/anm-bengali/media/media_files/2025/02/09/tvFojOYSXozpcpimX2n3.jpg)
Uk
জুয়েল রাজ : The UK-Bangladesh Catalysts of Commerce and Industry (UKBCCI) ব্রিটিশ বাংলাদেশী বংশদ্ভুত ব্যবসায়ীদের একটি সংগঠন। এই সংগঠনের ২২ জনের একটি প্রতিনিধি দলের সদস্য হয়ে এবং তাদের আর্থিক সহায়তায় মূলত সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরে গিয়েছিলেন ব্রিটিশ বাংলাদেশি লেবার পার্টির বংশোদ্ভূত এম পি রূপা হক। সেখানে তিনি বর্তমান ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তী কালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা সহ অন্যান্য উপদেষ্টাদের সাথে ও সাক্ষাত করেন। ব্যবসা বাণিজ্য সহ বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে ও তিনি আলোচনা করেন। জুলাই আগস্টের আন্দোলনে যারা অংশ নিয়েছিল সেই সব আন্দোলনকারী ছাত্র এবং লন্ডনে যিনি বিএনপি জামায়াতের নানা রকম সংস্কার সভা সমাবেশ আয়োজন করতেন। শেখ হাসিনা সরকারের পট পরিবর্তনের পর, লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশনে প্রবেশ করে , কোন ধরণের এখতিয়ার,অনুমতি বা সরকারের নির্দেশনা ছাড়া ,সাংবিধানিক ভাবে গৃহিত বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি নামিয়ে ফেলেছিলেন তেমন একজন নেতার সাথে, একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সাথে সাক্ষাত করেন। এবং বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা ও দখল করা হয়েছে , প্রবাসী সেই নেতা প্রতিষ্ঠানটির দখল নিয়েছেন বলে জানা গেছে। যিনি দীর্ঘদিন ধরেই রূপা হকের আমন্ত্রণে লন্ডনে নানা সেমিনার বা রাজনৈতিক সভা করতেন।
সেই সফর শেষে গত ১৬ জানুয়ারী ব্রিটেনের সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে তিনি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন ও মানবাধিকার লংঘন নিয়ে এপিপিজি'র বাংলাদেশ বিষয়ক প্রতিবেদন নিয়ে তিনি একে এক তরফা ভারতীয় প্রভাবে প্রকাশিত প্রতিবেদন বলে মন্তব্য করেন। এবং এটি প্রচার বন্ধ করার ও অনুরোধ জানান। এবং
কিন্ত রূপা হক কোথাও কোন নির্যাতনের শিকার আওয়ামী লীগ কিংবা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কোন সংগঠন অথবা ভুক্তভোগী কোন পরিবারের সাথে সাক্ষাত করেছেন বা তাদের বক্তব্য শুনেছেন বলে কোথাও কোন উল্লেখ বা সংবাদ পরিলক্ষিত হয় নাই। তিনি সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টার মত ভারত বিদ্বেষ তথ্যই ,ব্রিটেনের পার্লামেন্টে এসে শেখা বুলির মত পরিবেশন করলেন।
অথচ বাংলাদেশে যখন মুক্তিযুদ্ধের যাবতীয় স্মৃতি মুছে দেয়া হচ্ছে, জাতির পিতার বাসভবন বুলডোজার দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে, একের পর এক জাতীয় নেতাদের ম্যুরাল , বসত বাড়ি লুটপাট ,অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে গণ গ্রেফতার হচ্ছে ,হত্যা হচ্ছে, মানবতা ভূলন্ঠিত হচ্ছে, রূপা হক একটি বাক্য ও বলেন নি কোথাও।
তারমানে মূলত রূপা হকের সেই বাংলাদেশ সফরটি ছিল উদ্দেশ্যমূলক। রূপা হক কোন এক অজানা কারণে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও আওয়ামী বিরোধী বলয়ের সাথে সখ্যতা বজায় রেখে চলছেন দীর্ঘদিন ধরে। যার কয়েকটি প্রকাশিত উদাহরণ যদি দেখি,
এলসিএইচআর গত ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ব্রিটিশ আইনসভা হাউজ অব কমন্সে 'ব্রিটেন অ্যান্ড বাংলাদেশ' শিরোনামের একটি প্রকাশনাকে কেন্দ্র করে এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। সেই অনুষ্ঠান নিয়ে তখন রূপা হকের বক্তব্য নিয়ে ‘নেত্র’ নামের ওয়েব পোর্টালে প্রকাশিত হয়।আরেকটি এলসিএইচআর সদস্য এবং লন্ডনভিত্তিক সাংবাদিক স্টিফেন দেলাহুন্টির কলাম। সেটিও প্রকাশিত হয়েছে ওই পোর্টালে, যার ইংরেজি বিভাগের সম্পাদক ডেভিড বার্গম্যান। যিনি বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামের প্রতিনিধি হিসাবে পরিচিত।অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেছিলেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ও চেয়ার ম্যাথিউ টার্নার। সেখানে আরও বক্তব্য রাখেন ব্র্যাক ইউকের বোর্ড সদস্য ও গ্রেটার লন্ডন অ্যাসেম্বলির সাবেক লেবার সদস্য মুরাদ কোরেশী, সামাজিক নীতিমালা ও ত্রাণ বিশেষজ্ঞ হালিমা বেগম, ফটোসাংবাদিক শহীদুল আলমের বোন কাজী নাজমা করিম, ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিভাগের শিক্ষক রুমানা হাশেম এবং ডেভিড বার্গম্যান।এই নামগুলোই এই অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ধারণা পেতে যথেষ্ট। যাদের অধিকাংশ প্রকাশ্যেই বাংলাদেশের বর্তমান পট পরিবর্তনের কুশীলব ছিলেন ।
