নিজস্ব প্রতিবেদন : মল্লগড় বিষ্ণুপুরের ১০২৬ বছরের প্রাচীন রীতির অনুসরণে মুর্ছা পাহাড় থেকে কামানের তিনটি তোপ গর্জে উঠল, যা সূচনামূলক সংকেত হিসেবে কাজ করে অষ্টমী ও নবমীর মহা সন্ধিক্ষণের। এই ঐতিহ্য মূলত শুরু হয় তখন, যখন মল্ল রাজ জগতমল্ল বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে প্রতিষ্ঠা করেন মৃন্ময়ীর মন্দির। এই বিশেষ উপলক্ষে দেবী আরাধনার আয়োজন শুরু হয় ধুমধামে।
১০২৬ বছর আগে থেকে শুরু হওয়া এই রীতি সময়ের সাথে সাথে অনেক পরিবর্তন এসেছে। সেই সময় থেকে শব্দকে ব্রহ্ম হিসেবে গ্রহণ করে মৃন্ময়ীর পুজোয় তোপধ্বনীর রেওয়াজ শুরু হয়। একসময় গোটা মল্লগড়ে এই তোপধ্বনীর শব্দ শুনে সন্ধীপুজো শুরু হত। তবে, সময়ের সঙ্গে তোপের আকার ছোট হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি শব্দদূষণের কারণে তোপের শব্দ এখন আর সর্বত্র শোনা যায় না। এমনকি আজও হাজার বছরের এই রীতি মেনে সন্ধিক্ষণের সময় মুর্ছা পাহাড় থেকে গর্জে ওঠে তিনটি তোপ।
এই ঘটনার সাক্ষী থাকতে হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমান, কাতারে কাতারে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন ঐতিহ্যবাহী এই অনুষ্ঠানের। এটি শুধু ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক একটি আয়োজন নয়, বরং এটি ইতিহাস ও ঐতিহ্যের একটি জাগতিক প্রকাশ।
বিষ্ণুপুরের মৃন্ময়ীর পুজোর সময়, সাধারণ মানুষদের পাশাপাশি বিশেষ অতিথিরা, সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিত্বরা ও স্থানীয় প্রশাসনও উপস্থিত থাকেন। এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে পুরো এলাকার পরিবেশ পূর্ণ হয়ে ওঠে উৎসবের আমেজে। প্রাচীন এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ে গর্বিত হন এবং মল্লগড়ের এই ঐতিহ্যকে সসম্মানে পালন করতে চান। বিষ্ণুপুরের মৃন্ময়ীর পুজো শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং এটি একটি সামাজিক মিলনমেলা যেখানে প্রাচীন ঐতিহ্য ও আধুনিকতা মিলেমিশে একটি নতুন রূপে হাজির হয়।