নিজস্ব সংবাদদাতা: ইউরোপের রাজনীতিতে নতুন করে ফিরে এসেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প ২০২০ সালে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেয়েনকে বলেছিলেন যে "যদি ইউরোপ আক্রমণের মুখে পড়ে, তাহলে আমরা কখনই ইউরোপকে সাহায্য বা সমর্থন করব না। " মার্কিন প্রেসিডেন্টের নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ততই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে। অনেকেই মনে করছেন, এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনা প্রবল। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয় পেলে, আমেরিকার সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্কের পরিণতি বিশেষ ভালো হবে না বলে আন্তর্জাতিক মহল আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকার সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প বার বার ন্যাটোকে আর্থিক সাহায্যের বিরোধিতা করেছেন। শুধু তাই নয়, ট্রাম্প একাধিকবার এই আর্থিক সাহায্য বন্ধ করার হুঁশিয়ারি পর্যন্ত দিয়েছিলেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট হলে, ন্যাটোকে আর আর্থিক সাহায্য করবে না আমেরিকা। যার জেরে নতুন করে ন্যাটো জোট বিপাকে পড়তে পারে।
এমনিতে বর্তমানে ন্যাটোর বর্তমান পরিস্থিতি ভালো নয়। রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে প্রথম থেকে পশ্চিমি দেশগুলো ইউক্রেনকে সাহায্য করছে। শুধু তাই নয়, ইউক্রেনকে ন্যাটোর তরফে সামরিকভাবে সাহায্য করা হচ্ছে। যার ফলে ন্যাটোর সামরিক ভাণ্ডার বর্তমানে এক প্রকার শূন্য। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন অর্থ সাহায্য বন্ধ হয়ে গেলে ন্যাটো আরও বিপাকে পড়বে।
অন্যদিকে, ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধে আমেরিকা ইউক্রেনকে সমর্থন করছেন। কিন্তু ট্রাম্পের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সম্পর্ক বেশ ভালো। অভিযোগ, প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য রাশিয়া গোপনে ট্রাম্পকে সাহায্য করেছিল। অন্যদিকে, পুতিন বা রাশিয়া ন্যাটোর প্রতিপক্ষ। যার ফলে ন্যাটো অনেকটাই কোনঠাসা হয়ে যাবে।
গত কয়েক দশক ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো ন্যাটোতে অনেকটাই কম আর্থিক সাহায্য করেছে। যুদ্ধের সম্ভাবনা সেভাবে নেই বলেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো মনে করত। এছাড়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্থির বিশ্বাস ছিল, যদি কোনওভাবে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়, আমেরিকা সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবে। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে যে সেই সাহায্য কোনওভাবেই করবে না, তা তিনি আগেই ঘোষণা করে দিয়েছেন। সেই কারণে, নতুন করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে ট্রাম্প মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক আধিকারিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, অনেকের ধারণা ছিল, ইউরোপকে আমেরিকা সব সময় সাহায্য করবে। ট্রাম্প প্রথমবার বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, আমেরিকা সব সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সাহায্য করতে পারবে না। যদি আবার কোনো ঘটনা যদি আমেরিকার স্বার্থে আঘাত করে, সেক্ষেত্রে আমেরিকাকে পাশে পাবে না ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সেই সময় থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বুঝেছিল, সব সময় আর আমেরিকার ওপর নির্ভর করা যাবে না। ইউরোপীয় ইউনিয়নকে এবার নিজেদের জন্য লড়াই করতে প্রস্তুত হতে হবে।
প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ব্যর্থ। ইউরোপ জুড়ে প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউক্রেনকে সমর্থন করার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ব্যাপকভাবে সাহায্য করেছে। শুধুমাত্র রাশিয়ার বিরোধিতা করার জন্য ইউক্রেনকে বিলিয়ন বিলিয়ন অর্থ সাহায্য করেছে। কিন্তু এই সাহায্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর সরাসরি কোনো স্বার্থ জড়িয়ে ছিল কি না, সেই বিষয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। এত কিছুর পরেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশের নতুন বাণিজ্য কৌশল নেওয়া এবং আমেরিকার ওপর নির্ভর কমানোর জন্য যথেষ্ঠ সময় প্রয়োজন। কিন্তু পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প জয়ী হলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সেই সুযোগটি পাবে না।