বোর্ড গঠনকে ঘিরে চুড়ান্ত নাটকীয়তার অবসান!

author-image
Harmeet
আপডেট করা হয়েছে
New Update
বোর্ড গঠনকে ঘিরে চুড়ান্ত নাটকীয়তার অবসান!



দিগ্বিজয় মাহালী, পশ্চিম মেদিনীপুর : দ্বিতীয় বারের জন্য বোর্ড গঠন হল খড়ার পৌরসভায়। শপথ নিলেন খড়ার পৌরসভার চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান সহ কাউন্সিলররা। মন্ত্রীর উপস্থিতিতে শপথ নেওয়া চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান সহ কাউন্সিলরদের ঘটা করে সম্বোর্ধনাও দেওয়া হয় তৃণমূলের পক্ষ থেকে।

গত ১৬ ই মার্চ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়ার পৌরসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানকে ঘিরে একাধিক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে, যেখানে রাজ্য জুড়েই মুখ পুড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের। ১০ টি ওয়ার্ড বিশিষ্ট খড়ার পৌরসভায় পৌর ভোটে তৃণমূল ৮ টি ও বিজেপি ২ টি আসন পায়। রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে এই পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসাবে সন্ন্যাসী দোলই ও ভাইস চেয়ারম্যান পূর্বা ভূঁইয়াকে মনোনীত করা হয়। ১৬ মার্চ শপথ গ্রহণ ও বোর্ড গঠনকে ঘিরে চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়, রাজ্য নেতৃত্বের মনোনীত চেয়ারম্যান সন্ন্যাসী দোলইকে মেনে নেয়নি খড়ার শহর তৃণমূল কংগ্রেসের একাংশ। ফলে ওইদিন বোর্ড গঠনের আগে খড়ার পৌরসভার সামনে তৃনমূলের একাংশ মনোনীত চেয়ারম্যান পরিবর্তনের দাবি নিয়ে বিক্ষোভে সামিল হয়, তাকে ঘিরে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তৃণমূলের বিক্ষুব্ধদের দাবি ছিল রাজ্য নেতৃত্বের মনোনীত চেয়ারম্যান সন্ন্যাসী দোলইকে পরিবর্তন করে খড়ার শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা ৭ নং ওয়ার্ডে জয়ী তৃণমূল কাউন্সিলর অদ্যুৎ মন্ডলকে চেয়ারম্যান করতে হবে। এই দাবিতে পৌরসভার নিচে তৃণমূলের বিক্ষুব্ধদের তুমুল বিক্ষোভের জেরে সিদ্ধান্ত হয় ভোটাভুটির মাধ্যমে নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচন হবে। সেই মতো ওইদিনই ভোটাভুটি হয় এবং ৬-৪ ফলাফলে তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বের মনোনীত চেয়ারম্যান সন্ন্যাসী দোলইকে হারিয়ে নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন অদ্যুৎ মন্ডল। ১০ আসন বিশিষ্ট খড়ার পৌরসভায় ভোটাভুটিতে তৃণমূলের ৪ জন ও বিজেপির ২ জন কাউন্সিলরের সমর্থনে ভোটাভুটিতে দলেরই মনোনীত চেয়ারম্যানকে হারিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন অদ্যুৎ মন্ডল। এই ঘটনা সামনে আসতেই রাজ্য জুড়েই আলোড়ন পড়ে যায় বিজেপির সমর্থনে খড়ার পৌরসভায় তৃণমূলের বোর্ড গঠনকে ঘিরে। ঘটনার পরই রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে বহিষ্কার করা হয় ভোটাভুটিতে নির্বাচিত চেয়ারম্যান অদ্যুৎ মন্ডলকে। সেই ঘটনার পরদিনই অর্থাৎ ১৭ মার্চ দুপুরে ঘাটাল মহকুমাশাসকের কাছে চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফাও দিয়ে দেন তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ নেতা তথা ভোটাভুটিতে নির্বাচিত