নিজস্ব সংবাদদাতা: বর্ধমানের নান্দুর ঝাপানতলায় গত ১৪ আগস্ট সন্ধ্যেয় প্রিয়াঙ্কা হাঁসদা নাম এক আদিবাসী ছাত্রী খুন হয়েছিলেন। ঠিক ১০ দিনের মাথায় সন্দেহভাজনকে পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া থেকে পুলিশ গ্রেফতার করল। পুলিশ সুপার আমনদীপ বলেন, “ছাত্রী খুনে সন্দেহভাজন অজয় টুডুকে পাঁশকুড়া থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরার কাঁকড়া এলাকায়। গত কয়েকদিন ধরে পাঁশকুড়াতে পুলিশের একটি দল খোঁজ চালাচ্ছিল। মোবাইল-সূত্র ধরে পরপর দু’দিন নির্দিষ্ট একটি জায়গাতে হানা দিলেও পুলিশ সন্দেহভাজনের নাগাল পায়নি। তিনবারের চেষ্টায় পুলিশের হাতে পাকড়াও হয়েছে বছর আঠাশের ওই যুবক।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় কয়েক বছর ধরে ধৃতের সঙ্গে পরিচয় ছিল প্রিয়াঙ্কার। সমাজমাধ্যমেই তাদের মধ্যে যোগাযোগ হয়েছিল। ধৃত ওই যুবক বেঙ্গালুরুতে কাজ করত। নিহত ছাত্রীও গত সাত মাস ধরে বেঙ্গালুরুতে প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিলেন। ঘটনার দিন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ধৃতকে নান্দুরে রাস্তায় দেখা গিয়েছিল। প্রিয়াঙ্কার পরিজনরাও জানতেন, ওই যুবকের সঙ্গে তাদের বাড়ির মেয়ের যোগাযোগ ছিল। খুনের দু’দিন পরেই পুলিশ সুপার আমনদীপ নামে ওই আততায়ীর খোঁজে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বর্ধমান সদর) অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ৯ জনের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করে দিয়েছিল। সিটের নেতৃত্ব ৭ টি দল ডেবরা, পাঁশকুড়া থেকে বেঙ্গালুরুতে তল্লাশি চালাচ্ছিল। বেঙ্গালুরুতে কয়েকটি জায়গাতে তল্লাশি চালানো হয়েছিল। মোবাইল-সূত্র ধরে পাঁশকুড়াতে দু’টি জায়গায় পরপর দু’দিন হানা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ মূহুর্তে পালিয়ে গিয়েছিল আততায়ী। শেষ পর্যন্ত ফাঁদ পেতে ধরা হয় তাকে। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “ফাঁদ পাতা হয়েছিল। পকেটের টাকা ফুরোতেই সেই ফাঁদে পা দিতেই আততায়ীকে ধরা গিয়েছে।”
প্রিয়াঙ্কার খুনিকে ধরার জন্যে জনজাতি সংগঠন টানা আন্দোলন করছিল। জনজাতিদের সঙ্গে অন্যান্য সংগঠনও প্রতিবাদে সরব হয়েছিল। গত রবিবার জনজাতিদের সংগঠন শক্তিগড়ে টানা পাঁচ ঘন্টা দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করেছিল। সে দিনই পুলিশ জানিয়েছিল, ১০ দিনের মাথায় আততায়ীকে গ্রেফতার করা হবে। এদিকে, শুক্রবার দুপুরে হাইকোর্টের বিচারপতি হরিশ টন্ডনের ডিভিশন বেঞ্চে সিবিআই চেয়ে মামলা করেছেন প্রিয়াঙ্কার বাবা সুকান্ত হাঁসদা। সুকান্তর আইনজীবী দেবপ্রিয় সামন্ত বলেন, “বর্ধমান থানা মামলার যথাযথ তদন্ত করছে না। তাই নিহতের পরিবার সিবিআই তদন্ত চেয়েছেন। ডিভিশন বেঞ্চ মামলা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছে। মঙ্গলবার মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।” কিন্তু তার আগেই পুলিশ আততায়ীকে গ্রেফতার করে ফেলল। জেলা পুলিশের কর্তারা বলেন, “আমরা কথা দিয়েছিলাম। সেই কথা রাখতে পেরেছি”।