নিজস্ব সংবাদদাতা: এল নিনো পাল্টে দিতে পারে গোটা দেশের রাজনীতির গতি-প্রকৃতি। অতীতে বহু এল নিনো বিভিন্ন ধরনের পালা বদলের সাক্ষী থেকেছে। নাসা এবং ওয়ার্লড মেটিরিয়লজিকাল অর্গানাইজেশন ঘোষণা করেছে যে আবার ফিরে আসছে 'এল নিনো'। ফলস্বরূপ অস্বাভাবিক উষ্ণতা, উষ্ণতা-বৃদ্ধি এবং বৃষ্টিপাতের বড় রকমের হেরফের দেখছে সাধারণ মানুষ।
অতীতের এল নিনো বছরগুলোর তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে যে এল নিনোর ফলে অবধারিতভাবে বাতাসে জলকণার পরিমাণ কমে যাওয়া এবং হিট ওয়েভ এবং খরা হয়েছে। ভারতের ক্ষেত্রে এর প্রাথমিক এবং প্রত্যক্ষ প্রতিক্রিয়া হল ফসল উত্পাদনে ঘাটতি দেখা দেওয়া। 'ইন্টার ন্যাশনাল ফোরাম ফর এনভায়র্নমেন্ট, সাসটেইনেবিলিটি অ্যান্ড টেকনলজি'র সি ই ও, চন্দ্র ভূষণ সম্প্রতি ভারতের ক্ষেত্রে এই এল নিনোর প্রতিক্রিয়া নিয়ে বলতে গিয়ে মন্তব্য করেছেন যে এল নিনো শুধু খরা, অনাবৃষ্টি, ফসল উত্পাদনের ঘাটতিতেই সীমাবদ্ধ থাকে না, যেহেতু এর ফলে আবশ্যিকভাবে ফসলের উত্পাদন কমে এবং খাদ্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি হয়, কখনও কখনও দুর্ভিক্ষও দেখা দেয়, তাই এর প্রভাব রাজনীতিতেও পড়ে পরোক্ষভাবে। উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়ে সরকারের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপরেও। এর সাক্ষী থেকেছে ভারতের বড় বড় পরিবর্তন। উদাহরণস্বরূপ ১৯৬৪-৬৫ এবং ১৯৬৫-৬৬, এই দুই বছর পর পর এল নিনোর কারণে খরা হয়েছে এবং তা সামাল দিতে ভারতে পরিকল্পনা করা হয় সবুজ বিপ্লবের এবং ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া গঠনের।
১৯৭৬ থেকে ১৯৮০, ভারতীয় রাজনীতির টান টান উত্তেজনার এই পাঁচ বছরে জরুরি অবস্থা পরবর্তী ইন্দিরার পরাজয়, মোরারজি সরকারের গঠন এবং পর পর মোরারজি সরকারের এবং চরণ সিং সরকারের বিদায় সব ঘটেছিল একের পর এক এল নিনো বছরে। ১৯৭৯ সালের এল নিনো ছিল অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। প্রবল খরায় বিধ্বস্ত হয় ভারত। অর্থনীতির বৃদ্ধি ৫ শতাংশ কমে গিয়েছিল ১৯৭৯-র এল নিনোর ধাক্কার ফলে। অর্থনীতির এই সংকটময় সময়ই ১৯৮০ সালে জনসঙ্ঘ থেকে জন্ম নেয় বিজেপি। এটি পরবর্তীকালে ভারতীয় রাজনীতিকে অনেকটাই বদলে দেয়।
চলতি বছরে অর্থাত্ ২০২৩-এর এল নিনো ভারতীয় রাজনীতিকে কি প্রভাবিত করবে? বর্ষা এসেছে দেরিতে। ফলে এল নিনো ভারতের ফসল উত্পাদনে বড় রকমের প্রভাব ফেলবে। যদি এল নিনো পরের বছরও জারি থাকে, তাহলে সেটা আঘাত হানবে ২০২৪-এর খরিফ ফসলের উত্পাদনে।