নিজস্ব সংবাদদাতা: আমাদের দেশে মন্দিরের সংখ্যা একেবারেই কম নয়। এর মধ্যে শিব মন্দিরের সংখ্যাই হয়তো সবথেকে বেশি। উত্তর ভারতে বেশ কিছু রাজ্যও মূলত শিবক্ষেত্র হিসেবেই পরিচিত মানুষের মধ্যে। এইসব শিব মন্দিরের ঘিরে অলৌকিক কাহিনিরও কোনও শেষ নেই। কাশী হোক বা হরিদ্বার, বিভিন্ন মন্দির ঘিরে প্রচলিত রয়েছে একাধিক অবাক করার মতো কাহিনী। তবে বিহারের এক মন্দিরের শিবলিঙ্গ বাস্তবেই অলৌকিক কাণ্ডের উদাহারণ। প্রতি বছর উচ্চতা বাড়ছে এই মন্দিরে থাকা শিবলিঙ্গের। এটা কিন্তু একেবারেই লোকশ্রুতি নয়। একেবারে পরীক্ষিত সত্য বলা যায় একে। এমনটাই দাবি করছেন সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, এই শিবলিঙ্গের পুজো করতেন পঞ্চ পাণ্ডব। এতদিন ধরে মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক অলৌকিক শক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই মন্দিরের শিবলিঙ্গ।
এই শিবলিঙ্গ বিহারের বুধওয়াতে রয়েছে। ঠিক কতদিন আগে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, তার সঠিক ব্যাখ্যা আজ পর্যন্ত কেউ দিতে পারেননি। স্থানীয় বিশ্বাস এই মন্দিরের বয়স এক হাজার বছরেরও বেশিই হবে। তবে মন্দিরের বয়স যতই হোক, এর আসল মাহাত্ম্য শিবলিঙ্গকে কেন্দ্র করেই প্রচলিত। এই মন্দিরের শিবলিঙ্গের উচ্চতা নাকি প্রতি বছর বেড়ে যাচ্ছে। মন্দিরের প্রধান পুরোহিত দাবি করছেন যে বংশ পরম্পরায় তাঁরাই এই মন্দিরের সেবায়েত। তিনি ছোট বেলায় লিঙ্গটিকে যে উচ্চতায় দেখেছিলেন বর্তমানে সেটা নাকি অনেকটাই বেড়েছে। এলাকার অন্যান্য বয়স্করাও তাঁর কথাতেই সায় দেন। প্রতিষ্ঠার সময় এই লিঙ্গের উচ্চতা ছিল খুবই সামান্য। একেবারে বাড়ির শিবলিঙ্গের মতোই। কিন্তু বর্তমানে সেই উচ্চতা বেড়ে ৪ ফুটের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। স্থানীয়দের বিশ্বাস আগামী বছরগুলিতে আরও বেড়ে যাবে এই লিঙ্গের উচ্চতা। তাই প্রতিদিনই দূর দুরান্ত থেকে হাজার ভক্ত এসে ভিড় জমাচ্ছেন এই শিবমন্দিরে। প্রতি সোমবার মন্দিরে বিশেষ উদযাপনের ব্যবস্থাও করা হয়। সেদিন ভিড় হয় চোখে পড়ার মতো। অনেকেই মনে করেন এই অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন শিবলিঙ্গ ভক্তের যে কোনও সুপ্ত ইচ্ছে পূর্ণ করেন।
এই মন্দিরের আরও এক মাহাত্ম্য শোনা যায়। শিবের আরাধনায় মূলত অর্পণ করা হয় দুধ এবং গঙ্গাজল। লিঙ্গপূজার প্রধান উপাচার লিঙ্গকে স্নান করানো। যে কোনও শিবলিঙ্গেই ভক্তরা মূলত জল বা দুধ দিয়ে স্নান করিয়ে থাকেন। তারপর সেই স্নানজল চরণামৃত হিসেবে গ্রহণ করেন ভক্তরা। কথিত আছে, বুধওয়া মন্দিরের স্নানজল নাকি বিভিন্ন রোগের অব্যর্থ ওষুধ। বিশেষ করে চর্মরোগ প্রতিরোধে এর বিশেষ চমৎকারী মাহাত্ম্য রয়েছে। তাই এই বিশেষ স্নানজল সংগ্রহ করতেও এই মন্দিরে হাজির হন হাজার হাজার ভক্ত। ভক্তি, বিশ্বাস আর প্রার্থনার মেলবন্ধনই ঈশ্বরের পুজোর প্রধান অঙ্গীকার। এই মন্দিরের আরাধ্যের ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম হয় না। তাই ভক্ত যেমন মন থেকে প্রভুকে স্মরণ করে থাকেন, দেবাদিদেব মহেশ্বরও তেমনই ভক্তদের সব মনস্কামনা পূরণ করেন।