নিজস্ব সংবাদদাতা: সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো নির্বাচনী বন্ডের তথ্য জমা দিল ভারতের বৃহত্তম ব্যাঙ্ক, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (SBI)। ৩০ জুন অবধি এসবিআই সময় চাইলেও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মঙ্গলবারই ভারতের নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত তথ্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই নির্বাচন কমিশনের হাতে তুলে দেয় স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া।
এই নির্বাচনী বন্ড কী?
সহজ সরল ভাষায়, রাজনৈতিক দলগুলিকে অনুদান দেওয়ার একটি মাধ্যম হল নির্বাচনী বন্ড। এটা অনেকটা প্রতিশ্রুতি নোটের মতো যা ভারতের যে কোনও নাগরিক বা সংস্থা স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার নির্বাচিত শাখাগুলি থেকে কিনতে পারে এবং তাদের পছন্দের যে কোনও রাজনৈতিক দলকে দান করতে পারে। নাম উল্লেখ না করেই দান করা যায় নির্বাচনী বন্ড। রাজনৈতিক দলগুলি প্রচারের উদ্দেশ্যে ব্যাঙ্ক থেকে এই নির্বাচনী বন্ড কিনে থাকে। রাজনৈতিক দলগুলির অর্থ তহবিলের অন্যতম উৎস এই বন্ড। লোকসভা ভোটের আগে এক মাসের জন্য কিনতে পাওয়া যায় নির্বাচনী বন্ড। কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা বা কর্পোরেট কোম্পানি বন্ড কিনে পছন্দ মতো যে কোনও রাজনৈতিক দলকে দান করতে পারে। স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার কিছু নির্দিষ্ট শাখায় বিক্রি হয় এই বন্ড। এই স্কিম অনুযায়ী এসবিআই রাজনৈতিক দলগুলিকে অনুদান দেওয়ার জন্য বন্ড ইস্যু করতে পারে। ওই ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট রয়েছে এমন ব্যক্তি বন্ড কিনতে পারেন৷ কিন্তু নির্বাচনী বন্ডে যিনি টাকা দিচ্ছেন তার নামের উল্লেখ করা থাকে না। এই স্কিমের অধীনে, ওই ব্যাঙ্কের নির্দিষ্ট শাখা থেকে এক হাজার, দশ হাজার, এক লক্ষ, দশ লক্ষ এবং এক কোটি টাকার মধ্যে যে কোনও মূল্যের নির্বাচনী বন্ড কেনা যায়। নির্বাচনী বন্ডের মেয়াদ মাত্র ১৫ দিন। এই সময়ে ওই বন্ড শুধুমাত্র জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের অধীনে থাকা রাজনৈতিক দলগুলিতে অনুদানের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
বিতর্ক কেন?
মূল বিতর্কের কারণ হল ক্রেতার নাম নিয়ে গোপনীয়তা। বন্ডের নিয়ম অনুযায়ী ক্রেতা ও দাতার নাম নির্বাচন কমিশনকেও জানানো যাবেনা। যেহেতু, নির্বাচনী বন্ড বিক্রির একমাত্র অধিকারী স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া কেন্দ্রীয় শাসকদলের পরিধির মধ্যে বিরাজমান তাই বন্ড সম্পর্কিত সকল তথ্য ক্ষমতাশালী শাসকের পক্ষে নানান উপায়ে জানা সম্ভব। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ওই বন্ডকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দেয় ভারতের শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল দেশের তথ্য অধিকার আইন এবং সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৯ (১) (ক) -কে লঙ্ঘন করে নির্বাচনী বন্ড। আবার, সমালোচকরা মনে করছেন, নির্বাচনী বন্ড প্রকাশ্যে এলে বিভিন্ন বিদেশি সংস্থা প্রভাব খাটাতে পারে দেশের সরকার পরিচালনায়। যদিও কালো টাকার লেনদেন রুখতেই নির্বাচনী বন্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে দাবি করেছিল কেন্দ্র সরকার।