নিজস্ব সংবাদদাতা: ২০২৪ সালের মে মাসে, দুটি ভিন্ন হাইকোর্ট আন্তঃধর্মীয় বিবাহের উপর ভিন্ন ভিন্ন রায় দিয়ে নজির গড়ল। যেখানে একটি হাইকোর্ট বলেছে যে একজন হিন্দু এবং একজন মুসলিম বিশেষ বিবাহ আইনের অধীনে বিয়ে করতে পারে। আবার সেই একই পরিপ্রেক্ষিতে অন্য হাইকোর্ট রায় দিয়েছে যে এই ধরনের বিবাহ ইসলামী শরিয়া আইন লঙ্ঘন করে এবং শরিয়া ভারতীয় সংসদ কর্তৃক পাস করা বিশেষ বিবাহ আইনকে বাতিল করে। স্বাভাবিক ভাবেই ভিন্ন রায়ে জট পেকেছে স্পেশ্যাল ম্যারেজ অ্যাক্টেই।
গত ২৭ মে মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট বিশেষ বিবাহ আইনের অধীনে রায় দেয় যে, হিন্দু মহিলা এবং মুসলমান পুরুষের মধ্যে বিবাহ বৈধ নয়। ইসলামিক আইনে এই ধরনের বিবাহকে বৈধতা দেওয়া হয়নি। এমনকি, আদালতের কাছে নিরাপত্তা চাওয়া যুগলের আবেদনও খারিজ করে দেওয়া হয়। ওই যুগল ১৯৫৪ সালের বিশেষ বিবাহ আইনে আন্তঃর্ধর্মীয় বিবাহের স্বীকৃতি চেয়েছিলেন। আর তাতেই সম্মতি দেয়নি আদালত।
/anm-bengali/media/media_files/0pX1wcwk93oPd4tj85J9.jpg)
ওই মামলায় মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ ছিল, যে তারা বিবাহিত না হয়ে লিভ-ইন সম্পর্কে থাকতে ইচ্ছুক নয় বা হিন্দু মেয়েটি ছেলেটির ধর্ম ইসলামে রূপান্তর হতেও ইচ্ছুক নন। বিশেষ বিবাহ আইন যে এই ধরনের আন্তঃধর্মীয় বিবাহের অনুমতি দেয় সেই আবেদনকে উপেক্ষা করে আদালত ইঙ্গিত করে যে হিন্দু মেয়েটিকে অবশ্যই মুসলিম ছেলেকে বিয়ে করার জন্য ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করতে হবে। তা না হলে সেই বিবাহকে বৈধ স্বীকৃতি দেওয়া যাবে না।
ঠিক উলটো ক্ষেত্রেই, আরও একটি মামলায় দেখা যায় একেবারে ভিন্ন মত। সেটি এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়। যেখানে দেখা যায় যে, গত ১৪ মে এলাহাবাদ হাইকোর্ট একটি বিপরীত রায় প্রদান করে। আদালতের তরফ থেকে বলা হয় যে, বিশেষ বিবাহ আইনের অধীনে অন্য ধর্মের কাউকে বিয়ে করার জন্য একজন ব্যক্তির ধর্ম পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই। একটি আন্তঃধর্মীয় দম্পতির দ্বারা দায়ের করা অনুরূপ আবেদনে এই রায় দেয় এলাহাবাদ আদালত। সেখানে এমনও নির্দেশ দেওয়া হয় যে, পুলিশ সুরক্ষা এবং বিপরীত পক্ষগুলি তাদের জীবন, স্বাধীনতা এবং গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকবে।
/anm-bengali/media/media_files/q6exwykSOGSyCyW5KWcS.png)
এই মামলায় এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি জ্যোৎস্না শর্মার বেঞ্চ বলেন যে, আইনটি ধর্মান্তর ছাড়াই বিশেষ বিবাহ আইনের অধীনে আদালতের বিবাহের জন্য আবেদন করতে পক্ষগুলিকে বাধা দেয় না। আদালত বলেছে, “চুক্তির মাধ্যমে বিয়ে অবশ্যই আইনে অবৈধ। তবে, আইনটি ধর্মান্তর ছাড়াই বিশেষ বিবাহ আইনের অধীনে আদালতের বিবাহের জন্য আবেদন করতে তাঁদেরকে বাধা দেয় না”।
উল্লেখযোগ্যভাবে, বিশেষ বিবাহ আইন, ১৯৫৪ আনা হয়েছিল সংশ্লিষ্ট পক্ষের ধর্ম নির্বিশেষে বিবাহ সক্ষম করার জন্য। একজন আন্তঃধর্মীয় দম্পতির পক্ষে তাদের একজনকে অন্যের ধর্ম গ্রহণের প্রয়োজন ছাড়াই বৈধভাবে বিয়ে করা একমাত্র উপায়। তাই মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের রায়ে প্রশ্ন উঠেছে ইতিমধ্যেই। কারণ এই রায়ে ইসলামিক শরিয়া আইনকে বিশেষ বিবাহ আইনের উপরে রাখা হয়েছে। হাইকোর্ট বলেছে যে একজন হিন্দুকে একজন মুসলিমকে বিয়ে করার আগে ইসলামে ধর্মান্তরিত করতে হবে, বিশেষ বিবাহ আইনের সরাসরি বিরোধিতা করেছে আদালতের এই নির্দেশ। যা প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে দেশের আইন ব্যবস্থাকেও।
/anm-bengali/media/media_files/Lv3LcSXbvaODMkgDcCsH.jpg)
তবে উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় পরস্পরবিরোধী রায় এটাই প্রথম নয়। মুসলিম পার্সোনাল ল সংক্রান্ত বিষয়ে, বেশ কিছু হাইকোর্ট মুসলিম ব্যক্তিগত আইনকে দেশের আইন যেমন IPC এবং POCSO-এর উপরে রেখেছে। কেরালা হাইকোর্ট এবং কর্ণাটক হাইকোর্টের মতো কিছু আদালত নাবালক মুসলিম মেয়েদের বিয়ে খারিজ করেছে কারণ এটি POCSO এবং বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আইনের অধীনে অনুমোদিত নয়। অন্যরা যেমন পাঞ্জাব এবং হরিয়ানা, দিল্লি এবং গুজরাট হাইকোর্ট অবশ্য এক্ষেত্রে বলেছে এই ধরনের বিয়ের অনুমতি রয়েছে। ইসলামী আইনের অধীনে অনুমোদিত এই বিয়ে। স্বাভাবিক ভাবেই এই ক্ষেত্রেও পরস্পর বিরোধী রায় লক্ষ্য করা গেছে। আর এবার বিশেষ বিবাহ আইনেও নজির গড়ল এই পরস্পর বিরোধী রায়।