জি ২০ সম্মেলন কি তুরুপের তাস হতে পারে ভারত-বাংলাদেশের?

অস্বীকার করার জায়গা নেই যেখানে ভারত-বাংলাদেশ যে যতই ক্ষমতায় থাকুক না কেন একে অপরকে অগ্রাহ্য করতে পারবে না।  আগামী সেপ্টেম্বর মাসে ভারতে অনুষ্ঠিত  হতে চলেছে ১৮ তম জি ২০ সম্মেলন। 

author-image
SWETA MITRA
New Update
mo ha.jpg

ফাইল ছবি

জুয়েল রাজ, লন্ডনঃ সম্প্রতি জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ও যুক্তরাজ্য সফর করে ফিরেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর এহেন সফরকে ঘিরে রাজনৈতিক আলোচনা তুঙ্গে রয়েছে। সেই আলোচনার আগুনে ঘি ঢেলেছে যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশি কূটনৈতিকের  নিরাপত্তা ব্যবস্থা শিথিল করার ঘোষণা।  আর এর সবকিছুই আলোচিত হওয়ার মূল কারণ আগামী জাতীয় নির্বাচন। এদিকে একদিকে যখন জি ২০ সম্মেলনকে ঘিরে ভারতে সাজোসাজো রব হয়েছে তখন নতুন করে ভারত-বাংলাদেশের (India-Bangladesh) মধ্যেকার সম্পর্ক আবারও  শিরোনামে উঠে এসেছে।   

 

এখানে অস্বীকার করার জায়গা নেই যেখানে ভারত-বাংলাদেশ যে যতই ক্ষমতায় থাকুক না কেন একে অপরকে অগ্রাহ্য করতে পারবে না।  আগামী সেপ্টেম্বর মাসে ভারতে অনুষ্ঠিত  হতে চলেছে ১৮ তম জি ২০ সম্মেলন।  বিশ্বের ১৯টি ধনী দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমন্বয়ে জি-২০ গঠিত। সদস্য দেশগুলো হল আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিলন, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, মেক্সিকো, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র। আঞ্চলিক সংস্থা হিসাবে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। কিন্তু সেই জোটে বাংলাদেশ নেই। তবুও জি ২০ সম্মেলনে বাংলাদেশ থাকছে বলে খবর।

প্রথা অনুযায়ী, সংগঠনের সভাপতি বেশ কিছু দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাকে বিভিন্ন বৈঠক শীর্ষ পর্যায়ের সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানায়। বাংলাদেশ, মিশর, মরিশাস, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর, স্পেন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতকে সভাপতি হিসেবে ভারত অতিথি দেশ হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ বাংলাদেশে যাকে ভারত সেখানে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এই আমন্ত্রণ বাংলাদেশের জন্য এবং প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনার জন্য অবশ্যই সম্মানের।

ভারত সভাপতি হিসাবে তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী বাংলাদেশকে ২০২৩ সালের জি-২০ প্রক্রিয়ায় আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এটা বাংলাদেশকে আজকের দিনের বড় ইস্যুগুলো, সেটা খাদ্য এবং জ্বালানি নিরাপত্তা কিংবা পরিবেশের জন্য জীবনযাত্রা কিংবা নারীর নেতৃত্বে উন্নয়ন, সব ক্ষেত্রে বৈশ্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ হওয়ার এক অনন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে বলেই মনে করছে বিশিষ্ট মহল।

 

শুধু তাই নয়,  এই জি ২০ সম্নেলনই  হল ভারতের  প্রধানমন্ত্রী  নরেন্দ্র মোদী   বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনার  সরকার প্রধান হিসাবে শেষ আনুষ্ঠানিক  বৈঠক।  তাই দুই দেশেরই বেশ কিছু ইস্যু সেখানে গুরুত্ব পাবে। বিশেষ করে দুই দেশের নির্বাচনেই সেই বৈঠক  প্রভাব  ফেলবে।  পশ্চিমী চাপে ভারতকে পাশে চায় বাংলাদেশ

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর ভারত পাকিস্তান কাশ্মীর নিয়ে তিনবার লড়াই করেছে। কিন্ত মোদী সরকার  পাকিস্তান, চিনকে পাত্তা না দিয়েই এই সম্মেলন কাশ্মীরে সম্পন্ন করবে। এর ফলে আন্তর্জাতিক ভাবে কাশ্মীর নিয়ে এবং আর্টিকেল ৩০৭ নিয়ে আর কোনও সমালোচনা  থাকবে না। এই একটিমাত্র ইস্যু মোদী সরকারের আগাম নির্বাচনে বাজির তাস হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই বাজি খেলেই বাজিমাত করতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী। আর সেখানে প্রতিবশী বন্ধু রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশকে পাশে চাইছে ভারত।

   ভারতের সাথে বাংলাদেশের যে ইস্যুগুলো বহুল আলোচিত  তার মধ্যে রয়েছে সীমান্ত-হত্যা তিস্তার জলের অংশীদারিত্ব।  যদিও তীরে এসে তরী ডুবার মতো করে তিস্তা ইস্যুটি পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী  মমতা ব্যানার্জীর এক তরফা বিরোধীতার কারণে আর চুড়ান্ত আলোর মুখ দেখেন।

ভারত বাংলাদেশের সম্পর্কের সমীকরণ বড় অদ্ভুত। রাষ্ট্র এবং সরকারের লেনাদেনা  চলে এক পথ ধরে, আর সাধারণ মানুষের আবেগ চলে আরেক পথ ধরে। ভারত নিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ  মানুষের ভিতর এক ধরণের নেতিবাচক  মনোভাব কাজ করে। বিশেষ করে  ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকেই নানা রকম ভাবে প্রচার প্রপাগাণ্ডা  চলে আসছে, ভারত বাংলাদেশকে গ্রাস করতে চায়। আওয়ামী লীগ দেশটাকে প্রতিদিন একবার করে ভারতের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে৷ দেশটাকে শেষ করে দিছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশ ভারত নিয়ে যাবে। অথচ   ভারতীয় ভিসার জন্য প্রতিদিন মাইলের পর মাইল মানুষ লাইন ধরছে। চিকিৎসা,  ভ্রমণ  এমন কি ঈদ, পূজা  বিয়ের শপিং করতে লোকজনেরা  ভারতে দৌঁড়ায়। এই সমীকরণ মেলানো কঠিন। ভারত কে বয়কট করার কথা কেউ ভাবতে পারে না। আর বাস্তবতাও তাই। কারণ আওয়ামী লীগ বিরোধীদের সবচেয়ে বড় বিদ্বেষ হচ্ছে ভারত বিদ্বেষ। আর উদাহরণ  হিসাবে বারবার এই মানুষ হত্যা আর নদীর বিষয়টি সামনে চলে আসে। এই  ভারত বিরোধিতা মোকাবেলায় ভারতকে সেই দুইটি বিষয়ের  নিশ্চয়তা নিশ্চিত করতে হবে।

সীমান্তে মানুষ হত্যা এবং তিস্তার জল ইস্যু সমস্যার সমাধান আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জন্য বাজির তাস হবে। জি ২০ সম্মেলন শেখ হাসিনার জন্য তুরুপের শেষ তাস হবে কারণ, চলতি সময়ে পশ্চিমা বিশ্বের বাংলাদেশ ভাবনা নিয়ে যত আলোচনা হচ্ছে সেসব আলোচায় জল ঢালতে  এই জি ২০ সম্মেলন বিরাট ভূমিকা রাখবে। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা   এই সুযোগ হাতছাড়া করবেন না।