সেই অনুষ্ঠানের সূচনা বক্তব্য ছিল রুপা হকের। তিনি আওয়ামী লীগের শাসনাধীন বাংলাদেশকে ‘দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র’ (rogue state) বা কাছাকাছি [কিছুতে পরিণত হয়েছে] বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, মানবাধিকারের ক্ষেত্রে কাশ্মির ও ফিলিস্তিন সংকটের কথা হয়তো বেশি আলোচিত হয়। কিন্তু [বাংলাদেশের] মানবাধিকারের এই ট্র্যাজেডিকে আমরা অগ্রাহ্য করলে আমাদেরই বিপদ হবে।’ রুপা হক ২০১৭ সালে ব্রিটিশ এমপি হিসেবে ঢাকা সফরকালে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। জাতির পিতার প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শনের সাজা দেওয়ার সমালোচনা করেছেন।
২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে বছরব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন নিয়ে রুপা হক বলেন, "আমি এই মার্চে এখানে হাউজ অব কমন্সের একটি ডাইনিং হলে জাতির পিতার জন্মদিন উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পেয়েছি। আমি শুধু এটুকুই বলবো, আমি সভার উদ্যোক্তাদের এই বর্ণনা (ন্যারেটিভ) মানি না যে, এই লোকটি জাতির পিতা।"
সভায় রুপা আরও বলেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে একসময় ক্ষমতার পালাবদল ঘটতো। 'কিন্তু এখন একদিকেই দেশটি আটকে আছে, কেননা অপর পক্ষের সবাইকে জেলে ঢুকানো হয়েছে। ঢাকার জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রাখার সমালোচনা করেন রুপা হক।
অথচ বাস্তবতা হলো নাম পরিবর্তনের এই নোংরা রাজনীতি বিএনপি ক্ষমতায় এসে শুরু করেছিল প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠকারী এমএ হান্নানের নামে করা চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের নাম শাহ আমানত, বঙ্গবন্ধু নভো থিয়েটারকে ভাসানী নভো থিয়েটার এবং বঙ্গবন্ধু কনভেনশন হলকে চীন মৈত্রী সম্মেলন নামকরণ বিএনপিই করেছিল।
আবার গত বছর ২৫ জুলাই যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে রুপা হক তার বক্তব্যে বলেন, ‘সম্প্রতি বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে রোম, প্যারিস, ম্যানচেস্টার, লন্ডনের ট্রাফালগার স্কয়ারে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। বাংলাদেশে শত শত সাধারণ ছাত্র ও বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। বাংলাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা এখন পর্যন্ত সঠিক সংখ্যাটি জানতে পারিনি। আমরা যুক্তরাজ্য সরকার আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে একটি জরুরি সরকারি বিবৃতি দিতে পারি কি? এসব পরিস্থিতিতে আমাদের জায়গা স্পষ্ট করা জরুরি, যা একটি ঐতিহাসিক ও অনন্য ভুমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।
এরপর জঙ্গিদের হাত থেকে জীবন বাঁচাতে যখন দেশটির নির্বাচিত সরকার প্রধান শেখ হাসিনাকে গণভবন ছাড়তে বাধ্য করা হয় ,পরবরর্তীতে,৫ আগস্টের পরে শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণের সম্ভাবনা নিয়ে গুঞ্জনের মধ্যে দেশটির ব্রিটিশ-বাংলাদেশি সংসদ সদস্য রুপা হক বলেছেন, তার সরকারের এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সমীচীন হবে না।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য স্ট্যান্ডার্ডে এক নিবন্ধে তিনি তার মত তুলে ধরেন। লেবার পার্টির সংসদ সদস্য রুপা লিখেছেন, বাংলাদেশ কতটা 'বিশৃঙ্খল' ছিল তা নিয়ে গেয়েছিলেন জর্জ হ্যারিসন। গত সপ্তাহে তিনি আবার সঠিক প্রমাণিত হলেন। সাদ্দাম হোসেনের ক্ষমতাচ্যুতির মত ঘটনার প্রতিফলন দেখা গেল, জাতির পিতার ভাস্কর্য গুঁড়িয়ে দেওয়া হল, কুশপুতুল পোড়ানো হল, যা ঢাকা থেকে টাওয়ার হ্যামলেট পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল।
ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার পতনকে তিয়ানআনমেন স্কয়ারের সঙ্গে তুলনা করে রুপা হক লিখেছেন, 'স্বৈরাচারী' কন্যা শেখ হাসিনা দেশটির আয়ুষ্কালের বড় অংশই শাসন করেছেন (সর্বত্র তার বাবার ভাস্কর্য ও চিত্রকর্ম স্থাপন নিশ্চিত করে)।
রুপা হক লিখেছেন, অধিকাংশ মানুষ মনে করে শেখ হাসিনা শুধু শাড়ি পরা একজন সপ্ততিপরবৃদ্ধাই নন, 'বর্বর' শাসকও। সারাদেশে জ্বালাও-পোড়াওয়ের মধ্যে তিনি ভারতে নির্বাসিত হন।
রুপা হক লিখেছেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, তার ব্যাপক অজনপ্রিয় শাসনামল ও অভিবাসনসংক্রান্ত রাজনৈতিক স্পর্শকাতরতার নিরিখে যুক্তরাজ্য সরকারের এমন একজনকে আশ্রয় দেওয়া সমীচীন হবে না, যার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারের দাবি রয়েছে। অনেক বাংলাদেশি মনে করে, তাকে দেশে ফিরিয়ে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত।
শেষে রুপা হক লিখেছেন, আমার বাংলাদেশি ভাই-বোনদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। সরকার নিয়ে কণ্ঠ তুললেই নিপীড়নের শিকার হওয়ার ভয়ের সংস্কৃতি আর নেই। তবে ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে: আশা করি সেখানে গণতন্ত্র ফিরবে। তবে পতিত শিবির বলছে, তারা স্থিতিশীলতা এনে দিয়েছিল।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নতুন বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের অবসান ঘটবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ব্রিটিশ এমপি রূপা হক। বুধবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় মেডিকেল কলেজ ফর উইমেন এন্ড হসপিটালে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এ সময় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই ব্রিটিশ এমপি মন্তব্য করেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বড় দুই দল ছাড়া অন্যরা কিছু করতে পারবে না, এমনটি ভাবা ঠিক নয়।
রূপা হক বলেন, 'পারিবারিকভাবে গড়ে ওঠা বড় দুই রাজনৈতিক দল যা করেছে, তা অন্য আর কেউ করতে পারবে না, এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই। তরুণরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ করে দিয়েছে, এতে দক্ষ ও মেধাবীদের এগিয়ে আসতে হবে। ব্রিটেনের একজন সংসদ সদস্য হিসেবে আমি আশা করি অন্তর্বর্তী সরকার দেশে একটি সুন্দর নির্বাচন আয়োজন করবে।'
ব্রিটিশ এমপি রূপা জানান, নতুন বাংলাদেশে দক্ষ ও মেধাবীদের সুযোগ দিতে হবে। এসময় শুধু পোশাকশিল্পের ওপর নির্ভর না করে প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো খাতে সরকারকে কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি।
রূপা হক আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় জানতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। জবাবে ড. ইউনূস ২০২৫ সালের ডিসেম্বর অথবা ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে একটি সুষ্ঠ, গ্রহণযোগ্য ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তবে এটা নির্ভর করছে জনগণ কতটুকু সংস্কার প্রত্যাশা করেন তার ওপর।
সাংসদ রূপা হকের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফর উল্লেখযোগ্য বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলি তাকে দেশের হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন উপেক্ষা করার অভিযোগ করেছে। ৪ জানুয়ারী ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত এই সফর তার উদ্দেশ্য এবং নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
