নিজস্ব সংবাদদাতাঃ বর্তমানের দুর্গাপুজোর মূল আকর্ষণ হল থিম পুজো। তবে এই থিম পুজোর আড়ালে আজও অমলিন হয়ে রয়েছে সাবেকি গ্রাম বাংলার পুজোগুলি। থিমের চাকচিক্যের মধ্যেও সাবেকিয়ানা বজায় রেখে চলেছে আজও কিছু পুরোনো রাজবাড়ির দুর্গাপুজো। তেমনিই এক পুরোনো বিখ্যাত পুজো হল বর্ধমান রাজবাড়ির দুর্গাপুজো।
রাজ ঐতিহ্যের শেষ সলতে বলতে ভগ্নদশা মন্দির। দেওয়াল বেয়ে জল পড়ায় শেওলা হয়ে গেছে আবার কোনও দেওয়াল চলে গেছে বট অশ্বত্থের দখলে। যেখানে অধিষ্ঠান করেন রাজার কুলদেবতা লক্ষী নারায়ণ জিউ। মন্দিরের ভিতরে দেওয়ালে টেরাকোটার কারুকার্য, দেওয়ালের পলেস্তেরা চারদিকে খসে পড়ছে।এই মন্দিরেই বর্তমানে শারদীয়ায় পুজিত হন পটেশ্বরী। পটের মধ্যেই মা দুর্গার ছবি। তিনি সপরিবারে মর্তে এসেছেন। পুরো পটটাই শোলার সাজে সজ্জিত রয়েছে। প্রত্যেক ১২ বছর অন্তর মায়ের অঙ্গরাগ হয়, অর্থাৎ নতুন করে পটে মা দুর্গার ছবি আঁকা হয়। এখানে পটেশ্বরীকে মা চণ্ডী রূপে পুজো করা হয়। নয় দিনে চণ্ডীর নয় রূপে পুজো করা হয়। বর্তমানে মন্দির ভেঙে যাওয়ায় রাজ কুলদেবতার মন্দিরেই পটেশ্বরীর পুজো হয়।
রাজ আমলে ধুমধাম করে পটেশ্বরী দুর্গাপুজো হতো। বহু মানুষের আগমন হতো বর্ধমান মহারাজের দুর্গাপুজোয়। দামোদর নদীর ওপার থেকেও অনেক মানুষজন পায়ে হেঁটে, গরুর গাড়িতে করে আসতেন রাজার পুজো দেখতে। জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পুজো হতো। প্রত্যেকদিনই ভিড় লেগে থাকত মন্দির প্রাঙ্গণে। তবে রাজ পরিবারের প্রথা অনুযায়ী, রাজ পরিবারের মহিলারা সবার সামনে আসতেন না। রাজবাড়ি থেকে গোপন রাস্তা দিয়ে তাঁরা মন্দিরে প্রবেশ করতেন এবং মন্দিরের দোতলায় দর্শনির মাধ্যমে পুজো ও অনুষ্ঠান দেখতেন। মন্দিরে থাকা মানুষজন এই রাজ পরিবারের মহিলাদের দেখতে পেতেন না। এখনও দুর্গাপুজোর সময় ভিড় হয়। বর্তমানে একটি ট্রাস্টের মাধ্যমে দেখভাল করা হয় মন্দিরের। তবে রয়েছে রক্ষণাবেক্ষণের অভাব। তবে পুজোর আচার বা রীতি-নীতির কোন পরিবর্তন হয়নি। এখনও আগের মতই পুরনো রীতি-নীতি মেনেই রাজপরিবারে মা পটেশ্বরী দুর্গাকে চণ্ডীরুপে পুজো করা হয়। মহালয়ার পরের দিন প্রতিপদে থেকে বর্ধমানের মহারাজার মন্দিরে দুর্গাপুজো শুরু হয়। নয় দিন ব্যাপি নবরাত্রি পুজো হয়। পুজোর সময় রাজপরিবারের এক মাত্র বংশধর ছোট রাজকুমার প্রণয় চাঁদ মহাতাব নয়দিন সস্ত্রীক বর্ধমানে থাকেন এবং নিজে পুজোয় বসেন।