চেয়ারম্যান অদ্যুৎ মন্ডল। তৃণমূল নেতৃত্ব দাবি করে, অদ্যুৎ মন্ডলকে সমর্থন করা দলের কয়েকজন কাউন্সিলর তাদের ভুল স্বীকার করে দল এবং মহকুমাশাসককে লিখিত ভাবে জানায়। অদ্যুৎ মন্ডল চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ায় বোর্ড গঠন অধরা ছিল খড়ার পৌরসভায়। নতুন করে পুনরায় বোর্ড গঠনের জন্য ২৯ মার্চ দিন ধার্য করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে মহকুমা প্রশাসন। সেই ঘটনার ১৩ দিন পর অর্থাৎ আজ ২৯ শে মার্চ বহু চর্চিত সেই খড়ার পৌরসভার বোর্ড গঠন হল চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান সহ কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণের মধ্যে দিয়ে। চেয়ারম্যান হিসাবে শপথ নেন রাজ্য নেতৃত্বের আগেরই মনোনীত সন্ন্যাসী দোলই, ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে শপথ নেন পূর্বা ভূঁইয়া,ঘাটাল মহকুমাশাসক সুমন বিশ্বাসের উপস্থিতিতে শপথ গ্রহণ সম্পন্ন হয়।দল থেকে বহিস্কৃত তৃণমূল কাউন্সিলর অদ্যুৎ মন্ডল অবশ্য এদিন অনুপস্থিত ছিলেন,চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান সহ তৃণমূলের সাত কাউন্সিলর আজ শপথ গ্রহণ করেন। পৌরসভা কক্ষে যখন শপথ গ্রহণ চলছে তখনই নিচে চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান সহ বাকি কাউন্সিলরদের সম্বোর্ধনা জ্ঞাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় খড়ার পৌর তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তাতে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী ডঃ মানস ভূঁইয়া সহ জেলা নেতৃত্ব ও জেলার একাধিক পৌরসভার চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান,দলের বিধায়করা। চেয়ারম্যান হিসাবে শপথ গ্রহণের পর আগের ঘটনা সম্পর্কে এড়িয়ে গিয়ে মানুষের প্রয়োজনে যা যা উন্নয়নের প্রয়োজন তা করার চেষ্টা করবেন বলে জানান সন্ন্যাসী দোলই। দলের চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান সহ কাউন্সিলরদের সম্বোর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে মন্ত্রী ডঃ মানস ভূঁইয়া বলেন, 'একটি পৌরসভাতে চেয়ারম্যান নির্বাচনকে ঘিরে একটি দূর্ঘটনা ঘটেছিল তা হল খড়ার পৌরসভা। রাজনৈতিক ডাক্তার বাবুরা খড়ার পৌরসভার ঘটনায় সঠিক চিকিৎসা করে দিয়েছেন আজকে চেয়ারম্যান ভাইস চেয়ারম্যান শপথ গ্রহণের মধ্যে দিয়ে বোর্ড গঠন হওয়ায় সকলেই খুশি।' খড়ার পৌরসভায় বোর্ড গঠনকে ঘিরে আগে যে ঘটনা ঘটেছিল তাতে যারা দোষী দল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তাকে যারা মদত দিয়েছিল দল তাদের উপরও নজর রাখছে বলে কড়া বার্তা দিয়ে যান মানসবাবু।শপথ গ্রহণে উপস্থিত না থাকলেও তৃণমূলের বহিস্কৃত কাউন্সিলর অদ্যুৎ মন্ডল জানান, 'দল ভেবেছে আমি দলবিরোধী কাজ করেছি আমিও ভেবেছি আমার কার্যকলাপটা দল বিরোধী ছিল তাই পরের দিনই দলের ভাবনাকে মূল্য দিয়ে সরে এসেছি। আমি যে বার্তাটা রাজ্য নেতৃত্ব পর্যন্ত দিতে চেয়েছিলাম যদি তা পৌঁছায় আজ তার সমাধান না হলেও আগামী দিনে দলকে ভাবতে হবে কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার আগে।' দল থেকে বহি্কৃত হয়েও দল ভাবলে পুনরায় দলে ফেরার বার্তা দেন তিনিও।