নিজস্ব সংবাদদাতা: বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের আন্দোলন মঙ্গলবার উত্তপ্ত রূপ নেয়, যখন পুলিশের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ বাধে। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়, যেখানে পুলিশ লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় শ্রমিকরাও ইট-পাটকেল ছোড়েন।
শ্রমিকদের দাবি, রমজানের মাসে তাঁদের বকেয়া বেতন ও বোনাস পরিশোধ করতে হবে। শ্রমিক নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, দাবি পূরণ না হলে আসন্ন ঈদেই প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনুসের কার্যালয় ঘেরাও করা হবে।
পোশাক শিল্পে সংকট ও শ্রমিকদের দুর্দশা
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বাংলাদেশের পোশাক শিল্প চরম সংকটে রয়েছে। বহু গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ হওয়ার মুখে, অনেক শ্রমিক ইতোমধ্যেই চাকরি হারিয়েছেন বা হারানোর আশঙ্কায় রয়েছেন। অথচ, এক সময় এই শিল্পই ছিল দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান স্তম্ভ।
বর্তমান পরিস্থিতিতে রমজান মাসে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও বোনাস পরিশোধের দাবিতে আন্দোলন তীব্র হয়েছে। আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন টি এন জেড অ্যাপারেলস, অ্যাপারেল প্লাস ইকো লিমিটেড, রোর ফ্যাশন, স্টাইল ক্রাফট গার্মেন্টস ও ডার্ড কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেডের কয়েকশো শ্রমিক। শ্রমিক সংগঠনের নেতারা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
/anm-bengali/media/media_files/2025/03/25/3c2vUkeA9op4qG1dJGnd.jpg)
টানা বিক্ষোভের পর পুলিশের বাধা
গত তিনদিন ধরে ঢাকার শ্রম মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন শ্রমিকরা। সোমবার (২৪ মার্চ) তাঁরা নয়াপল্টনে পথ অবরোধ করেন। মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) সকাল ১০টায় শ্রম ভবনের সামনে তাঁরা জমায়েত হন এবং ১০টা ৪৫ মিনিটে প্রতিবাদ মিছিল শুরু করেন। মিছিল সচিবালয়ের দিকে এগোতে থাকলে বিজয়নগর এলাকায় প্রথম পুলিশি বাধার মুখে পড়ে।
এরপর তোপখানা রোডে পৌঁছালে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ১১টা ১৫ মিনিট নাগাদ পুলিশ আন্দোলনকারীদের বাধা দিলে সংঘর্ষ শুরু হয়। জাতীয় প্রেস ক্লাব ও সচিবালয়ের লিঙ্ক রোডের সামনে এই সংঘর্ষ চরমে পৌঁছায়। পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করলে শ্রমিকরা ইট-পাটকেল ছোড়েন। একপর্যায়ে কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করা হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের কঠোর পদক্ষেপ
সংঘর্ষের পরপরই বিক্ষোভকারীরা এলাকা ছেড়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। তবে শ্রমিক নেতারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের দাবি না মানা হলে ঈদের দিন আরও বৃহৎ আন্দোলনের কর্মসূচি নেওয়া হবে।
এদিকে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং যেকোনো বিশৃঙ্খলা এড়াতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। তবে শ্রমিকদের দাবি আদায়ের আন্দোলন আগামী দিনে আরও তীব্র হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।