বরফে ঢাকা ভূ-স্বর্গ দেখে আনন্দে আত্মহারা, কিন্তু রোজনামচার জীবন কেমন জানেন কি?

রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে কয়েক ধাপ নিচে চলে গেছে।

author-image
Atreyee Chowdhury Sanyal
New Update
gulmargh snowfall.jpg

File Picture

নিজস্ব সংবাদদাতা: চিল্লাই কালানের সময় পর্যটক এবং স্থানীয়রা কয়েক বছরের মধ্যে প্রথম তুষারপাতকে স্বাগত জানিয়েছিল। ২১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া শীতের সবচেয়ে কঠোর ৪০টা দিন কাটিয়ে ফেলল ভূ-স্বর্গ। যার মধ্যে দেখা গেল জলের পাইপ জমে যেতে, কনকনে রাত এবং সূর্যহীন শীতল দিন; যা চরম দুর্দশার ছবিটাই স্পষ্ট করে দিচ্ছে সকলের সামনে।

এমনকি মর্মান্তিক ঘটনারও সাক্ষী থেকেছে কাশ্মীর। রবিবারই, উরির জিঙ্গেল গ্রামে একটি পরিবারের পাঁচ সদস্য, এক দম্পতি এবং তাদের তিন সন্তানকে কবর দেওয়া হয়। কারণ তারা রাতে একটু উষ্ণতা অনুভব করার জন্য চারিদিক বন্ধ করে ঘরের মধ্যে গ্যাস হিটার জ্বালিয়ে রেখেছিল। আর তাতেই দমবন্ধ হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে বাড়ির সকলেই।

এই সময় শীতকাল বিশেষভাবে তীব্র হয়ে রয়েছে উপত্যকা জুড়ে। রাতের তাপমাত্রা শ্রীনগরে -৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং গুলমার্গের পর্যটন কেন্দ্রে তাপমাত্রা -১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে৷ দক্ষিণ কাশ্মীরের শোপিয়ানে, কয়েক দিন ধরে রাতের তাপমাত্রা -১০ ডিগ্রির কাছাকাছি রয়েছে।

kashmir t.jpg

শ্রীনগরের এক বাসিন্দার কথায়, তিনি বহু বছর পর এই জলের পাইপ লাইন জমে যেতে দেখছেন। আগে লোহার জলের পাইপ গুলি জমে যেত। পড়ে অবশ্য পাইপগুলি PPR সিস্টেম হয়ে যাওয়ায়, এই সমস্যা হত না। তবে এবছর আবার সেই দুর্ভোগের দিন ফিরে এসেছে। তাঁর কথায়, “কেউ ঠান্ডার সাথে বাঁচতে পারে, কিন্তু জল ছাড়া নয়”।

শীতকালে উপত্যকায় সাব-জিরো তাপমাত্রা অস্বাভাবিক নয়, তবে এই সময়, রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে কয়েক ধাপ নিচে চলে গেছে। ২১ ডিসেম্বর শ্রীনগরে -৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রাতের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল যা এক শতাব্দীর কাছাকাছি সর্বনিম্ন ছিল।

১৯৩৪ সালে শ্রীনগরের রাতের তাপমাত্রা -১২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এখনও পর্যন্ত রেকর্ড করে রেখেছে। এবছর অতোটা না নামলেও যে পরিমাণে রাতের তাপমাত্রা নেমেছে, তাও যথেষ্ট কষ্টের, বলছেন সেখানকার স্থানীয়রাই। 

গত কয়েক দশক ধরে, ঐতিহ্যবাহী কাশ্মীরি বাড়িগুলিও যেন এবারের ঠান্ডায় হার স্বীকার করছে। যে বাড়িগুলি বাসিন্দাদের তিক্ত ঠান্ডা সহ্য করতে সাহায্য করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল, যেমন - কাদা দিয়ে প্লাস্টার করা হয়েছিল এবং ছোট ছোট জানালাগুলিকে কংক্রিটের কাঠামো দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু সে সবও এবছর আরাম দিতে পাচ্ছে না বাসিন্দাদের।

snow-in-background kashmir.jpg

ঠান্ডা কমানোর একমাত্র মাধ্যম হল ‘হামাম’। যা ঐতিহ্যবাহী, বৈদ্যুতিক এবং আরামদায়ক। কিন্তু মধ্যবিত্তদের জন্য তাঁর খরচ বহন করা কষ্টকর। একটি বৈদ্যুতিক হামামের একটি কক্ষের জন্য প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। যার জন্যে এটি চালানোর খরচ একটি গড় মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য খুব বেশি। সবার সার্মথ্যে নেই এই ‘হামাম’। ফলস্বরূপ, পর্যটকদের জন্যে ভূ-স্বর্গ আকর্ষণীয় হয়ে উঠলেও, এই সময়টা খুবই খারাপ স্থানীয়দের জন্য।