দিগবিজয় মাহালী, মেদিনীপুরঃ আদিবাসীদের শিকার উৎসবে বন্যপ্রাণী হত্যা আটকাতে শিকারি ও পুলিশ-বনদপ্তরের লুকোচুরিতে এগিয়ে গেল শিকারিরা। জঙ্গলে শিকারিদের প্রবেশ আটকাতে ভোর থেকে নাকা করে অপেক্ষা করছিলেন পুলিশ ও বনদপ্তরের কর্মীরা। বেলা বাড়তেই তারা দেখলেন- রাত থেকেই জঙ্গলে ঢুকে শিকার সেরে বেরিয়ে আসছে শিকারিরা। মেরেও ফেলেছে কিছু বন্যপ্রাণকে। তবে বৃহৎ সংখ্যক বন্যপ্রাণ হত্যা আটকানো সম্ভব হয়েছে। মেদিনীপুর সদরের জামশোল ও সংলগ্ন এলাকায় আদিবাসীদের পুরনো কর্মসূচি অনুসারে শিকার উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল সোমবার। বহু পুরনো রীতি অনুসারে এদিন "শিকার উৎসব" ছিল আদিবাসীদের। শিকার উৎসবের সূচি আগে থেকেই জানতো বনদপ্তর। সেজন্য কয়েকদিন আগে থেকেই জেলাজুড়ে জঙ্গলমহল ও শহর তল্লাটে প্রচার করেছিল শিকার না করার জন্য। মাইকিং, পোস্টারিং, ছৌ নৃত্য, সব করা হয়েছিল পুলিশ ও বনদপ্তরের উদ্যোগে। শেষ মুহূর্তে সোমবার দেখা গেল আদিবাসীরা পুরনো "শিকার উৎসব" ধারণাতেই বদ্ধমূল। সোমবার ভোর থেকে মেদিনীপুর ঝাড়গ্রাম রুটে ধেড়ুয়া, লালগড়, শালবনী এলাকায় নাকা করে শিকারি আটকাতে বসেছিলেন বনদপ্তরের কর্মী আধিকারিকরা। প্রতিবছর যে রাস্তা দিয়ে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিকারিরা এসে জঙ্গলে প্রবেশ করে এমন বহু রাস্তাতেই এরকম নাকা বসিয়েছিল। কিন্তু বেলা ন'টা বেজে গেলেও সেই পরিমাণ শিকারিদের দেখা যায়নি। পরে বনদপ্তর খবর পায়- শিকারিরা গভীর রাতেই বিভিন্ন জঙ্গলে প্রবেশ করে গিয়েছিল নাকা এড়াতে। বেলপাহাড়ি থেকে আসা শিকারিরা আগের দিন সন্ধ্যা বেলা স্থানীয় এক গ্রামে আশ্রয় নেয়। এদিন বনদপ্তরের আধিকারিকরা বাহিনী নিয়ে জঙ্গলে ঢুকে দেখেন ভেতরে অনেক শিকারিরাই রয়েছেন। আপ্রাণ বোঝানোর চেষ্টা হলো ফেরত পাঠাতে। কিন্তু নাছোড়বান্দা আদিবাসীরা জানায় পুরনো ধর্মীয় রীতি অনুসারে এই শিকার উৎসব তাদের পালন করতেই হবে। সে জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে আদিবাসী শিকারিরা রাত থেকেই অপেক্ষা করেছিল জঙ্গলমহলের বিভিন্ন গ্রামের আত্মীয়দের বাড়িতে। বনকর্তারা অনেককে বোঝাতে সক্ষম হলেও বেশিরভাগ শিকারিরা চললেন শিকারের পথে। শিকারি সরকার বেশরা বলেন, "পুরনো নিয়ম অনুসারে এটা আমাদের করতেই হবে। তবে যতটা ছোট করে করা যায় সেটা চেষ্টা করব। না হলে বাইরে থেকে যারা এসে অপেক্ষা করছিলেন তাদের নিয়ে কোথায় যাব?"বেশকিছু শিকারি বনদপ্তরকে বন্যপ্রাণ হত্যা না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জঙ্গলে প্রবেশ করেছিলেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন জঙ্গলে আগুন লাগাবেন না। শিকারি চাকু হেমরম বলেন, "অফিসারেরা আমাদের অনুরোধ করেছিলেন, আমরা কথা দিয়েছি বন্যপ্রাণের কোন ক্ষতি করব না। জঙ্গলে আগুন লাগাবো না তবে শুধু উৎসবটা পালন করব।"তবে দিনের শেষে দেখা গেল জামশোল এলাকায় রীতিমতো মেলা বসে গিয়ে শিকার উৎসব পালন হচ্ছে। দিন ভর চেষ্টার পর বনদপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, "আমরা বহু শিকারিকে ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয়েছি। লাগাতার চেষ্টা করে একটা প্রভাব ফেলা গিয়েছে। বৃহৎ যে পরিমাণে বন্যপ্রাণ হত্যা হতো, তা আমরা অনেকটাই আটকাতে সক্ষম হয়েছি।"