তার সফরের সময়, এমপি হক বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে দেখা করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দ্বারা আয়োজিত একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও যোগ দেন, যেখানে তিনি ছাত্র নেতাদের সাথে মতবিনিময় করেন। বিবিসি বাংলার সম্পাদকের সাথে এক সাক্ষাৎকারে, এমপি হক স্বীকার করেন যে তিনি ২০২৪ সালের মে মাসে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন এবং স্বীকার করেন যে "হিন্দুরা সমস্যায় রয়েছে।" তবে, তিনি এই বিষয়গুলিকে কেবল রাজনৈতিক কারণে দায়ী করেছেন এবং সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণে ধর্মীয় উগ্রবাদের ভূমিকা স্বীকার করেননি।
বিএইচবিসিইউসি এবং বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদ সহ সংখ্যালঘু সংগঠনগুলি এমপি হকের কর্মকাণ্ড এবং বক্তব্যের উপর গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে খোলা চিঠি লিখেছে। তারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এবং বাংলাদেশে শান্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য একটি নিরপেক্ষ তদন্তের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে।
যুক্তরাজ্যে ফিরে আসার পর, এমপি হক তার অফিসিয়াল X অ্যাকাউন্টে (পূর্বে টুইটারে) পোস্ট করেছেন: "... স্পষ্টতই @bbcbangla তথ্য যাচাই করেছে, সংখ্যালঘুদের সম্পর্কে অনেক ভুল তথ্য..."
এই বিবৃতি বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ (BHBCUC) এবং বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদের কাছ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছে, তারা উল্লেখ করেছে যে এমপি হক সম্প্রদায়ের নেতাদের, ভুক্তভোগীদের সাথে দেখা করেননি, অথবা সুনামগঞ্জ, বাগেরহাট এবং চট্টগ্রামের মতো ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেননি। তিনি সংগঠনগুলির দাবি মিথ্যা অভিযোগে বর্তমানে আটক থাকা সম্প্রদায়ের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের সাথেও দেখা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। সমালোচকরা যুক্তি দেন যে এমপি হকের প্রকাশ্য মন্তব্য, যা সংখ্যালঘুদের দুর্দশার বিষয়টিকে অবমূল্যায়ন করেছে, তার মর্যাদার কারও জন্য অনুপযুক্ত।
INSIGHT UK-এর একটি নিবন্ধ ভ্রমণের সময় তার মিথস্ক্রিয়া, বিশেষ করে মোহাম্মদ ইউনূস এবং জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সাথে তার গোপন বৈঠক, ইসলামী চরমপন্থার সাথে জড়িত একটি সংগঠনের সাথে তার গোপন বৈঠক সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। নিবন্ধটি ক্ষতিগ্রস্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সাথে তার যোগাযোগের অভাবকেও তুলে ধরেছে, তার সফরের পিছনের সত্য উদঘাটনের জন্য জরুরি, নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
এই প্রথমবার নয় যে এমপি হক সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছেন। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে, তৎকালীন চ্যান্সেলর কোয়াসি কোয়ার্টেং সম্পর্কে বর্ণবাদী মন্তব্য করার পর তাকে লেবার পার্টি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল, তাকে "অতিরিক্ত কৃষ্ণাঙ্গ" বলে উল্লেখ করে। যদিও পরে তাকে পুনর্বহাল করা হয়েছিল, তার কর্মকাণ্ড তার জাতিগত সততা এবং বিচারবুদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বিএইচবিসিইউসি এবং বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদ সহ সংখ্যালঘু সংগঠনগুলি এমপি হকের কর্মকাণ্ড এবং বক্তব্যের উপর গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে খোলা চিঠি লিখেছে। তারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এবং বাংলাদেশে শান্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য একটি নিরপেক্ষ তদন্তের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে।
এমপি হকের সফরকে ঘিরে বিতর্ক বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের মুখোমুখি চ্যালেঞ্জগুলিকে তুলে ধরে, যারা সহিংসতা, বৈষম্য এবং পদ্ধতিগত অবহেলা সহ্য করে চলেছে। পর্যবেক্ষক এবং কর্মীরা আশা করেন যে পরিস্থিতি আরও বেশি বিশ্বব্যাপী সচেতনতা এবং পদক্ষেপের জন্য চাপ আনবে। ৫ই অগাস্ট থেকে ২২শে অক্টোবর পর্যন্ত দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৮৮টি মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, "সংখ্যালঘু নির্যাতনের এসব মামলায় ৭০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।"
