নিজস্ব সংবাদদাতা : আজ মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট একটি ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করতে চলেছে। এই রায়ে ঠিক করা হবে, আইনত “মহিলা” বলতে কাকে বোঝানো হবে। রায়টি শুধুমাত্র স্কটল্যান্ড নয়, গোটা যুক্তরাজ্য—ইংল্যান্ড ও ওয়েলসেও—নারী অধিকার, আইনগত সুরক্ষা ও লিঙ্গভিত্তিক নীতিমালার উপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
/anm-bengali/media/media_files/2025/04/16/1000188568-220800.webp)
২০১৮ সালে স্কটিশ পার্লামেন্ট একটি বিল পাশ করে, যেখানে সরকারি প্রতিষ্ঠানের বোর্ডে লিঙ্গ-ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য বিশেষ নিয়ম চালু করা হয়। সেই আইনে ট্রান্সজেন্ডার নারীদেরও “মহিলা” হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে 'For Women Scotland' নামের একটি সংগঠন আদালতের দ্বারস্থ হয়। সংগঠনটির দাবি, জন্মগতভাবে নারী না হলে, সেই ব্যক্তিকে নারী হিসেবে গণ্য করা উচিত নয়। তাদের মতে, "মহিলা" শব্দের অর্থ শুধুই জীববৈজ্ঞানিকভাবে নির্ধারিত, অপরিবর্তনীয় একটি অবস্থা।
স্কটিশ সরকার এই মামলায় জোর দিয়ে বলেছে, যাঁরা Gender Recognition Certificate (GRC) পেয়েছেন, তাঁরা আইনত নিজেদের নতুন লিঙ্গে স্বীকৃতি পেয়েছেন এবং সেই অনুযায়ী সমস্ত অধিকারও পাওয়ার যোগ্য। সরকারের আইনজীবী রুথ ক্রফোর্ড কিউসি আদালতে বলেন, একজন ব্যক্তি যদি আইনত নারী হিসেবে স্বীকৃতি পান, তবে তিনিও নারী-সুরক্ষার অধিকার পাওয়ার যোগ্য। অন্যদিকে For Women Scotland-এর পক্ষে আইনজীবী এইডেন ও’নিল কিউসি আদালতে বলেন, “নারী” ও “পুরুষ” শব্দগুলোর সাধারণ ও বাস্তব অর্থ হওয়া উচিত—এগুলো কোনো আইন দিয়ে পাল্টানো যায় না।
এই রায়ের ফলে বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রভাব পড়তে পারে—যেমন হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ড, নারী-সংরক্ষিত আশ্রয়কেন্দ্র, মহিলা কারাগার, খেলাধুলায় অংশগ্রহণ, মাতৃত্বকালীন ছুটি, এমনকি কর্মক্ষেত্রে সমান বেতনের দাবি পর্যন্ত। ট্রান্সজেন্ডারদের একাংশ আশঙ্কা করছেন, এই রায় যদি তাঁদের বিরোধিতায় যায়, তাহলে তাঁদের আইনি সুরক্ষা ক্ষুন্ন হতে পারে। মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সতর্ক করে বলেছে, এই রায় ভবিষ্যতে আরও সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর অধিকারের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এই পুরো বিতর্কের পেছনে রয়েছে আরও একটি বড় রাজনৈতিক সংঘাত। ২০২২ সালে স্কটিশ পার্লামেন্ট এমন একটি আইন পাশ করেছিল, যাতে GRC পাওয়া সহজ হতো। কিন্তু যুক্তরাজ্য সরকার সেই আইন আটকে দেয় এবং পরবর্তীতে তা বাতিল করা হয়। পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে ওঠে, আর শেষ পর্যন্ত বিষয়টি গিয়ে পৌঁছায় সুপ্রিম কোর্টে।
/anm-bengali/media/media_files/2025/04/16/1000188569-705030.webp)
আজ সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে আদালতের রায় ঘোষণার কথা রয়েছে। গোটা ব্রিটেনের দৃষ্টি এখন লন্ডনের সুপ্রিম কোর্টের দিকে। এই রায় শুধুই আইনি সংজ্ঞা নির্ধারণের বিষয় নয়, বরং সমাজে লিঙ্গ পরিচয় ও অধিকার নিয়ে চলা দীর্ঘ বিতর্কে একটি নতুন দিকনির্দেশনা দিতে চলেছে।