নিজস্ব সংবাদদাতা: ক্রমেই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে জনগণ। দিনে দিনে ফ্রান্সের পরিস্থিতি আরও খারাপ দিকে মোড় নিচ্ছে। পুলিশের গুলিতে ১৭ বছরের নাহেলের মৃত্যুর পর থেকেই দেশজুড়ে শুরু হয়েছে অশান্তি। সেই অশান্তি এবার দাঙ্গার চেহারা নিয়েছে। দেশের তরুণ বিক্ষোভকারীরা পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। সরকারি সম্পত্তিতে ভাঙচুর চালাচ্ছে তারা।
শুধু বিক্ষোভ নয়, সেই সঙ্গে চলছে লুটপাট এবং ভাঙচুর। একটি আইফোনের দোকান সহ আরও বেশ কিছু দোকানে লুটপাট চালানো হয়েছে। এই সপ্তাহের শুরুতে আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ১৭ বছরের নাহেল ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করলে তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় এক পুলিশ অফিসার। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় নাহেলের। তারপর থেকেই এই পরিস্থিতির সূত্রপাত।
এই দাঙ্গার মধ্যেই একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ফ্রান্সের উত্তরাঞ্চলীয় শহর রুয়েনের একটি সুপারমার্কেটের ছাদ থেকে পড়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ৪৫ হাজার সৈন্যকে মোতায়েন করা হয়েছে।
দক্ষিণে অবস্থিত ফ্রান্সের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মার্সেই। সেখানে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর খবর প্রকাশ্য এসেছে। শহরের একাধিক দোকানে লুটপাট করা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় দাঙ্গাকারীরা একটি বন্দুকের দোকান ভাংচুর করে এবং অস্ত্র নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ হান্টিং রাইফেল বহনকারী এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। এখন পর্যন্ত ওই শহর থেকেই ৯০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ফ্রান্সের পূর্বে অবস্থিত তৃতীয় বৃহত্তম শহর লিওনে। সেখানেও দাঙ্গাকারীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং বিভিন্ন জায়গায় আগুন ধরিয়ে দেয়। বেশ কিছু দাঙ্গাকারী পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়েছে বলেও জানা গিয়েছে। গত শুক্রবার সেখান থেকে প্রায় ১,৩০০ জনকে দোকান লুট করার অপরাধে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
দাঙ্গা কেবলমাত্র ফ্রান্সের মূল ভূখণ্ডে আবদ্ধ নেই। তা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়েছে দেশটির অন্যান্য অঞ্চলেও। ফ্রান্সের দ্বীপ রাষ্ট্র গায়ানাতে ৫৪ বছর বয়সী একজন নাগরিকের মৃত্যু হয়। দাঙ্গার জেরে সেখানকার প্রচুর সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে। ফরাসি সরকার জানিয়েছে, দেশের শান্তি শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা উচিৎ কিনা, সেইবিষয়টি তারা বিবেচনা করে দেখবে। এর আগে ২০০৫ সালে দাঙ্গা বন্ধ করার জন্য তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জ্যাক শিরক দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আরও পাঁচ হাজার পুলিশকে মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত ৪৫ হাজার পুলিশ অফিসার এবং বিভিন্ন গাড়ি ফ্রান্সের বিভিন্ন জায়গায় মোতায়ন করা হয়েছে, যাতে দেশের অন্যান্য অংশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে না পড়ে। দাঙ্গাকারীরা যাতে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করতে না পারে, তার জন্য রাতের বেলায় বাস এবং ট্রাম চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি দাঙ্গার চিত্রগুলিকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য সোশ্যাল মিডিয়াকে অনুরোধ জানিয়েছেন। যাতে দাঙ্গা আরও ছড়িয়ে না পড়ে।