অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ নিশ্চিতে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ জানতে চেয়ে চিঠি

অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ জানতে চেয়ে চিঠি।

author-image
Adrita
New Update
দ

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাংলাদেশঃ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি বিশৃঙ্খল, আক্রমণাত্মক ও নৈরাজ্যবাদী ঘটনায় সরকারকে তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। এছাড়া অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ নিশ্চিতে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ জানতে চেয়েছেন তারা। শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক খোলা চিঠিতে এই আহ্বান জানানো হয়। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস বরারবর লিখিত চিঠির অনুলিপি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা, ধর্ম উপদেষ্টা ও প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা বরাবর পাঠানো হবে। ওই সংবাদ সম্মেলনে চিঠিটি পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরিন।

চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বলা হয়, ' আমরা বিশেষ কোনো মার্কার সরকারের পক্ষে-বিপক্ষে ছিলাম না, এখনও নেই। আমরা গণতন্ত্র ও ন্যায্যতার জন্য হাজির আছি। ' চিঠিতে আরও বলা হয়, অভ্যুত্থানের মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বাংলাদেশের নানা প্রান্তে বিভিন্ন ধরনের অসহিষ্ণু, আক্রমণাত্মক ও নৈরাজ্যবাদী জমায়েত আমরা লক্ষ্য করছি। সেসব জমায়েত থেকে অপছন্দের গোষ্ঠী ও দলের বিরুদ্ধে কেবল হিংসাত্মক কথাবার্তাই বলা হচ্ছে না, ক্ষেত্রবিশেষে সেসব মানুষের ওপর হামলাও চালানো হচ্ছে। তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সঙ্ঘবদ্ধ হিংস্রতায় নিহত হয়েছেন তিনজন। অপরাধীদের ধরতে গিয়ে একজন সেনা কর্মকর্তা হামলায় নিহত হয়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে ভিন্ন জাতিসত্তার মানুষকে। রাস্তায় ও পর্যটন অঞ্চলে নারীদের ওপর হামলা, নিগ্রহ এবং চরম হেনস্তা করা হয়েছে। শ্রমিকদের নিগৃহীত করেছেন মালিকপক্ষের গুণ্ডারা। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল ও দপ্তরে ছোট ছোট অজস্র হিংস্রতার ঘটনা ঘটেই চলেছে। মাজার, মন্দির, শিল্প-স্থাপনা ভাঙচুর থেকে শুরু করে বাউল ও আহমেদিয়াদের ওপরও আক্রমণ হয়েছে। '

বাংলাদেশে এমন খণ্ড খণ্ড বিশৃঙ্খলতার ঘটনা দীর্ঘদিন সমাজের মধ্যকার নানাবিধ অমীমাংসা ও গণতন্ত্রহীনতার সঙ্গে সম্পর্কিত বলে মনে করে শিক্ষক নেটওয়ার্ক ওই চিঠিতে বলেন। এভাবে চলতে থাকলে নাগরিকদের নিরাপত্তাবোধের অভাব তীব্রতর হবে এবং সংকট উত্তরণে সরকারকে আরও বেগ পেতে হবে। ওই চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, বর্তমান সরকারের নির্মোহ ভূমিকা পালন ও আশু পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। কাজেই, অতি উৎসাহী গোষ্ঠীগুলোর অসহিষ্ণুতা প্রশমণের জন্য যায়। এসব ঘৃণামূলক বক্তব্য প্রচার করছেন এবং বিভিন্ন পরিচয় ও সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর বা নাগরিকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করছেন তাদের থামাতে হবে।

চিঠির শেষাংশ বলা হয়, সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট ঘোষণা আসতে হবে যে তারা আসলে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ কীভাবে নিশ্চিত করবেন এবং অন্তর্ভুক্তি বিষয়ে তাদের অবস্থান তাদের নীতিসমূহের মাধ্যমে কী করে স্পষ্ট করবেন। সহিংস জমায়েতের সংঘবদ্ধ হিংস্রতা থেকে ভিন্ন মত বা সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকার রক্ষায় সরকার কী কী পদক্ষেপ নেবেন তা সুস্পষ্ট করতে হবে। কবে নাগাদ প্রধান উপদেষ্টা বরাবর এই চিঠি পাঠানো হবে জানতে চাইলে অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন বলেন, আমরা চেষ্টা করব দু-একদিনের মধ্যেই এই চিঠি পাঠানো।

এ সময় সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক তাসনীম সিরাজ মাহবুব, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজলী শেহরীন ইসলাম, অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাইদ ফেরদৌস, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক নাছির আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।