নিজস্ব সংবাদদাতা: এএনএম নিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে, সংবিধান হত্যা দিবসের বিষয়ে, কংগ্রেসের মুখপাত্র, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, "জরুরি অবস্থা নিয়ে কথা বলতে গেলে সম্পূর্ণ ইতিহাস বলতে হবে। যেকোনও গণতন্ত্র বিরোধী রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের আমি বিরোধী। কিন্তু প্রেক্ষিতটা মাথায় রাখতে হবে। সত্তরের দশকে নকশাল আন্দোলন এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়াতে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র এবং নিষেধাজ্ঞার শিকার হয়েছিল ভারত। সেইসময় দাঁড়িয়ে আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থা মারফত যা যা তথ্য সামনে এসেছিলো, তখন ভারতবর্ষের প্রশাসনের ভেতর কিছু কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছে এবং অ্যানার্কির সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। সেই অবস্থা যদি হতো, আজ বাংলাদেশে যা হচ্ছে, সেরকমভাবেই আমাদের সংবিধান এবং গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দেবার চেষ্টা করা হচ্ছিলো। সেই সময় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে জরুরি অবস্থাকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। তখন জরুরি অবস্থার প্রাসঙ্গিকতা এতটাই ছিল যে, তদানীন্তন আরএসএস, শিবসেনা দল অকুণ্ঠভাবে সমর্থন করেছিল। এটা সত্যের একটা দিক।
সত্যের আরেকটা দিক হচ্ছে, পরবর্তীকালে একদিকে মোরারজী দেশাইয়ের নেতৃত্বে জনসংঘ, জনতা দল ও বামপন্থীরা একসঙ্গে লড়াই করলেন। তারপর অটল বিহারি বাজপেয়ী, মুরলী মনোহর যোশী ও জ্যোতি বসুরা একসঙ্গে লড়াই করলেন। সরকার স্থায়ীত্ব পেল না। তারপর ইন্দিরা গান্ধী জেলে গেলেন। মানুষ তাকে দু'হাত ভরে আশীর্বাদ করলো। তিনি সরকারে এলেন। তিনি তারপর বললেন যে ইমারজেন্সির সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। অদূর ভবিষ্যতে আর কোনওদিন ভারতবর্ষে ইমার্জেন্সি হবে না। আমরা সত্যের থেকে কখনও মুখ ফেরাই না। ইন্দিরা গান্ধীর স্বীকার করেছেন যে সেই সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। গত ১০ বছরে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার সঙ্গে দু'বার সরকার গঠন করা হয়েছে। ইমারজেন্সি তো শুধু একটা শব্দ নয় এর মানে অধিকার। এর মানে গণতান্ত্রিক অধিকারগুলোকে রাষ্ট্র যখন নিয়ন্ত্রণ করে। সংবাদ সংস্থার অধিকারের ভিত্তিতে আমরা সারা দুনিয়ায় কোথায় দাঁড়িয়ে আছি! তার প্রশ্নের উত্তর ইন্দিরা গান্ধীকে দিতে হলে তাকে প্ল্যানচেট করে ডাকতে হবে। আজ আম্বানির বিয়ে নিয়ে আমরা নাচানাচি করছি, অথচ খুচরো মূল্যস্ফীতি ৪০ শতাংশের কাছাকাছি হয়ে গেছে। সেখানে দাঁড়িয়ে পেঁয়াজ, আলু, সর্ষের তেলের দামকে নিয়ে অর্থ মন্ত্রকের কোনও মন্তব্য নেই। কর্মসংস্থানের জন্য, রাজ্যে এসএসসি ও কেন্দ্রে নিট দুর্নীতি হয়েছে। সেটা নিয়ে যখন প্রশ্ন করতে যাওয়া হয়েছে তখন বিরোধী দলের নেতা রাহুল গান্ধীর মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিরোধীদলের কণ্ঠস্বরকে রোধ করাটা ইমারজেন্সি নয়? গত এক বছরের বেশি সময় ধরে মণিপুর জ্বলছে।
সরকার সেখানে যায়নি। সরকারকে প্রশ্ন করা হলে সরকার তাকে দেশদ্রোহী বলে দিচ্ছে। উত্তরপ্রদেশে ধর্মের ভিত্তিতে দোকানের নামকরণ করা হচ্ছে। এটা ইমার্জেন্সি নয়? কথায় আছে তুমি যদি কোনও জায়গায় সমস্যায় পড়ো তবে খোঁজার চেষ্টা করো তোমার পূর্বসূরিদের কার কোথায় সমস্যা আছে। এই কথাকে পাথেয় করে চলে আমরা এগিয়ে গেছি। কাঠুয়া কাণ্ড, হাথরাস কাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন করার ফলে অনেককে জেলে যেতে হয়েছে। এটা ইমার্জেন্সি। আমি একটা দলের বিরোধিতা করছি মানে দেশের বিরোধিতা করছি না। এই সহজ সাধারণ সত্যটা আমাদের স্বীকার করতে হবে। ধর্মের নামে, জাতির নামে, বর্ণের নামে যখন ভারতকে ভাগ করার চেষ্টা করা হবে তখন পাকিস্তানের জুজু দেখিয়ে, দেশদ্রোহী বলে দেওয়াটা ইমার্জেন্সি। ২৫শে জুন সংবিধান হত্যা দিবস পালন করে কিচ্ছু হবে না। ২৫শে ডিসেম্বর এই সরকার সুশাসন দিবস বলে পালন করার উদ্যোগ নিয়েছিল। মানুষ মনে রেখেছে? এখনো ২৫ ডিসেম্বর আমরা বড়দিনই পালন করি। তাই সংবিধান হত্যা দিবস কেউ পালন করলে সেটা বিজেপি পালন করবে দেশের মানুষ পালন করবে না। তারা বরং প্রশ্ন করবে আমার চাকরি কোথায়? আমার চাল ডাল তেল নুনের দাম কেন বাড়ছে?"