নিজস্ব সংবাদদাতা: ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়, যাঁর চিকিৎসার খ্যাতি ছিল জগৎজোড়া। তাঁর একটি আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল। রোগীকে দেখে কিংবা রোগীর কাশি শুনে বা কোনও পরিবর্তন শুধু চোখে দেখে তিনি নির্ভুল ভাবে বলে দিতে পারতেন যে, ওই রোগীর কী হয়েছে। ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়ের এই ক্ষমতার জন্য এশিয়া মহাদেশে তো বটেই, ইউরোপ ও আমেরিকাতেও তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল।
ডাক্তারি ছাত্র ছিলেন যখন, তখন থেকেই তাঁর এই রোগ নির্ণয়ের ক্ষমতার প্রকাশ ঘটতে শুরু করে। কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি ভগবতী প্রসাদ মজুমদার এমনি একটি ঘটনার বর্ণনা দিয়েছিলেন। ঘটনাটি ছিল, নার্স রোগীকে ট্রলিতে করে নিয়ে যাচ্ছে। রোগীকে দেখে ডাঃ বিধান চন্দ্র রায় জিজ্ঞেস করেন, "এনাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?" নার্স জানান, অস্ত্রোপচার হবে। কীসের অস্ত্রোপচার, কে করবেন, নার্সের কাছে জানতে চান বিধান চন্দ্র রায়।
সেই মেডিক্যাল কলেজের সার্জারি বিভাগের প্রধান চিকিৎসকের এই অস্ত্রোপচার করার কথা ছিল। কীসের অস্ত্রোপচার, তা বিধান চন্দ্র রায়কে জানান নার্স। সব শুনে ডাঃ বিধান চন্দ্র রায় আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন যে, বোধহয় শরীরের ঠিক জায়গায় অস্ত্রোপচার হচ্ছে না। যেখানে করতে হবে, সেটাও বলে দেন তিনি। সেই সঙ্গে তিনি নার্সকে জানিয়ে দেন, সার্জেনকে তাঁর নাম করেই এই কথাগুলি বলতে।
নার্স গিয়ে ভয়ে ভয়ে বিভাগীয় প্রধানকে সেই কথা জানান। কিন্তু বিভাগীয় প্রধান খুবই রেগে যান। নার্সকে ধমকে তিনি জিজ্ঞেস করেন, "কে এসব বলেছে আপনাকে?" উত্তরে নার্স জানান, ডাঃ রায়। তখন বিভাগীয় প্রধান জানতে চান, কে এই ডাঃ রায় ? নার্সের উত্তর ছিল, এখানের ডাক্তারির ছাত্র। এই কথা শুনে সেই ডাক্তার বলেন, "ঠিক আছে, ডাকো দেখি, কে এই ছোকরা ? কিভাবে আমার ভুল ধরে, দেখব আজ।"
এরপর নিজের মত অস্ত্রোপচার শুরু করলেন তিনি। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝতে পারলেন, কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। এরপর তিনি বিধান চন্দ্র রায় যেমন বলে দিয়েছিলেন, সেই মত অস্ত্রোপচার শুরু করলেন। দেখলেন যে বিধান চন্দ্র রায় ঠিক পদ্ধতি বলেছিলেন। অস্ত্রোপচার হয়ে যাওয়ার পর তিনি নিজেই খুব অবাক হয়েছিলেন।
এরপর তিনি নার্সকে বলে বিধান চন্দ্র রায়কে ডেকে পাঠান। ডাক পেয়ে হাজির হন বিধান চন্দ্র রায়। তাঁকে ওই সার্জেন জিজ্ঞাসা করেন যে, বিধান চন্দ্র রায় ওই রোগীকে আগে পরীক্ষা করেছিলেন কিনা। "তাহলে আপনি কী ভাবে জানলেন, কোন অপারেশনটা রোগীর জন্য ঠিক হবে ?" এর উত্তরে সার্জেনকে চমকে দিয়ে বিধান চন্দ্র রায় বলেন, "এটা আমি আমার Intuition (অন্তর্দৃষ্টি) থেকে বলেছি।" এই ঘটনার পর অধ্যাপক মহলে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ তাঁকে আধুনিক ধন্বন্তরির রূপে দেখতে শুরু করে। তবে শুধু সাধারণ মানুষ নয়, মহাত্মা গান্ধী, মতিলাল নেহেরু, জওহরলাল নেহেরু , রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, এমনকি আমেরিকার রাষ্ট্রপতি জন এফ কেনেডির চিকিৎসা করেছিলেন তিনি।