৩৪৯ বছরের প্রাচীন দত্তবাড়ির দুর্গাপুজো: এই পুজোর সাথে জড়িয়ে বঙ্কিমচন্দ্র ও নেতাজির স্মৃতি

দত্তবাড়ির দুর্গাপুজো, যেখানে একসময় সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নিয়মিত আসতেন, আজও প্রাচীন রীতিনীতি মেনে ১০ দিন ধরে উদযাপন করা হয়।

author-image
Debapriya Sarkar
New Update

নিজস্ব প্রতিবেদন : আদি গঙ্গার প্রাচীন প্রবাহ পথে সুন্দরবনের অন্তর্গত জয়নগর ও মজিলপুর দুটি এলাকা ঐতিহাসিক ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ। জয়নগরের দত্ত বাড়ির দুর্গাপুজো বিশেষভাবে পরিচিত। ১৬৭৫ সালে জমিদার রামচন্দ্র দত্ত কলকাতা থেকে আসার পর মা দুর্গার স্বপ্নাদেশে এই পূজার শুরু হয়। রামচন্দ্র দত্তের জমিদারি ৯৪টি মৌজা ও ৬টি থানায় বিস্তৃত ছিল। যদিও জমিদারি প্রথা আর নেই, প্রাচীন রীতিনীতি আজও জীবন্ত। দত্ত বাড়িতে আজও টানা ১০ দিন ধরে দেবীর আরাধনা করা হয়, যা স্থানীয় সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

publive-image

পরিবারের সদস্যরা কর্মসূত্রে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে থাকলেও দুর্গাপুজোর সময় সবাই দত্ত বাড়িতে উপস্থিত হন। যদিও অতীতের সেই জৌলুস কিছুটা কমেছে, পরিবারের সদস্যরা এখনও প্রাচীন রীতিনীতি মেনে পুজো করেন। রথযাত্রার দিন কাঠামো পূজা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বংশ পরম্পরায় মৃৎশিল্পী, পুরোহিত এবং বাদ্যকারেরা অংশ নেন। পুজো শুরুর আগে এখন আর বন্দুকের আওয়াজ শোনা যায় না; বরং আতশবাজি জ্বালিয়ে পুজো শুরু করা হয়, যা ঐতিহ্যবাহী এই অনুষ্ঠানের আনন্দকে দ্বিগুণ করে।

publive-image

একসময় এই দত্তবাড়িতে নিয়মিত আসতেন সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তিনি দত্তবাড়িতে এসে ছুটি কাটাতেন এবং দুর্গাপুজোয় শামিল হতেন। জয়নগরের এই দত্তবাড়িতে বসে তিনি লিখেছিলেন তার বিখ্যাত উপন্যাস "বিষবৃক্ষ"। বঙ্কিমচন্দ্রের বেশ কয়েকটি উপন্যাসে দত্তবাড়ির উল্লেখ রয়েছে। পরিবারের সদস্য শিবেন্দ্রনারায়ণ দত্ত জানান, "কর্মসূত্রে কলকাতা ও বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকলেও পুজোর সময় সবাই দত্তবাড়িতে চলে আসেন। প্রাচীন প্রথা মেনেই এখনও ১০ দিন ধরে পুজো হয়। এই পুজোর সঙ্গে বহু ইতিহাস জড়িয়ে আছে। তৎকালীন বারুইপুরের ম্যাজিস্ট্রেট তথা সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাল্যবন্ধু ছিলেন যোগেন্দ্র নারায়ণ দত্ত, যার সুবাদে তাঁর নিয়মিত এই বাড়িতে যাতায়াত ছিল।"

publive-image

শিবেন্দ্রনারায়ণ দত্ত আরও জানান যে, "এই দত্ত বাড়ির সঙ্গে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নিবিড় টান রয়েছে। স্বাধীনতা আন্দোলনের বেশ কয়েকটি সভা এই দত্ত বাড়ির সামনের মাঠে হয়েছে। এখনও পর্যন্ত নেতাজি সুভাষ চন্দ্রের বাড়িতে দত্ত বাড়ির দুর্গাপুজোর প্রসাদ পাঠানো হয়।"