নবঘনপুর পালিত হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কালী পুজো

author-image
Harmeet
আপডেট করা হয়েছে
New Update
নবঘনপুর পালিত হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কালী পুজো

লাউদোহা, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ দুর্গাপুর ফরিদপুর ব্লকের নবঘন পুর গ্রাম। গ্রামের বাউরি সম্প্রদায়ের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত মা রক্ষা কালী । প্রায় দু'শো বছরের অধিক সময় ধরে এই গ্রামে পূজিত হয়ে আসছেন মা । জনশ্রুতি আছে, আজ থেকে প্রায় দু'শো বছরের আগে গ্রামের কল্প বাউরি নামে এক গোপালক গরু চরাতে গিয়ে কিশোরী রূপে মায়ের দর্শন পান। সে সময় গ্রামে মণ্ডলদের প্রতাপ ছিল । তাই জঙ্গলে গরু চরানোর সময় ওই কিশোরীকে কল্প বাউরি সেখান থেকে চলে যেতে বলেন । বাড়ি ফিরে রাত্রে স্বপ্নাদেশ পান, কিশোরী রূপে মা রক্ষাকালী তাকে দর্শন দিয়েছিলেন। শীঘ্রই গ্রামে তাঁর পূজা করার আদেশ দেন মা। সেই সময় গ্রামে চলছিল মহামারী। দিনে দিনে লোক শূন্য হচ্ছিল গ্রাম। মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে কল্প বাউরী গ্রামের এক ছোট্ট মাটির কুটিরে মায়ের পুজো শুরু করেন। গ্রামে মায়ের পুজো শুরু হতেই রক্ষা পায় গ্রাম। কলেরা মহামারী থেকে মুক্ত হয় গ্রামের মানুষ। মা গ্রামের মানুষকে রক্ষা করেছিলেন বলেই এখানে মা রক্ষা কালী রূপে পূজিত হয়ে আসছেন। প্রাচীন রীতিমতো প্রত্যেক বছর বৈশাখ মাসের প্রথম অমাবস্যায় হয় মায়ের পুজো। আজও বাউরি সমাজের লোকেরা মায়ের ঘৃত প্রদীপ জ্বালিয়ে শুরু করেন মায়ের পুজো। সেই সময় বাউরি সমাজ এর আর্থিক অনটনের কারণে তারা গ্রামের ষোল আনার হাতে মায়ের পুজোর দায়িত্ব দেন। আজও মায়ের পুজো চলে আসছে প্রথা মত গ্রামের ষোল আনার উদ্যোগেই। গ্রামের বাসিন্দা সৌগত মন্ডল ও অপূর্ব বাউরিরা জানান, কথিত আছে একসময় মায়ের বাড়ির জল আনার পুকুর খড়ার কারণে জল শূন্য হয়ে পড়েছিল। কিভাবে মায়ের পুজো হবে চিন্তায় পড়েছিলেন গ্রামের মানুষ। গ্রামের মানুষেরা মিলে পুকুরটি প্রায় ৩৫ ফুট কাটার পরও জল পাওয়া যায়নি । ফের মা কল্প বাউরিকে স্বপ্ন দেন, রাত্রি ১২ টার পর সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় ওই কাটা জায়গায় কোদালের এক ঘা মারার জন্য। মায়ের নির্দেশ মত কল্প বাউরি রাত্রি বারোটার পর সেই জায়গায় গিয়ে কোদাল দিয়ে এক ঘা দিয়ে আসেন। আশ্চর্যের বিষয় সকাল হতেই সেই জায়গায় দেখা যায় বিপুল পরিমাণে জলরাশি। মা রক্ষা কালীর লীলা বুঝতে মানুষের অসুবিধা হয়নি। ফের শুরু হয় মায়ের পুজো। আজও দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের নবঘনপুর গ্রামের এই রক্ষা কালী পুজো ধুমধামের সঙ্গে হয়ে আসছে। পুজো ঘিরে বসে মেলা, হয় যাত্রাপালা। গ্রামবাসীরা জানান, তাদের গ্রামের এই রক্ষাকালী পুজো দুর্গোৎসবের চেয়েও বড় উৎসব। তাদের এই রক্ষা কালী পুজোয় বাড়িতে বাড়িতে সমস্ত আত্মীয়-স্বজনরা আসেন । দুর্গা পুজোয় না এলেও কালী পুজোয় গ্রামের যারা বাইরে থাকেন মায়ের পুজোয় গ্রামে উপস্থিত হন।