকে নিয়ে গেছে এক অন্য উৎকর্ষতায়. যুগ যুগ ধরে বহু বরেন্য শিল্পীরা পোস্টার তৈরী করেছেন বিভিন্ন সময়, কিন্তু ব্যবহারের পর তাঁর প্রায় সবটাই অযত্নে ফেলে দেওয়া হয়. শিল্পকলার ইতিহাস তাকে সেভাবে জায়গা দেয়নি, তাই দলিত পোস্টেরকে ব্রাহ্মণ্যবাদী প্রতিষ্ঠানিকতার বাইরে গিয়ে খুঁজে নিতে হয় নিজের জায়গা, পোস্টার এক যৌথশিল্প, অঙ্কনশিল্পী, অক্ষরশিল্পী, বিন্যাস শিল্পী, মুদ্রনশিল্পী- এদের সবার সমবেত সৃষ্টির সমষ্টি হয় পোস্টার, পোস্টারে চিত্রিত হয় কোনো এক বিশেষ সময়ের এবং অঞ্চলের সামগ্রিক সামাজিক বা রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সমাজকে প্রশ্ন করতে শেখায়, প্রতিষ্ঠানের স্বপক্ষে বা বিপক্ষে সরাসরি ঘোষণা করতে পারে পোস্টার, কিন্তু সমাজের স্তম্ভের দন্তকে নাড়িয়ে দিতে পারে যে পোস্টার তাঁর শেষ হয় অযত্নে, প্রয়োজন শেষে তাকে আর সংরক্ষণের কোনো উপায় সেভাবে নেই বললেই চলে, দুর্গা পুজো শিল্পের আঙ্গিকও অনেকটা সেরকমই, পুজোর পর প্রতিবছর সরিয়ে নিতে হয় শিল্পের সমস্ত নিদর্শন, বহু শিল্পীর দীর্ঘদিনের প্রয়াসে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে যে শিল্প, পুজোর অনতিদূরেই তা বিলীন হয়ে যায় স্মৃতির দখলে, প্রতিমা বিসর্জন হয়, মন্ডপ খুলে ফেলা হয়. পটু-অপটু হাতে গড়া বহু ছোট বড়ো সৃষ্টি অসংরক্ষিত হয়ে হারিয়ে যায়, দুর্গাপুজোর প্রেক্ষাপটে তাই ফেলে দেওয়া এই পোস্টারকেই ফিরিয়ে আনার এক সামান্য প্রচেষ্টায় এবার তৈরী হবে মন্ডপ ও পুজোর মূলভাবনা, বাংলার শিল্প, সমাজ বা রাজনৈতিক রোমান্টিসিজমের যুগে দেওয়ালে দেওয়ালে পোস্টারের যে রূপ দেখার সুযোগ আমরা পেয়েছি ফেলে আসা সময়ে, আজ তা অনেকটাই মলিন, যদিও বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে চতুর্দিকে সমাজ আর রাজনীতির জ্বলন্ত সময়ে পোস্টার আজ ভীষনই প্রাসঙ্গিক, দুর্গাপুজোর মাধ্যমে পোস্টারের আবেদন আর মুন্সীয়ানাকে মানুষের দরবারে পৌঁছে দেওয়ার বহুদফা দাবি "আদায়" করার উদ্দেশ্যে আমাদের এই বছরের প্রয়াস, মণ্ডপের গড়ন ও দুর্গার আদলে দর্শকমন আবার একবার মুখোমুখি হবে পোস্টার শিল্পের সাথে"।