কাপড়ের গাঁটরির ফাঁকে বস্তায় বাজির মশলা পাচার! কীভাবে আসত শ্রমিক?

গতকাল উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরে যে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে বাজি কারখানায় সেখান থেকে ৯ জনের মৃত্যুর পর বাজির মশলা পাচারের একটি তত্ত্ব উঠে এসেছে।

author-image
Anusmita Bhattacharya
New Update
duttapukur1

ফাইল ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা: গ্রামের বাজারে ছোট্ট কাপড়ের দোকান। জামাকাপড় বলতে গ্রামের মেয়েদের পরার মামুলি আটপৌরে শাড়ি আর সাধারণ গামছা-লুঙ্গি। আর কিছুই পাওয়া যায় না দোকানে। ফলে খরিদ্দারেরও খুব কম। এই দোকানে কখনও দিনে হাজারখানেকের বেশি ব্যবসা হয়েছে বলে মানেন না স্থানীয়রা। তবে ব্যবসার হাল যাই হোক, ব্যবসায়ীর রমরমা আটকায়নি। মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান, জঙ্গিপুর, সুতি এমনকি, বহরমপুরের প্রাণকেন্দ্রেও নাকি ওই ছোট্ট কাপড়ের দোকানি নামে-বেনামে একাধিক ফ্ল্যাটের মালিক। আবার কিছু জমিও আছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন যে এই সম্পত্তির রমরমা হয়েছে শেষ কিছু বছরের মধ্যে। 

রবিবার উত্তর ২৪ পরগণার দত্তপুকুরে যে বিস্ফোরণ হয়েছে, তার থেকেই জেরাতের নাম উঠে এসেছে বলে পুলিশ দাবি করছে। দত্তপুকুরে বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে যাঁদের মৃত্যু হয়, তাঁদের মধ্যে ৬ জনেরই বাড়ি মুর্শিদাবাদে। তাদের দাবি, এই শ্রমিকদের মুর্শিদাবাদ থেকে জেরাতই পাঠিয়েছিল দত্তপুকুরে কাজ করতে। স্থানীয়দের দাবি, নিজেকে কাপড়ের ব্যবসায়ী হিসাবে দেখালেও জেরাতের রকেটগতিতে উত্থানের পেছনে ছিল বোমা মশলা এবং বোমা বানানো শ্রমিক সরবরাহের চক্র।

কীভাবে চলত সেই সিন্ডিকেট? ভোরের আলো ফোটার আগেই ছোট ছোট পিকআপ ভ্যানে কাপড়ের গাঁটরির আড়ালে বড় বড় সেলাই করা বস্তায় ঝাড়খণ্ড থেকে বোমার মশলা আসত জেরাতের ডেরায়। আর সন্ধে হলেই গোডাউনের সামনে দেখা যেত ১০ চাকা কিংবা ১৬ চাকার বড় ট্রাক। কয়েক ঘণ্টায় ফাঁকা জেরাতের মজুতঘর। এর আগে একাধিক বিস্ফোরণকাণ্ডে নাম উঠেছে জেরাতের। এনআইয়ের নজরেও ছিল সে। এবার দত্তপুকুর বিস্ফোরণকাণ্ডেও গোয়েন্দাদের নজরে পড়ল জেরাত। অনুমান করা হককে যে দত্তপুকুরে বাজি বানানোর দক্ষ শ্রমিক সরবরাহ থেকে মশলার জোগান দেওয়া সবটাই মুর্শিদাবাদে নিজেই সামলাত এই জেরাত। দত্তপুকুরে মুর্শিদাবাদের চার শ্রমিকের মৃত্যুতে সেই তত্ত্ব আবার জোরালো হল। দত্তপুকুরের বিস্ফোরণে এখনও পর্যন্ত অন্তত ৯ জনের মৃত্যু হয়। মূল অভিযুক্ত কেরামত মারা গেছেন। তাঁর পুত্র রবিউল এবং যে বাড়িটি ভাড়া নিয়ে বাজি বানানোর কাজ চলত, সেই বাড়ির মালিক সামসুল হকের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের বাকি ৬ জনের বাড়িই নাকি মুর্শিদাবাদের নতুন চাঁদরা গ্রামে। এই ৬ জন হল আন্দাজ শেখ ( ২০ ), ছোটন শেখ ( ১৫ ) , হাবিব শেখ (৪০ ) , রনি শেখ ( ২০), সুজন শেখ (২২) এবং রাফিযুল শেখ। জানা গেছে যে আরও বেশ কিছু শ্রমিক ওই দত্তপুকুরের কারখানায় কাজ করত যাদের খোঁজ এখনও মেলেনি।

impact