হাবিবুর রহমান, ঢাকা: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে গভীরভাবে কাজ করতে আগ্রহী ভারত। দিল্লি আশা করছে, দুই নিকট প্রতিবেশীর সম্পর্ক একটা ইতিবাচক এবং গঠনমূলক সম্পর্কের দিকে এগিয়ে যাবে। একই সঙ্গে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে উদ্বেগের কথাও জানিয়েছে দেশটি।
সোমবার বাংলাদেশের বিদেশ সচিব জসীমউদ্দিন এবং বিদেশ উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠকের পর এমনটাই বললেন ঢাকা সফররত ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি। ভারতের বিদেশ সচিব বলেন, 'বাংলাদেশের বিদেশ সচিব জসীম উদ্দিনের আমন্ত্রণে আমি ঢাকায় এসেছি। অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মুহূর্তে আমি ঢাকায় এসেছি বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে আলোচনা এগিয়ে নেওয়ার জন্য। এ বছর আগস্টে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে আমাদের উভয় দেশের নেতাদের মধ্যে প্রথম কথা হয়েছে। তাদের মধ্যে টেলিফোন আলাপ হয়েছে। নিউইয়র্কে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে'।
বিক্রম মিশ্রি বলেন, 'আমার এ সফর তারই অংশ। নতুন সরকারের সঙ্গে এটা প্রথম ফরেন সচিব মিটিং। আজকের এই আলোচনা আমাদের উভয়পক্ষকে এই সুযোগটা করে দিয়েছে। আমাদের মধ্যে খোলামেলা এবং গঠনমূলক মতবিনিময় হয়েছে। আমাদের আকাঙ্ক্ষা হলো-ইতিবাচক, গঠনমূলক এবং পারস্পরিক ও লাভজনক সম্পর্ক, যেটা বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে আমরা অতীতে দেখেছি ও আমরা ভবিষ্যতেও এটা দেখতে চাই'।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক উভয় দেশের মানুষ কেন্দ্রিক হবে জানিয়ে মিশ্রি বলেন, 'এই সম্পর্ক হবে মানুষকেন্দ্রিক। এটা উভয় দেশের জনগণের উপকারে আসবে এবং এর প্রতিফলন আমাদের প্রাত্যহিক ঘটনার মধ্যে পাচ্ছি। যার মধ্যে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ, জল, এনার্জি, উন্নয়ন সহযোগিতা, কনস্যুলার সহযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক যোগাযোগ রয়েছে। এই বিষয়গুলোর ওপর আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে হবে'।
অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে আকাঙ্ক্ষার কথা তুলে ধরেন ভারতের বিদেশ সচিব। তিনি বলেন, 'ভারতের আকাঙ্ক্ষা হলো অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে গভীরভাবে কাজ করা। একইসঙ্গে আমরা সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি আলোচনা করেছি। সংখ্যালঘু ইস্যুতে আমি আমাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছি। সংখ্যালঘুর বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বলেছে, বিষয়টি দেখবে'।
বিক্রম মিশ্রি বলেন, 'সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দুই দেশের মধ্যে কিছু দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো নিয়েও আমরা আলোচনা করেছি। ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক এবং কূটনৈতিক বিষয়ে আক্রমণের বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমরা সার্বিকভাবে উভয়পক্ষের মধ্যে গঠনমূলক মনোভাব চাই। অপেক্ষায় আছি, আমাদের সম্পর্ক একটা ইতিবাচক এবং গঠনমুলক সম্পর্কের দিকে এগিয়ে যাবে'। সংক্ষিপ্ত সফরে আজ সোমবার সকালে ঢাকায় আসেন বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি। তিনি ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁঁছান। রাজনৈতিক দূরত্ব কমানোর লক্ষ্যে ঢাকায় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক করেন বাংলাদেশ ও ভারত। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সচিব পর্যায়ের বৈঠক শুরুর আগে একান্তে কিছু সময় আলাপ-আলোচনা করেন বাংলাদেশর বিদেশ সচিব মো. জসীম উদ্দিন ও ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি।বৈঠকে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
এরপর বিকেল ৪টা ১৮ মিনিটে বাংলাদেশর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রবেশ করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি। ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের আগমন ঘিরে আগে থেকেই পুরো এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। সীমিত করা হয় যান চলাচল। একই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রবেশের প্রতিটি সড়কেই বাড়ানো হয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদলের পর এই প্রথম দিল্লির উচ্চ পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তা ঢাকায় এলেন। আর ভারতের বিদেশ সচিব হওয়ার পর মিশ্রির প্রথম ঢাকা সফরও এটি। সোমবার রাতেই বিক্রম মিশ্রির দিল্লি ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে।