নিজস্ব প্রতিবেদন : আগরতলা দুর্গাবাড়ির পুজো রাজন্য আমল থেকে শুরু হয়ে আজ প্রায় ১৫০ বছর ধরে পালিত হচ্ছে। এই পুজোর মূল ইতিহাস চট্টগ্রামের চাকলা রোসনাবাদে মহারাজা কৃষ্ণকিশোর মানিক্যের সময়ের। তখন থেকেই দেবী দুর্গাকে পূজিত করা হচ্ছে। আগরতলা শহরের বিভিন্ন স্থানে পুজো অনুষ্ঠিত হলেও, রাজবাড়ীর স্থান পরিবর্তন হলেও পুজোর পুরোহিত বদলায়নি। এটি বংশানুক্রমে চলেছে এবং বর্তমানে ষষ্ঠ পুরুষ জয়ন্ত ভট্টাচার্য পুজোর দায়িত্ব পালন করছেন।
রাজবাড়ীর ইতিহাস:
পূর্বে, দুর্গাবাড়ির পুজোর স্থান ছিল চট্টগ্রামের চাকলা রোসনাবাদ। সময়ের সাথে সাথে রাজবাড়ী অমরপুর, উদয়পুর এবং পুরনো আগরতলায় স্থানান্তরিত হয়েছে, তবে পুজোর পরিচালনার দায়িত্ব সর্বদা একই পরিবারের হাতে রয়ে গেছে। বর্তমানে, আগরতলার রাজবাড়ীর বর্তমান মহারাজার নামেই পুজোর সংকল্প হয়। ভারতভুক্তির শর্ত অনুযায়ী, মন্দির এবং পুজো পরিচালনার দায়িত্ব বর্তমানে সরকার পালন করে।
দেবীর বিশেষ রূপ:
আগরতলা দুর্গাবাড়িতে দেবী দুর্গাকে দশভূজা রূপে নয়, বরং দুহাতে পূজিত করা হয়। এর পেছনে একটি বিশেষ গল্প রয়েছে। সন্ধ্যা আরতির সময় মহারানী সুলক্ষণা দশভূজা রূপ দেখে ভীত হয়ে পড়েছিলেন। এরপর দেবীর স্বপ্নাদেশে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, দেবীর সামনে দুই হাত থাকবে এবং আটটি হাত পেছনে লুকিয়ে থাকবে। এই বিশেষ রূপের কারণে আগরতলা দুর্গাবাড়ি পুজোকে অন্য সব পুজো থেকে আলাদা করে তোলে।
পুজোর আচার-ব্যবস্থা:
আগরতলার দুর্গাবাড়ির পুজোয় বিশেষ ভোগ হিসেবে সামিশান্ন ব্যঞ্জনাদি পুজোর জন্য থাকে মাছ, মাংস ও ডিম। সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত এই ভোগের ব্যবস্থা করা হয়, যেখানে তিন দিন ধরে পাঁঠা বলি দেওয়া হয়। নবমীতে বিশেষভাবে পাঠা ও মহিষ বলি দেওয়ার মাধ্যমে দেবীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
আগরতলা দুর্গাবাড়ির পুজো শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতিক পরিচয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রাজা ও রানির আভিজাত্যের ছোঁয়া এই পুজোকে বিশেষ করে তুলেছে, যা আজও ভক্তদের মনে গভীর প্রভাব ফেলে।