/anm-bengali/media/media_files/vQFZ85gTPF38zcoC24RJ.jpeg)
নিজস্ব সংবাদদাতা, পশ্চিম মেদিনীপুরঃ আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে খড়গপুর আইআইটি থেকে গবেষণা শেষ করার স্বপ্ন আগেই ভেঙ্গে গিয়েছিল। এবারে আজীবন শিক্ষকতা করার স্বপ্নও ভেঙ্গেচুরে খানখান হয়ে গেল কলকাতা হাইকোর্টের এক কলমের খোঁচায়। ফলে অথৈ জলে পড়েছেন রসায়ন বিভাগের শিক্ষক অতনু সামন্ত। জানেন না ভবিষ্যতে কপালে কি লেখা রয়েছে। তবে এখনই হাল ছাড়তে নারাজ ছাত্র জীবনে মেধাবী পড়ুয়া হিসাবে পরিচিত এই শিক্ষক। এখন সুপ্রীম কোর্টের দ্বারস্থ হবেন বলে ঠিক করেছেন। তারসাথে তাকিয়ে রয়েছেন রাজ্য সরকারের পদক্ষেপের দিকে।
স্কুলের শিক্ষকতার জন্য খড়গপুর আইআইটিতে পিএইচডি করার সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া করেছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবং থানার দশকগ্রামের সদস্য গ্রামের বাসিন্দা অতনু সামন্ত। ২০১০ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর দুই হাজার এগারো সালে বাঁকুড়া জেলার পাখনা হাইস্কুলে রসায়ন বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন অতনু। বাড়ি থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে ওই স্কুল হওয়ায় পরবর্তীকালে ২০১৬ সালে স্টেট লেভেল টেস্টে উত্তীর্ণ হয়ে বাড়ি থেকে কাছে নারায়ণগড়ে শিক্ষকতার কাজ শুরু করেন তিনি। সোমবার হাইকোর্টের নির্দেশের পর হতাশ রসায়ন বিভাগের শিক্ষক অতনু সামন্ত।
অতনু বলেন, " ২০১০ সালের যে স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা হয়েছিল যার নিয়োগ হয় ২০১১ সালে। সেই তখন রিজিওনাল লেবেল স্টেট সিলেকশন হতো তখন যোগ্যতার সাথে উত্তীর্ণ হয়ে বাঁকুড়া জেলায় বড়জোড়া ব্লকের স্কুলে সহ শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। ওখানে সাত বছর কাজ করেছি। আমার বাড়ি থেকে দুশো কিমি দূরে হওয়ায় আবার চেষ্টা করি যোগ্যতা দিয়ে প্রমান করে বাড়ির কাছাকাছি যাতে আসতে পারি। ২০১৬ সালে যে স্টেট লেভেল টেস্ট হয় তাতে দ্বিতীয় বার উত্তীর্ণ হই এবং তাতে ৫৯ র্যাংক করি। বাড়ির পাশাপাশি নারায়ণগড় ব্লকের সরিষা কোনারপুর হাইস্কুলে শিক্ষকতা যোগদান করি ২০১৮ সালে। গত পরশু সকাল সাড়ে দশটায় যে একটি ভয়ঙ্কর রায় আমাদের জীবনে অভিশাপ হয়ে নেমে এলো বিচারপতির রায়ের ফলে। জীবনে হঠাৎ করে সব এলোমেলো হয়ে গেলো। আমরা চাকুরিচ্যুত হয়ে বেকার বলা চলে। জানি না এই অবস্থায় আমাদের কি করা উচিৎ। ২০০৮ সালে গ্র্যাজুয়েশন করি কেমিষ্টিতে মেদিনীপুর কলেজ থেকে। ২০১০ বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে মাস্টার ডিগ্রি লাভ করি। ওই বছরই নেট পরীক্ষায় জুন ও ডিসেম্বর মাসে দুটোতেই কোয়ালিফাই করি এবং ইউজিসি র্যাঙ্ক করি। সেই সার্টিফিকেট নিয়ে খড়গপুর আইআইটিতে কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টে গবেষণার কাজে যুক্ত হই। "
অতনু আরও জানান যে, " পারিবারিক এবং আর্থিক সমস্যার উপর নির্ভর করে শিক্ষকতা পেশা আমার ছোট থেকেই ভেবেছিলাম চাকরি করবো এবং পাশাপাশি পিএইচডি করবো চেষ্টা করেছিলাম। শেষ পর্যন্ত সেই ডিগ্রি পূরণ করা হয়ে ওঠেনি। আইআইটিতে ঢুকে ছিলাম কিন্তু ডিগ্রি পূরণ হয়নি। কারন স্কুল সার্ভিস কমিশন পরীক্ষায় পাশ করে যায়। জ্বরের কারণে মাঝ পথে ওই ডিগ্রি ছেড়ে আসতে হয়। স্কুলে শিক্ষকতা কাজে যোগদান করি। দুঃখের বা বেদনার বিষয় কি পাপের ফল পেতে হলো ২০১১ থেকে ১৩ বছর চাকরির অভিজ্ঞতার পরেও আমাদের অযোগ্য ধাঁধায় পড়ে এই চাকরি বিচারপতির এক কলমে চলে গেলো। পরবর্তীকালে আমাদের পরিবার কি ভাবে চলবে ? আমার হাউস লোন আছ। পড়াশুনা করে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় না দিয়ে আজকে সামাজিক অবমাননা হচ্ছে এর খেসারত কি করে পাবো ? টাকা ফেরতের মধ্যে আমি পড়ি না। সেই অর্থে হয়তো আমাকে টাকা ফেরত দিতে হবে না। চাকরি চলে যাওয়া মানে একজন মানুষের কাছে মৃত্যু দন্ডের সমান। সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করা ছাড়া রাস্তা খোলা নেই। সবং থানার এর দশগ্রাম ৪ নম্বর অঞ্চলের সদরচক গ্রামে অতনুর বাড়ি। বাবা মা ভাই মেয়ে স্ত্রী সবাই খুব উদ্বেগের মধ্যে আছে। মেসে থেকে কষ্টের মধ্যে পড়াশুনা করেছি। "
অতনুর আক্ষেপ যে " গত রবিবার ভোটের দ্বিতীয় ট্রেনিং নিয়ে এসেছি। এখন জানি না ভোটের ডিউটি করতে যেতে পারব কিনা। "