/anm-bengali/media/media_files/yndFm9WgsJTRVKHgYrYy.jpg)
হাবিবুর রহমান, ঢাকা: বাংলাদেশে টঙ্গীর তুরাগতীরে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়েছে বৃহত্তম জুমার জামাত। এসময় দেশ বিদেশের লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লির উপস্থিত ছিলেন। এ নামাজকে ঘিরে ভোর থেকেই তুরাগ তীরে মুসল্লিদের ঢল নামে। শুক্রবার দুপুর পৌনে ২টায় অনুষ্ঠিত বিশাল জুমার নামজের ইমামতি করেন ভারতের দিল্লীর মাওলানা সা’দ কান্ধলভীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ কান্ধলভী।
ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে অংশগ্রহণকারীরা ছাড়াও জুমার নামাজে অংশ নিতে শুক্রবার ভোর থেকেই ঢাকাসহ আশপাশের এলাকা থেকে ইজতেমা মাঠে সমবেত হতে থাকে মুসল্লিরা। দুপুর ১২টার দিকে ইজতেমা মাঠ উপচে আশপাশের খোলা জায়গাসহ সব স্থান পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এছাড়া টঙ্গীর বিভিন্ন উঁচু ভবনের ছাদে থেকেও মুসল্লিরা জুমার নামাজে অংশ নেয়।
এছাড়াও বুধবার রাত থেকে বিভিন্ন জেলার মুসল্লিরা ইজতেমায় ময়দানে আসতে শুরু করে। দ্বিতীয় পর্বে বিশ্ব ইজতেমায় শুক্রবার পর্যন্ত ৫৬টি দেশে থেকে ৬ হাজারের বেশি বিদেশি মেহমান ইজতেমায় যোগ দিয়েছেন। প্রথম পর্বের ন্যায় দ্বিতীয় পর্বেও বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তায় আইন শৃংঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গড়ে তুলেছেন নিরাপত্তা বলয়। ইজতেমার অন্যতম সমন্বয়কারী হাজী মুনির হোসেন জানান, অনেক মুসল্লি ময়দানে চলে আসায় বৃস্পতিবার বাদ ফজর থেকে মুসল্লিদের উদ্দেশে প্রাক-বয়ান চলতে থাকে। বাদ ফজর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা মুফতি শেহজাদ, তা বাংলায় অনুবাদ করেন বাংলাদেশের মুফতি আজিম উদ্দিন। বাদ জোহর বয়ান করেন ভুপালের মুরব্বি ইকবাল হাফিজ, তরজমা করেন মাওলানা মনির ইউছুফ। বাদ আসর বয়ান করেন বাংলাদেশের মাওলানা সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম। বাদ মাগরিব বয়ান করেন ভারতের মাওলানা শামীম, তা তরজমা করেন মাওলানা জিয়া বিন কাসেম। আজ বাদ ফজর মাওলানা চেরাগ আলীর বয়ান বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা আশরাফ আলী।
দ্বিতীয় পর্বের জিম্মাদার ইঞ্জিনিয়ার ওয়াসেফুল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি বিবেচনায় ভারতের নিজামুদ্দিন মারকাজের শীর্ষ মুরব্বি মাওলানা সাদ আহমদ কান্ধলভি এ ইজতেমায় আসবেন না। তবে নিজামুদ্দিনের পক্ষ থেকে তাবলিগের শীর্ষ মুরব্বি ও আলেমসহ ৩২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এরই মধ্যে ময়দানে এসে পৌঁছেছে। তাদের তত্ত্বাবধানেই পরিচালিত হবে বিশ্ব ইজতেমা। হাজী মনির হোসেন জানান, সৌদি আরব, পাকিস্তান, ভারত, ইরাক, তুরস্ক থেকে শুরু করে এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে বিদেশি মেহমানরা ময়দানে এসেছেন। ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে প্রথম পর্বের মতো এ পর্বেও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, টঙ্গী সরকারি হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান ইজতেমা ময়দানের উত্তর পার্শ্বে নিউ মন্নু কটন মিলের ভেতরে ক্যাম্প চালু রেখেছে। ইজতেমা উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ে রোববার পর্যন্ত বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে। এছাড়া ঢাকা অভিমুখী সব ট্রেন টঙ্গী রেল স্টেশনে ৫ মিনিট বিরতি দেবে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থাও (বিআরটিসি) বিশেষ বাস সার্ভিস চালু করেছে। আশকোনা ক্যাম্পে মতবিনিময়কালে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, তাবলীগ জামাত দ্বীনের মেহনতে নিবেদিত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের নিঃস্বার্থ স্বেচ্ছাশ্রম ও অনুদানে পরিচালিত হয়। সারা পৃথিবীতে ইসলামের প্রচার ও মানুষকে দ্বীনের পথে দাওয়াতের ক্ষেত্রে তাবলিগের খেদমত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাবলিগ জামাতের বিশ্বব্যাপী কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে বিশ্ব ইজতেমার এত বিশাল আয়োজন করা নিঃসন্দেহে একটি গর্বের বিষয়।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার দূরদর্শিতা দিয়ে ইসলামের খেদমতে অরাজনৈতিক সংগঠন তাবলিগ জামাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বুঝতে পেরেছিলেন। একজন সত্যিকারের ইমানদার হিসেবে বঙ্গবন্ধু দাওয়াতি কাজের সুবিধার্থে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের জন্য বিশাল জায়গা বরাদ্দ করেছিলেন। যার ফলে আজকে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন ধার্মিক মুসলিম মহীয়সী নারী। তিনি বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের বিষয়ে অত্যন্ত আন্তরিক ও সজাগ।সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা করার জন্য তিনি সবাইকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সাল থেকে বাংলাদেশে টঙ্গীর তুরাগতীরে তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা হয়ে আসছে। তবে তাবলীগ জামাতের নেতাদের বিভেদের কারণে ২০১৭ সাল থেকে দুই পর্বে হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা।