নিজস্ব সংবাদদাতাঃ যুদ্ধাপরাধী বলে তাঁকে দাগিয়ে দিয়েছিলেন কেউ কেউ। কেউ আবার আন্তর্জাতিক কূটনীতির 'চাণক্য' বলে সম্বোধন করতেন। সব বিতর্ক পিছনে ফেলে প্রয়াত আমেরিকার প্রাক্তন কূটনীতিক, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী হেনরি কিসিঞ্জার। ১০০ বছর বয়সে বুধবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি। কানেটিকটে নিজের বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন হেনরি। মৃত্যুর আগে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন কিসিঞ্জার। গত মে মাসে শতবর্ষ পূর্ণ করার পরও নিয়মিত হোয়াইট হাউসে আনাগোনা ছিল তাঁর। রাষ্ট্রনেতার ভূমিকা নিয়ে বইও প্রকাশ করেন। এমনকি পরমাণু শক্তি পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়া উত্তর কোরিয়া কতটা বিপজ্জনক, তা নিয়ে আমেরিকার সেনেটের শুনানিতেও অংশ নেন। জুলাই মাসে চিন সফরেও গিয়েছিলেন হেনরি। তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছে চিনও।
দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র আমেরিকা এবং রাশিয়ার মধ্যে শান্তিপূর্ণ আলোচনার রূপকার ছিলেন হেনরিই। পরমাণু শক্তি নিরস্ত্রীকরণ এবং নিয়ন্ত্রণ চুক্তি স্বাক্ষর করে দুই দেশ। পশ্চিম এশিয়ায় রাশিয়ার আধিপত্য খর্ব হওয়ার নেপথ্যেও ছিলেন হেনরিই। ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে আমেরিকার সরে দাঁড়ানোর নেপথ্যেও তিনিই ছিলেন। তাঁর উদ্যোগেই প্যারিসে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যে কারণে ১৮৭৩ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে সম্মানিত করা হয় তাঁকে। যদিও তাঁর শান্তি পুরস্কার পাওয়া নিয়েও বিতর্ক রয়েছে।
বিদেশ সচিব হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি, জন এফ কেনেডি থেকে জো বাইডেন, আমেরিকার ১২ জন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন কিসিঞ্জার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে, ঠান্ডা যুদ্ধের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন কিসিঞ্জার। সেই সময় আমেরিকার বিদেশনীতির রূপরেখা ঠিক করে দেন তিনিই। প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের আমলে, আমেরিকার সরকারের দ্বিতীয় শক্তিশালী ব্যক্তি হিসেবে ধরা হতো কিসিঞ্জারকে। ঠান্ডাযুদ্ধের সময় আমেরিকা এবং রাশিয়ার মধ্যে টানাপোড়েন যখন চরমে, সেই সময় গোপনে চিনের সঙ্গে রফা শুরু করেন কিসিঞ্জার।
পুঁজিবাদী দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হওয়া সত্ত্বেও, চিনের সামরিক, অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত উত্থানের সমর্থক ছিলেন কিসিঞ্জার। মাও জে দং থেকে শি চিনপিং, সকলের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল তাঁর। যে কারণে তাঁর মৃত্যুর খবরে শোকপ্রকাশ করেছে চিন। তাঁকে ‘দীর্ঘদিনের বন্ধু’ বলে উল্লেখ করেছে। পশ্চিমি দুনিয়ায় চিনকে নিয়ে যে প্রাথমিক ধারণা রয়েছে, তার বিপরীত গিয়ে চিনের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি নিয়ে বইও লেখেন। যে জাপানের হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে পরমাণু বোমা ফেলেছিল আমেরিকা, তাদের সঙ্গেও সুসম্পর্ক ছিল হেনরির।