শফিকুল আলম বলেন, "সংখ্যালঘু নির্যাতন হিসেবে সে সব উল্লেখ করা হলেও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এসব হামলার বেশিরভাগই রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত কারণে। কিন্তু গ্রেপ্তার ও বিচারের ক্ষেত্রে কারও রাজনৈতিক পরিচয় কী, তা বিবেচনা করা হবে না৷"
সরকারের প্রতিনিধি স্বীকার করেছেন সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়েছ রাজনৈতিক কারণে অথচ রূপা হক কোন নির্যাতনের তথ্যই জানলেন না।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের পরিসংখ্যানে ২০১০টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করা হয়েছে। সমকালের অনুসন্ধানে ২৯৬টি অভিযোগের মধ্যে ১৩৫টির সত্যতা মিলেছে। তবে তালিকায় নাম আসেনি এমন অনেক হিন্দু পরিবার নির্যাতিত হয়েছে। হামলাকারীদের অধিকাংশ বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিতে যুক্ত বলে পরিচিত। আবার ৫ আগস্ট বিজয় মিছিল থেকেও হামলা হয়।
ডিসেম্ভর পর্যন্ত পুলিশের প্ক্ষ থেকে বলা হয়েছে , ১৭৬৯টি অভিযোগের মধ্যে পুলিশ এখন পর্যন্ত ৬২টি মামলার প্রাথমিক তথ্য নির্ধারণ করে মামলা দায়ের করেছে। তদন্তের ভিত্তিতে অন্তত ৩৫ জন অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যা ফেব্রুয়ারিতে এসে ২০০০ পেরিয়ে গেছে। তদন্তে দেখা গেছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হামলাগুলো সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল না— বরং সেগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।
পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে, ১২৩৪টি ঘটনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ২০টি ঘটনা সাম্প্রদায়িক ছিল। এরপরেও রূপা হক বাংলাদেশ সফর শেষে ব্রিটেনে ফিরে এসে পার্লামেন্টে বললেন এপিপিজির প্রতিবেদনটি একপাক্ষিক ।
কিন্ত রূপা হক কি আয়নায় নিজেকে দেখবেন তিনি নিজে নিরপেক্ষ কী না। তিনি যে দীর্ঘদিন ধরে জামায়াত বিএনপির বিভিন্ন সংগঠনের সাথে ব্রিটেনে নিয়মিত বৈঠক করেছেন তার কি কোন জবাব দেবেন? সর্বশেষ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত সংগঠন জামায়াত ইসলাম বাংলাদেশের আমির শফিকুর রহমানের সাথে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সভায় তার অংশ নেয়া সব চেয়ে বড় প্রমাণ।
ইতোমধ্যে রূপা হকের পদত্যাগের দাবীতে লন্ডনে বিক্ষোভ করছেন বাংলাদেশী ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত নাগরিকবৃন্দ।তারা সেখানে বলেন,বহু সংস্কৃতি ও গণতন্ত্রের তীর্থস্থান মহান ব্রিটেনের একজন সংসদ সদস্য বাংলাদেশের ভূক্তিভোগী নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের পাশে না গিয়ে কোন ধরণের তথ্য উপাত্ত ছাড়া শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন সরকারের বিভিন্ন প্রতিনিধিদের দেয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে পুরো প্রতিবেদনটি স্থগিত করার জন্য বক্তব্য রাখেন।
অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সংখ্যালঘু নির্যাতন হত্যা ঘরবাড়ি পুড়ানো লুটপাটের দায় স্বীকার করে অনেক আসামী গ্রেফতারের কথা ও উল্লেখ করেছেন।
বাংলাদেশের নির্যাতিত নিপীড়িত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সুবিচারের আশা করছিল। যুক্তরাজ্য সব সময় মানবতার পক্ষে ,নির্যাতিত মানুষের পক্ষে দাঁড়ায়। কিন্তি এপিপিজির প্রতিবেদন স্থগিত হওয়ার কারণে সেই সম্ভাবনার পথ রুদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। রূপা হক বরং মানবতা বিরোধী ইসলামী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর প্রতি পক্ষপাত মূলক অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশ নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের প্রতি অমানবিক আচরণ করেছেন।